"ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে 'মাইক' চলচ্চিত্র''
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১৩:২১
এস এম রিয়াদ রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

শিশু কিশোরদের জন্য চলচ্চিত্র খুব একটা হয় না আমাদের দেশে। ছোটরা যে ছবি দেখার মধ্য দিয়ে সামাজিকভাবে জাগ্রত এবং ভবিষ্যতের দায়িত্ববান নাগরিক হয়ে উঠতে পারবে। সেই ভাবনাটা, চর্চাটা আমাদের চলচ্চিত্র ভুবনে কমই বলা চলে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাজও হয় কম। হঠাৎ হঠাৎ একেকটি ছবি আসে, যেমন এখন এসেছে ‘মাইক’। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে শিশুতোষ চলচ্চিত্রটি।


দেশে মুক্তিযুদ্ধের উপর সিনেমা তৈরি হলেও এর আগে ’৭৫ পরবর্তী দুঃসময় নিয়ে তেমন সিনেমা হয়নি। অনেকদিন পর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও এই ধরনের সিনেমা তৈরি হয়েছে। নির্মাতারা মাইকে’র মাধ্যমে '৭৫ পরবর্তী সময়ের ইতিহাস তুলে ধরেছেন। শিশুতোষ চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে পারবে


সিনেমার শুরু থেকে দেখতে থাকলে কিছুটা ধীর গতির মনে হবে। কিন্তু ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী বাংলাদেশ যে আরও একবার ১৯৭১-এর মতো অবরুদ্ধ ছিল, স্বাধীনতা বিরোধীদের বাড়বাড়ন্ত ছিল, তখনকার সরকারি প্রশাসন যে রূঢ় আচরণ করছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে, ১৯৭১-এ রাজাকারদের সহায়তায় স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ধারা যে ফিরে এসেছিল - সেগুলো উঠেছে একটি গ্রামীণ উপাখ্যান-এ। বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণই নিষিদ্ধ ছিল যে সময়টায় তখন মুক্তিযোদ্ধা দাদার সহায়তায় এক শহুরে কিশোর দাদীর মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে গ্রামে গিয়ে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে স্থানীয় কিশোরদের সাথে এবং তারাই বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে আনে রাজাকার শাসিত সেই গ্রামে।


কিশোররা মাইক চায় বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ বাজাতে, সেটা পায়নি দোকানির কাছে থেকে। অবশেষে রাতের অন্ধকারের মাইক চুরি এবং ৭ই মার্চের দিন, সেই বজ্রকণ্ঠের ঐতিহাসিক ভাষণ গ্রামের প্রতিটি ঘরকে স্পর্শ করে, স্পর্শ করে সাধারণ মানুষকে। তাই রাজাকার জাফর ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরোধিতা পরাজিত হয় মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধে। একাত্তরে যে কণ্ঠ মানুষকে রণাঙ্গনে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে, এই ভাষণ তেমনিভাবে আবার অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসে মানুষকে।


দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কথাগুলো বলেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিশিষ্টজনেরা। সম্প্রতি ‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি দেখে প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব কথা বলেন। গত এক সপ্তাহেজুড়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'মাইক' নিয়ে বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা ফুটে উঠেছে।


সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মাইক’ মুক্তি পায় শুক্রবার (১১ আগস্ট)। এরই মধ্যে সারাদেশে সিনেমাটি শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে। মুক্তির প্রথম দিন থেকে টানা সাতদিন দর্শক আলোচনায় ছিল শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'মাইক'। ৭৫ পরবর্তী নিষিদ্ধ সময়ের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ইতিহাসনির্ভর সিনেমাটি নানাভাবেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'মাইক' নিয়ে বিবার্তাকে যা বলছে দর্শক ও বিশিষ্টজনেরা তা জেনে নেওয়ার পালা।


বাবা-মা’র সাথে ‘মাইক’ সিনেমা দেখতে এসে পাঁচ বছর বয়সী রাফায়েত নিশান বলে, সিনেমাটি আমার খুব ভালো লেগেছে। জঙ্গলের ভেতর মাইক লাগাইছে- সেখানে বঙ্গবন্ধু ভাষণ শুনছি। ওরা সবাইকে ধরে ফেলছিল। পরে অনেক মানুষ আগুন নিয়ে এসে বাঁচাইছে।


