শিরোনাম
খাওয়ার সময় পানি পান, ভালো নাকি খারাপ?
প্রকাশ : ০৫ মে ২০১৮, ১৬:২৬
খাওয়ার সময় পানি পান, ভালো নাকি খারাপ?
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পানি কম খেলে যেমন বারোটা বাজে শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের। শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গকে সুস্থ রাখতে পানি প্রয়োজনীয়। মাথা হোক বা চোখ, দাঁত হোক বা হার্ট, ফুসফুস হোক বা কিডনি, লিভার হোক বা পরিপাকতন্ত্র, রেচনতন্ত্র, খাদ্যনালি। পানি কম খেলে সব নষ্ট, উল্টোটাও ঠিক। বেশি পানি খেলেও বিপদ মারাত্মক।


খাবার খাওয়ার সময় পানি পান করা যাবে নাকি যাবে না তা নিয়ে আছে অনেক মত। কেউ মনে করেন খাওয়ার সময় পানি পান করলে হজমে সুবিধা হয়, আবার কেউ ভাবেন হজমে সমস্যা হয়। অনেকের ধারণা খাবার খাওয়ার মাঝে পানি পান করলে ওজন বেড়ে যায়। কিন্তু আসলে কোনটা সত্য?


হজম প্রক্রিয়া মূলত শুরু হয় যায় পরবর্তী খাবারের কথা ভাবা শুরু করলেই। খাবারের কথা ভাবলে মুখে লালা তৈরি হয়। খাবার চিবাতে শুরু করলে তা মুখের লালার সঙ্গে মিশে যায়। লালায় থাকে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইমসমূহ। চিবিয়ে নরম করা খাবার গিলে ফেলার পরে তা পাকস্থলীতে পৌঁছায় এবং পাকস্থলীর এসিডের সঙ্গে মিশে যায়। সাধারণত খাবার হজম করতে গড়ে চার ঘণ্টা সময় লাগে পাকস্থলীর।


পানি পান করার পরে তা পাকস্থলীতে গিয়ে খুব বেশি সময় স্থায়ী হয় না। দশ আউন্স পানি খুব বেশি হলে দশ মিনিট পাকস্থলীতে থাকে। তাই খাওয়ার সময় পানি পান করলে তা দীর্ঘসময় পাকস্থলীতে থাকেনা বরং খুব দ্রুতই খাবারগুলোকে ভিজিয়ে পাকস্থলী ত্যাগ করে।


অনেকের ধারণা খাওয়ার সময় তরল পান করলে শক্ত খাবার ঠিক মতো হজম হওয়ার আগেই পাকস্থলী থেকে বের হয়ে যায়। ফলে খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া যায়না। তবে এখন পর্যন্ত এই ধারণা কোনো গবেষণায় প্রমাণিত হয়নি। যেহেতু শক্ত খাবারের আগেই পানি বা যে কোনো তরল পাকস্থলী থেকে বের হয়ে যায়, সেহেতু পাকস্থলীর শক্ত খাবারের উপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না তরল খাবার।


পানির তাপমাত্রাও হজম প্রক্রিয়া কিংবা পুষ্টি গ্রহণে কোনো প্রভাব ফেলে না। তবে অটোয়া ওয়েস্ট নিউট্রিশনের মতে, খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে পানি খাওয়া উপকারী। কারণ খাওয়ার সময় পানি পান করলে তা পাকস্থলীতে যেয়ে গ্যাস্ট্রিক জুসের সঙ্গে মিশে সেটার কার্যকারিতা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। গ্যাস্ট্রিক জুস খাবারের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।


মায়োক্লিনিকের মতে, খাবারের মাঝে পানি পান করলে পানি পানের পরে আধা ঘণ্টা বিরতি দিয়ে আবার খাওয়া স্বাস্থ্যকর। কারণ খাবার মুখে দেয়ার ঠিক আগে পানি পান করলে মুখের এনজাইম সমৃদ্ধ লালা ধুয়ে যায়। এতে হজম প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটতে পারে।


খাবার সময় পানি পান করার কিছু উপকারিতাও প্রমাণিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গবেষণায়। খাবার খাওয়ার বিরতিতে পানি পান করলে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার প্রবণতা কমে যায়। ফলে যারা অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভুগছেন তাদের বেশি খেয়ে ফেলার ঝুঁকি কমে যায়।


তবে, ইচ্ছেমতো পানি খাবেন না। পানি খাবেন বুঝে ও নিয়ম মেনে। তাহলে সারাদিনে কতটা পানি খাবেন?


চিকিত্সকরা বলছেন, যার যত ওজন, তাকে ৩০ দিয়ে ভাগ করলে যে সংখ্যাটা বেরোবে, ঠিক তত লিটার পানি দৈনিক পান করতে হবে তাকে।


কখন কতটা পানি খেতে হবে?


চিকিত্সকরা বলছেন, লাঞ্চ বা ডিনারের ৩০ মিনিট আগে পানি খেতে হবে, হজমশক্তি বাড়বে।


খাবার খাওয়ার মাঝে ২ ঢোঁক পানি খাওয়া যেতে পারে, তার বেশি নয়। কারণ, পানি হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের সঙ্গে মিশে তার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে, খাবার হজম হয় না।


১. গোসল করার আগে ১ গ্লাস পানি খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।


২. চা বা কফি খাওয়ার আগে ১ গ্লাস পানি খেলে অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা থাকে না।


৩. ব্যায়ামের ১০ মিনিট আগে ১ গ্লাস পানি খেলে এনার্জি বজায় থাকবে। ব্যায়ামের ২০ মিনিট বাদে ২ গ্লাস পানি খেলে শরীরের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।


৪. সন্ধ্যায় নাস্তা করার আগে ১ গ্লাস পানি খেলে পেট হাশফাশ করবে না।


৫. টেনশনের সময় ১ গ্লাস পানি খেলে অনেকটাই রিল্যাক্সড লাগবে।


৬. ঘুমনোর আগে ১ গ্লাস পানি খেলে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে। তবে পেট ভরে পানি খেলে বিপদ মারাত্মক। ইনসমনিয়ার মতো রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ে কিডনিতে। কারণ, ঘুমনোর সময় শরীর থাকে নিষ্ক্রিয়। এই সময় বেসাল মেটাবলিক রেট সবথেকে কম। ফলে, কিডনির ওপর চাপ পড়ে।


৭. সকালে ঘুম থেকে উঠে ২ গ্লাস পানি খেলে শরীরের বর্জ্য পদার্থ বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে। তাই পানি খান মেপে। নিয়ম মেনে। সূত্র: ব্রাইট সাইড ও লিভ স্ট্রং


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com