স্বেচ্ছায় না হলে বাধ্যতামূলক ব্যাংক একীভূত করা হবে
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:১৬
স্বেচ্ছায় না হলে বাধ্যতামূলক ব্যাংক একীভূত করা হবে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ব্যাংক একীভূতকরণে সবলের সাথে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করতে প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নীতিমালায় এক দিকে আর্থিক অবস্থার উন্নতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত করার বিধান রাখা হয়েছে।


বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করা হয়।


প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আইন অনুযায়ী দেশের কোনো ব্যাংক চাইলে স্বেচ্ছায় অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব তুলতে পারবে। আবার কোনো ব্যাংক আর্থিক পরিস্থিতি দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও একীভূত হতে না চাইলে সেটিকে এ বিষয়ে বাধ্য করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একীভূত হওয়া দুর্বল ব্যাংকগুলোর অস্তিত্ব ও লাইসেন্স বিলুপ্ত হবে। চাইলে দুর্বল ব্যাংক অধিগ্রহণকারী সবল ব্যাংক নিজেদের নামও পরিবর্তন করতে পারবে।


অপর দিকে স্বেচ্চায় কেউ একীভূত হলে বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার অর্থাৎ সিআরআর সংরক্ষণে ছাড়সহ নীতিসহায়তা দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।


অপর দিকে কাদের চাকরি থাকবে আর কাদের চাকরি থাকবে না সে বিষয়েও স্পষ্ট করা হয়েছে। তবে দুর্বল ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডির চাকরি থাকবে না। পাঁচ বছরের জন্য কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না দুর্বল ব্যাংকের পরিচালকরা। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত এক সার্কুলার জারি করা হয়েছে। ১৭ পৃষ্ঠার এই সার্কুলারে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডির পরিচালক মো: হারুর-অর-রশিদ।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে এবং মধ্যস্থতায় কোনো ব্যাংক স্বপ্রণোদিত হয়ে অন্য ব্যাংকের সাথে একীভূত হওয়ার অনুমোদন দেয়া আছে। একই আইনে কোনো দুর্বল ব্যাংকের পুনরুদ্ধারের জন্য দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা দেয়া রয়েছে। আর এ ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে দুর্বল ব্যাংক সবলের সাথে একীভূত করার জন্য প্রমোট কারেক্টিভ অ্যাকশন বা পিসিআর ফ্রেমওয়ার্ক নামক একটি সার্কুলার জারি করেছে। ওই সার্কুলার অনুযায়ী কোনো ব্যাংক মূলধন ও তারল্য ঘাটতি, উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ, সুশাসনের ঘাটতি এবং সর্বোপরি আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ করলে বাংলাদেশ ব্যাংক যে আদেশ দেবে তা পরিপালন করতে বাধ্য হতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা দেবে তা পরিপালনে ব্যর্থ হলে আমানতকারীগণের স্বার্থ রক্ষার্থে বা জনস্বার্থে ব্যাংকের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার স্বার্থে, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৭৭ এর ক্ষমতাবলে সবল ব্যাংকের সাথে দুর্বল ব্যাংককে একীভূত হতে বাধ্য করা হবে। কীভাবে দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সাথে একীভূত হবে তার জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা জারি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।


এ নীতিমালা অনুযায়ী একীভূত হওয়া দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) চাকরি হারাবেন। এছাড়া একীভূত হওয়া দুই ব্যাংকের মধ্যে খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকের পরিচালক আগামী পাঁচ বছর অন্য কোনো ব্যাংকে পরিচালক হতে পারবেন না। এ রকম বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে নীতিমালায়।


নীতিমালার আলোকে, খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলো নিজ থেকে একীভূত না হলে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূতকরণ করা হবে। একীভূতকরণের আগে দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা সই করতে হবে। এরপর বিস্তারিত পরিকল্পনা বিশেষ করে আমানতকারী, সব পাওনাদার ও বিনিয়োগকারীর অর্থ ফেরতের পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক চিত্র বের করবে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে সর্বশেষ আদালতের কাছে একীভূতকরণের আবেদন করতে হবে।


কোনো দুর্বল বা সঙ্কটাপন্ন ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সাথে একীভূত হলে, হস্তান্তর-গ্রহীতা ব্যাংকের মূলধন, তারল্য, খেলাপি ঋণ ইত্যাদি আর্থিক সূচক প্রভাবিত হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


নীতিমালায় দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সাথে স্বেচ্ছায় একীভূত হলে সিআরআর সংরক্ষণে ছাড়সহ নানা নীতিসহায়তা দেয়া হবে। এজন্য ব্যাংকের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখা এবং জনস্বার্থে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ, সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও), এসএলআর (স্যাচুটরি লিকুইডিটি রেশিও), এলসিআর (লিকুইডিটি কাভারেজ রেশিও), এনএসএফআর (নেট স্ট্যাবল ফান্ডিং রেশিও) সংরক্ষণে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট অংশ ছাড় দেয়া হবে। হস্তান্তরকারী ব্যাংকের আয়ের সাথে দুর্বল ব্যাংকের পুঞ্জীভূত ক্ষতি সামঞ্জস্য করতে হস্তান্তরকারী ব্যাংকের এ ক্ষতিকে ‘গুডউইল’-এ রূপান্তর করে তা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে হস্তান্তর-গ্রহীতা ব্যাংকের আয় থেকে সমন্বয় বা পরিশোধের সুযোগ দেয়া হবে। বিদ্যমান সুবিধার আওতায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে তারল্য সুবিধা প্রদান করা হবে। ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে নগদ সহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলধন বৃদ্ধির জন্য শেয়ার, পারপেচুয়াল বন্ড এবং সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুতে সহায়তা দেয়া হবে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com