মাইক সিনেমাটি নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে মাইক চলচ্চিত্রটি দেখতে এসেছি। চলচ্চিত্রটি দেখে আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত হয়েছি। কারণ মাইক ছবিটির মধ্যে যে সকল বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে, এসব বিষয়গুলো পূর্বের কোন সিনেমায় ছিল না- যা মাইক দেখে জানতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পেরেছি এবং '৭৫ পরবর্তী সময় সম্পর্কে জানতে পেরেছি।


ফরিদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী হালিমা খাতুন বলেন, স্কুল শেষে আমরা সহপাঠীরা মাইক সিনেমা দেখার জন্য এসেছি। ছবিটি দেখে খুবই ভালো লেগেছে। এই ছবির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এক সময় যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি প্রচার করা নিষিদ্ধ ছিল তা এই ছবিটির মাধ্যমে জানতে পারলাম।


নড়াইলের কালিয়া থেকে ঢাকায় মাইক সিনেমাটি দেখতে এসে সাজ্জাদুর রহমান বলেন, মাইক সিনেমাটি আসলেই অসাধারণ। এই সিনেমায় শিশুরা যেভাবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটিকে প্রচার করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে, এটা আসলেই ভালো লেগেছে। ভাষণটি যখন নিষিদ্ধ ছিল, সিনেমায় দাদা যখন তার নাতিকে বলেছে গল্পটা সেটা মন ছুঁয়ে গেছে। এমনকি দাদা যেটা করতে পারেনি তার আবেগের জায়গা থেকে, নাতিরা সেটাই করতে চেয়েছে অর্থাৎ মাইকে ভাষণটি চালানোর চেষ্টা করেছে আর এক পর্যায়ে সফলও হয়েছে। এটা অনেক ভালো লেগেছে।


সালাহউদ্দিন আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হক বলেন, ১৯৭১ এবং ৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে যে পরিস্থিতি ছিল মাইক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সেই চিত্রটি ফুটে উঠেছে। এক সময় বঙ্গবন্ধুর নাম বলা যেতো না এবং তার ভাষণ প্রকাশ্যে বাঁজানো নিষিদ্ধ ছিল। মাইক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সেই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিশুরা সেইসব তথ্য পাবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা ছবিটি দেখে উৎফুল্ল এবং আনন্দিত বোধ করছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়টি তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে।


ফরিদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রোকসানা বলেন, মাইক দেখে যেটা মনে হলো- ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় একটি সিনেমা। আমি মনে করি শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে ভালো করে গড়ে উঠতে পারে সেই উদ্দীপনা মাইক সিনেমা থেকে পাবে।


সাংবাদিক ও আবৃত্তিশিল্পী অনন্যা গোস্বামী সিনেমাটি দেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, মাইক সিনেমাটি এক কথায় অসাধারণ ছিল। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নির্মাতারা বাস্তবভিত্তিক ইতিহাস তুলে ধরেছেন। ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষণ বাঙালির আবেগের জায়গা, সেই বিষয়টি এই সিনেমায় ফুটে উঠেছে। তাই আমি মনে করি অভিভাবকদের নিজেদের শিশু-কিশোরদের এই দেশের জাগ্রত ইতিহাস জানাতে এই মুভিটি অনবদ্য সৃষ্টি। সবার মুভিটি দেখা উচিত।


সিনেমা নিয়ে যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি বলেন, মাইক সিনেমাটি দেখে খুবই ভালো লেগেছে। আমার মনে হয় নতুন প্রজন্মের সকলকেই এই সিনেমাটি দেখা উচিত। বিশেষ করে সিনেমায় শিশুরা যখন রাতের অন্ধকারে গাছের সাথে মাইক বাঁধে, এরপর সেই মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনা যায়, সেই জায়গাটা এককথায় অসাধারণ, অনবদ্য। শুধু তাই নয়, সিনেমার শেষে যে গানটির আওয়াজ শুনে গ্রামের মানুষ জেগে উঠেছে, ওই দৃশ্যটি আরো বেশি ভালো লেগেছে।


