প্রতিবারের মতো এবারও ২ এপ্রিল পালিত হচ্ছে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস।
অটিজম কী?
একটি শিশু মাতৃগর্ভ থেকে যেসব সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অটিজম। মূলত অটিজমে আক্রান্ত শিশু বা ব্যক্তি মাতৃগর্ভ থেকে মস্তিষ্কের বিকাশগত অসম্পূর্ণতাজনিত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
যার ফলে তাকে দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহ ও আচার-আচরণ, গ্রহণমূলক ও প্রকাশমূলক ভাষা ব্যবহার, সংজ্ঞাপন ও সামাজিকতার ক্ষেত্রে নানা মাত্রার প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়, যা জীবনব্যাপী চলতে থাকে।
কেন অটিজম হয়?
অটিজম নামক স্নায়ুবৈকল্যজনিত অবস্থাটির জন্য দায়ী কারণগুলো সম্পর্কে গবেষক ও বৈজ্ঞানিক মহল শত প্রচেষ্টার পরও এখনো নির্দিষ্ট একক কোনো কারণ আবিষ্কার করতে না পারলেও ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের মতামত দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা নিম্নরূপ:
১. লিও কনারসহ অনেক গবেষকই এটি নিশ্চিত করেছেন যে অটিজমের সঙ্গে মস্তিষ্কের জিনজনিত বিষয়টি গভীরভাবে সম্পৃক্ত। স্বাভাবিকভাবে যমজ শিশুদের মধ্যে অভিন্ন জিন প্রবাহিত হয়, ফলে যমজদের একজনের মধ্যে অটিজম পরিলক্ষিত হলে অন্যজনের মধ্যেও তা দেখা দিতে পারে।
১৯৭৭ সালে রাটার ও সুসান ফোলস্টাইন ২১ জোড়া যমজ (১১ জোড়া অভিন্ন যমজ ও ১০ জোড়া ভিন্ন যমজ) শিশু নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে জানিয়েছেন যে অভিন্ন যমজের মধ্যে একজনের অটিজম থাকলে আরেকজনের অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি ১০০% না হলেও তা ভিন্ন যমজের তুলনায় সম্ভাবনা বহু গুণে বেড়ে যায়। পক্ষান্তরে ভিন্ন যমজের ক্ষেত্রে একজনের অটিজম থাকলে আরেকজনের অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের সম্ভাবনা মাত্র ৫%।
২. সেরোটনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যপ্রবাহ ও আচরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যা অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে অতি বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়। এতে তারা মাত্রাতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে।
৩. শিশুর জন্মগ্রহণের পর আমব্লিক্যাল কর্ড বা নাভিরজ্জু কাটা ও বাঁধার সময় যদি অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় আর অক্সিজেনের ঘাটতির ফলে টিস্যু নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে শিশুর মধ্যে অটিজমের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৪. অপরিণত বয়সে শিশু জন্মগ্রহণ করলে স্বাভাবিকভাবেই শিশুর ওজন কম হয়। জন্মের পর যদি নবজাতকের ওজন আড়াই কেজি বা তার চেয়ে কম হয়, তাহলে সন্তান অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে। তা ছাড়া খুব কাছাকাছি সময়ে অর্থাৎ এক বছরের কম সময়ের ব্যবধানে মা যদি পরপর তিনটি সন্তান ধারণ করেন, তাহলে সেসব শিশুর মধ্যে অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৫. আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার এক গবেষণা জরিপে বলা হয়েছে যে গর্ভাবস্থায় যদি মা অনেক উঁচু বাসায় থাকেন এবং বাতাসে সিসার পরিমাণ বেশি থাকে আর তা যদি গর্ভের শিশুকে প্রভাবিত করে, তাহলে শিশুর অটিজম হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
৬. বেশি বয়সে সন্তান নিলে, মা কিংবা বাবা উভয়ের বয়স বেশি হলে এবং মা-বাবার সিজোফ্রেনিয়া বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার থাকলে সন্তানের মধ্যে অটিজম থাকার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ২০১১ সালের এক গবেষণায় জানানো হয় যে ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী মায়ের সন্তানের চেয়ে ৪০ বছর বয়সী মায়ের সন্তানের অটিজম থাকার আশঙ্কা শতকরা ৫০ ভাগ বেশি।
৭. স্নায়ুতাত্ত্বিকদের বরাতে জানা যাচ্ছে যে বিষাক্ত রং ও বিভিন্ন রাসায়নিক দিয়ে তৈরি খাদ্যসামগ্রী গ্রহণের ফলে মা ও শিশু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে অটিজম ও বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
৮. শিশুবিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থায় মায়ের রুবেলা সংক্রমণ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা ও ভাইরাস জ্বর থাকার কারণে অ্যান্টিবায়োটিকসহ অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ অটিজমের মূল কারণ। তা ছাড়া গর্ভাবস্থায় বা সন্তান জন্মানোর সময় যদি মাথায় আঘাত লাগে এবং পাশাপাশি কোনো জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে বলে মনে করা হয়।
৯. কোনো মা-বাবার প্রথম সন্তান যদি অটিজমে আক্রান্ত হয়, তাহলে দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে অটিজম থাকার আশঙ্কা বেড়ে যায় ২০ ভাগ। আর দ্বিতীয় সন্তান অটিজমে আক্রান্ত হলে তৃতীয় সন্তানের অটিজম থাকার আশঙ্কা বেড়ে যায় ৩২ ভাগ।
১০. এমএমআর ভ্যাকসিন, খাবারের গ্লুটেন ও ক্যাসিন, ইস্ট থেকে অটিজম হতে পারে সন্দেহ করা হলেও কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
১১. এমইসিপি-২ নামক জিনের মিউটেশন বা কাঠামোগত পরিবর্তনের কারণে রেট সিনড্রোম নামক বিরল (কেবল মেয়েদের) অটিজম হয়ে থাকে। রহস্যজনিত কারণে অটিজমে আক্রান্ত প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে চার শিশু ছেলে এবং একজন মেয়ে হয়ে থাকে।
১২. Syn-Gap-I নামক প্রোটিনের ঘাটতি হলে গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে করে শিশুটির অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ক্রোমোজোমাল অঞ্চল 7q11.23–এর অস্বাভাবিকতার সঙ্গে অটিজম বৈশিষ্ট্যের মিল পাওয়া যায়।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]