ডেঙ্গু মোকাবিলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৩, ২০:৩৯
ডেঙ্গু মোকাবিলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা
মো. ছাব্বিরুল ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

দেশব্যাপী বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। বিশেষজ্ঞরা জুলাই থেকে অক্টোবরকে ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করেন। ২০০০ সালের পর দুই দশকের বেশি সময় ধরে প্রতিবছর এই সময়টাতে বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারাও যাচ্ছে। করোনা মহামারি শুরুর বছর ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম দেখা গেলেও পরবর্তী বছরই এর প্রকোপ বেড়ে যায়। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮ হাজার ৪২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়, যার মধ্যে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৮৯ জন।


ডেঙ্গুর প্রকোপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এর শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হচ্ছে প্রতি মৌসুমেই। তাদের ডেঙ্গুর থেকে রক্ষা করতে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই প্রশ্ন থেকেই যায়।


সরেজমিনে দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা মেডিকেল সেন্টারে নিয়মিত জ্বর, সর্দি, কাশির ঔষধ নিতে আসছেন শিক্ষার্থীরা।


এই মৌসুমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় ১১ জুলাই। ১৭ জুলাই পর্যন্ত মোট রোগী পাওয়া যায় ৯ জন। এরমধ্যে সৈকত ও হারুন নামের দুই শিক্ষার্থীর শারীরিক অবনতি হওয়ায় তারা অন্য হাসপাতালে ভর্তি হন এবং আরো শিক্ষার্থীরা মেডিকেল সেন্টার থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন হলে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র ফার্মাসিউটিক্যাল অফিসার রুবেল মাহমুদ বিবার্তাকে বলেন, আমাদের কাছে যেসব শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন, তাদের বেশিরভাগই সর্দি-কাশির ঔষধ চান।



উল্লেখ্য, ডেঙ্গু মোকাবেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ভাষা শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা মেডিকেল সেন্টারের ভূমিকা ফার্স্ট এইডের মতো। কোনো শিক্ষার্থীর ডেঙ্গু ধরা পরলে তারা তাকে তাৎক্ষণিক সেন্টারে ভর্তি করান এবং সাধারণ যেসব চিকিৎসা দেয়া সম্ভব- তা দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাদের রেফার করা হয় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালসহ নিকটস্থ হাসপাতালগুলোয়। শিক্ষার্থী ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য রয়েছে এই সেবা।


সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আনহার বিবার্তাকে জানান, আমাদের কাছে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন, তাদের মাঝে সর্দি কাশির উপসর্গ নিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি। আমরা তাদের ব্লাড টেস্ট করি। যাদের ব্লাডে প্লাটিলেট কম বা সন্দেহজনক, যাদের মাঝে ডেঙ্গুর উপসর্গ আছে তাদের আমরা ভর্তি করাই এবং অবস্থার অবনতি হলে রেফার করি ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল বা অন্য যে কোন হাসপাতালে। তাছাড়াও শিক্ষার্থীদের আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি যেন তারা ডেঙ্গু মোকাবেলা করতে পারে।


সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. হাফেজা জামান বিবার্তাকে জানান, আমাদের এখানে যেসব ডেঙ্গু রোগী আসে তাদের আমরা আমাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি। এদের বেশিরভাগ সুস্থ হয়ে ফিরে যান আর সিভিয়ার অবস্থা হলে আমরা তাদের সাজেস্ট করি বড় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। মূলত ফার্স্ট এইড হিসেবে যতটুকু আমাদের পক্ষে করা সম্ভব তা আমরা করি।


ফজলুল হক মুসলিম হলের ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন শিক্ষার্থী মো. দোয়েল বিবার্তাকে জানান, এখানে স্টাফরা আমাদের দিনে দুইবার দেখতে আসেন, অবস্থা জানতে। এছাড়াও এখানে পরামর্শ এবং সাধারণ সেবাগুলো দেয়া হয়। মূলত এখানে সাধারণ অবস্থার রোগীরাই অবস্থান করে, কারো গুরুতর অবস্থা হলে এখানে রাখা হয় না।


আরেকজন আক্রান্ত শিক্ষার্থী নাসিম বিবার্তাকে জানান, এখানে আমি আছি কারণ শরীর দুর্বল থাকায় আমার পক্ষে হলে থাকাটা নিরাপদ নয়। সুস্থ হলেই রিলিজ নেব।


বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরাই মূলত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের মতে, ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রয়োজন নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান, সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও মশক নিধন অভিযান। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা।



ডেঙ্গু মোকাবেলায় হল কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বিবার্তাকে জানান, গত প্রভোস্ট কমিটিতে উপাচার্য মহোদয় হলগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। হলগুলোতে আমরা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করছি, যার কারণে শিক্ষার্থীরা কম অসুস্থ হচ্ছে। আমার হলে ঈদের পর কেবল একজন আক্রান্ত পেয়েছি- যে কিনা হল থেকে নয় বরং বাইরে থেকে আক্রান্ত অবস্থাতেই এসেছিল। আর আমরা যথেষ্ট প্রচার-প্রচারণা করি রুমে রুমে লিফলেট এবং সচেতনতামূলক নোটিশ পাঠিয়ে।


বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. নিলুফার পারভিন বিবার্তাকে জানান, আমরা মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করছি, নিয়মিত ওষুধ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া ছাত্রীদের রুমগুলোতে সচেতনতামূলক নোটিশ পাঠাচ্ছি। সাধারণ যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন তার সবই আমরা করে যাচ্ছি নিয়মিত।


সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল রউফ মামুন বিবার্তাকে জানান, আমরা তো নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটাচ্ছি, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করছি। এগুলো আমাদের সবসময়ই করা হয়। আর ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করার জন্য ছাত্রদের রুমে লিফলেট পাঠাই।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে সব হলকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা সেই মোতাবেক কাজ করছে। হলগুলোতে সচেতনতা বিজ্ঞপ্তিসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর আমরা শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে সচেতন হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।


বিবার্তা/ ছাব্বির/ রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com