‘বাজেটে গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হবে ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক প্রস্তাব’
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৮
‘বাজেটে গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হবে ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক প্রস্তাব’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এনবিআরের পরামর্শক কমিটির সভায় অগ্রিম আয়কর (এআইটি), ভ্যাট আইনের আওতায় আগাম কর (এটি) প্রত্যাহার, ব্যাংক ঋণের সুদহার হ্রাসসহ ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের মতামতের গুরুত্ব দেয়। যে উন্নয়ন-অগ্রগতি হচ্ছে,সেখানে কেউ বাদ থাকুক সেটা আমরা চাই না। আগামী অর্থবছরের বাজেটের জন্য ব্যবসায়ীদের দেওয়া প্রস্তাবসমূহ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।


বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে এনবিআরের ৪৪তম পরামর্শক কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।


এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।


সভায় এফবিসিসিআইয়ের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতা ও উদ্যোক্তারা বক্তব্য দেন।


অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সরকার এবং বেসরকারি খাত সবাই মিলে একসাথে কাজ করবো। বাজেট প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন একটা চলমান প্রক্রিয়া। সকল কার্যক্রমে বেসরকারিখাতের মতামতের গুরুত্ব থাকবে বলে জানান তিনি।


অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আগামী বাজেটের জন্য যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তার অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে। সবাই যদি কেবল অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য করতে চান, তাহলে রপ্তানি বাড়বে না। তিনি রপ্তানি বহুমূখীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে।


ব্যবসায়ীরা কর ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে সরকার ও ব্যবসায়ী সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।


এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণের প্রেক্ষাপটে আমাদের যেমন প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও রাজস্ব ব্যয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে,একইসাথে কর আহরণের সক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে হবে। এই সক্ষমতা যদি অর্জন করতে না পারি, তাহলে উন্নত বিশ্বে আমরা যেতে পারবো না। ব্যবসায় ব্যয় কমানো কিংবা ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে এনবিআর কাজ করছে বলে জানান তিনি।


ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, কর সংক্রান্ত বিষয়ে কোন ব্যবসায়ীর যদি অসন্তোষ থেকে থাকে, আমি মনে করি সেটি ব্যক্তি পর্যায়ের। এই অসন্তোষ সংশ্লিষ্ট কমিশনার কিংবা রাজস্ব বোর্ডে কথা বলে সমাধান করা সম্ভব বলে তিনি আশ্বস্ত করেন ব্যবসায়ীদের।


এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম ব্যবসায় খরচ কমাতে আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আমদানিকৃত কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যসহ শিল্প উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর (এআইটি), ভ্যাট আইনের আওতায় আগাম কর (এটি) প্রত্যাহার, ব্যাংক ঋণের সুদহার হ্রাসসহ আমদানি পণ্যের যথাযথ শুল্কায়ন এবং পণ্য খালাসের জটিলতা দূর করতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অটোমেশনের প্রস্তাব করেন। একইসাথে তিনি রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে স্থানীয় বাজার থেকে সংগৃহীত পণ্য,কাঁচামাল ও সেবা ক্রয়কে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান।


মাহবুবুল আলম মূল্যস্ফীতি এবং মানুষের প্রকৃত আয় বিবেচনায় রেখে আগামী জাতীয় বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাক থেকে বৃদ্ধি করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেন।


আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ও সুশাসন নিশ্চিতকরণে ব্যাংকিং কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয় এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, কেউ যদি এনবিআরের কোন কর্মকর্তার কারণে হয়রানির শিকার হন। সেই অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। তবে এফবিসিআিই এবং এনবিআরের সমন্বয়ে একটা অভিযোগ সেল গঠন করা হলে ব্যবসায়ীরা সেখানে অভিযোগ করতে পারবেন। আগামী বাজেটে এ ধরনের একটা অভিযোগ সেল গঠনের প্রস্তাব করা হয়।


এছাড়া এফবিসিসিআই ব্যবসা সহজীকরণের সেবা বাড়াতে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বিভাগ নামে একটি বিভাগ গঠনের প্রস্তাব করেন। মাহবুবুল আলম রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পসহ সকল রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর হার ১শতাংশ হতে হ্রাস করে পূর্বের ন্যায় ০ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ এবং তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত বহাল রাখার প্রস্তাব করেন। এছাড়া তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য- চাল, গম, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভূট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্য তেল, চিনিসহ সকল প্রকার কৃষিজাত নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যকে উৎসে কর কর্তনের আওতা বহির্ভূত রাখার প্রস্তাব করেন। আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট শিল্প, বিনিয়োগ ও জনবান্ধব হবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।


সভায় এনবিআরের তিনজন সদস্য আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস সম্পর্কিত কার্যক্রমের উপর আলাদা তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।


বিবার্তা/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com