
একজন সাইদা মোর্তজা (আমাদের পলা খালাম্মা) সংসার করেছেন মাত্র সাড়ে চার বছর। ১৯৭১ সালে তার স্বামী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে চিফ মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর তাকে ফুলার রোডের ১৪/এ আবাস থেকে তুলে নিয়ে যায় পাকবাহিনীর দোসরেরা।
৩০ ডিসেম্বর পাড়ার ছেলেরা (মোহন, পিয়ারু, বাবুল) মিরপুর মাজারের পাশে বধ্যভূমি থেকে অনেকের সাথে তার মৃতদেহও উদ্ধার করেন। মাটি চাপা দেয়া ছিলো দেহগুলো। ডিকম্পোসড। নাকে গামছা বেঁধে মোহন ভাই নামেন সেই জায়গায়। কারও ঘড়ি, কারও শার্ট চিনে চিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শহীদদেরকে তিনি খুঁজে বের করেন। ডা. মোর্তজার হাত পেছনে বাঁধা ছিলো শক্ত মোটা দড়ি দিয়ে, আর চোখ বাঁধা ছিলো মিতি আপার নীল রঙা শাড়িতে যেটার বর্ণনা ওনারা আগেই শুনেছিলেন পলা খালাম্মার কাছে। মোট ৯টা মৃতদেহ ট্রাকে করে উঠিয়ে ওনারা ফুলার রোড পাড়ায় আসেন। সেখান থেকে তিনজনের মৃতদেহ পরিবার নিয়ে যায়। বাকি ৬ জনকে কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। তখন কেউ কেউ এই কাজে বাধা দিতে এলে মোহন ভাই স্টেনগান উঁচিয়ে বলেছিলেন কেউ বাধা দিলে উনি ব্রাশফায়ার করবেন। উল্লেখ্য, পাড়ার এই ছেলেরা তখন সদ্য মুক্তিযুদ্ধ করে ঘরে ফিরেছিলেন।
প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর সকালে আমরা ফুলার রোডের প্রাক্তনেরা পলা খালাকে নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিফলকগুলোতে শ্রদ্ধা নিবেদন করি। এবারের বুদ্ধিজীবী দিবসে আমাদের বাড়তি পাওয়া ছিলো চিকিৎসা কেন্দ্রটির নামফলকে ডা. মোহাম্মদ মোর্তজার নাম জ্বলজ্বল করতে দেখা। এই শহীদ পরিবারটির অনেকদিনের চাওয়া ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটি ভবন ওনার নামে যেন নামকরণ করা হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় বহু প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এই নামকরণ সম্ভব হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে প্রো-ভিসি সামাদ স্যারের অবদান অনস্বীকার্য, উনার প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ। সৌভাগ্যক্রমে আমি এই মেডিকেল সেন্টারে কাজ করছি ১৫ বছরের অধিক কাল ধরে। ডা. মোর্তজার পরিবারের সদস্যরা (পলা খালা, মিতি আপা, নীলিম ভাই) আমার প্রাণাধিক প্রিয় আপনজন। দীপন-অভিজিৎ দুজনারই হাতেখড়ি দিয়েছিলেন পলা খালা। শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর ছেলে শোভন ভাই এবং শহীদ ড. রাশিদুল হাসানের মেয়ে নীলি আপা আজকে ছিলেন আমাদের সাথে, এই দুজন মানুষও ফুলার রোড পরিবারের অতি আদরের। শহীদ ড. আবুল খায়েরের পরিবারকেও আজকে পেয়েছি কবরস্থানে গিয়ে। অমূল্য আবেগ নিয়ে শুরু হয় আমাদের ১৪ ডিসেম্বর।
(রাজিয়া রহমান জলির ফেসবুক থেকে)
বিবার্তা/কেআর
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]