তিনি বলেন, বাচ্চাদের অভিনয় অসাধারণ হয়েছে। মাইক সিনেমার সাফল্য কামনা করি। আমাদের সন্তানেরা যাতে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে, সে জন্য এর ব্যাপক প্রচার দরকার। একটি সময় ছিল বঙ্গবন্ধুর যখন কথা বলা যেতো না। বঙ্গবন্ধুর নাম বললে বাধা সৃষ্টি করা হতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তো বাংলাদেশের পরিপূরক, তাঁর বিকল্প কিছু নেই।


মাইক চলচ্চিত্রের শিশুশিল্পী আলী আবদুল্লাহ দাইয়ান ভূঁইয়া বলেন, এই সিনেমায় অভিনয় করতে পেরে আমি গর্বিত। এটা আমার জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি ইতিহাসনির্ভর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সঠিক ইতিহাস জানতে ছবিটি ভূমিকা রাখবে।


শিশু শিল্পী মীর্জা ত্বাবীব ওয়াসিত বলেন, আমাদের মাইক সিনেমাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে করা হয়েছে। সিনেমা করার আগে আমি জানতাম না যে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সিনেমাটা করে আমার এত ভালো লাগছিল যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি সবাইকে অনুরোধ করব সবাই সিনেমাটি দেখেবেন।


অভিনেত্রী সংগীতা চৌধুরী বলেন, আমি শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি অভিনয়ও করি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মাইক’। ভীষণ যত্ন করে সিনেমাটি তৈরি করেছেন এফ এম শাহিন। সিনেমার প্রতিটি দৃশ্য এমন যে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। আমি খুবই গর্বিত এমন একটি চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়ে।


অভিনেতা নাদের চৌধুরী বলেন, এই ছবিতে ছোটরা অসাধারণ অভিনয় করেছে। মাইক ছবিতে সবচেয়ে খারাপ চরিত্রটি আমি করেছি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। এ ভাষণটি একদল প্রচার করতে দিবে না, অন্যদিকে সবাই বিশেষ করে বাচ্চারা ভাষণটি প্রচার করার জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা করে। তারা বিভিন্ন কায়দায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে প্রচার করে সাধারণ মানুষের কাছে মাইকের মাধ্যমে। তখন ইন্টারনেট বা এত চ্যানেল ছিল না। মাইক সিনেমার মাধ্যমে সেসব নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। শিশুদের দুঃসাহসিক অভিযান এই শিশুতোষ সিনেমায় ফুটে উঠেছে।


অভিনেত্রী তানভীন সুইটি বলেন, 'মাইক' সিনেমাটিতে ’৭৫ পরবর্তী সময়ের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। যাতে একদল শিশু অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে সেই ঘটনা ফুটিয়ে তুলেছে। আমরা আমাদের পরের প্রজন্মের কাছে এই অজানা ঘটনাগুলো ‘মাইক’ সিনেমায় তুলে এনেছি। মূলত ৭ই মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে। যে ভাষণ শুনে লাখো বাঙালি যুদ্ধে করে জয় ছিনিয়ে এনেছিল। তাই সবার প্রতি আমার আহ্বান, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাইক সিনেমাটি দেখবেন।


চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের উপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। যে সময়ের প্রেক্ষাপটে (পঁচাত্তর পরবর্তী) সিনেমাটি তৈরি হয়েছে, যেটি ছিল নিষিদ্ধ সময়। আমাদের ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম জানতই না যে বঙ্গবন্ধু নামে কেউ আছেন। মাঝেমধ্যে বাবার মুখে শুনতাম শেখ সাহেব এটা করেছে, ওটা করেছে। তোমরা অনেক লাকি যে দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছ। তোমরা আরও সুন্দর সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে মাইক সিনেমায়।


অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও তার ৭ মার্চের ভাষণকে জানা ছাড়াও 'মাইক' সিনেমাতে অনেক ভালো গল্প আছে, অদ্ভুত সুন্দর গল্প আছে। একটা শিক্ষণীয় ছবি হয়েছে, তোমাদের সিনেমা হয়েছে। তোমরা সবাই বাবা-মাকে নিয়ে সিনেমাটি দেখবে। আমি নিশ্চিত এটা দেখলে সবার ভালো লাগবে।


শিল্পী অলক দাশ গুপ্ত বলেন, মাইক সিনেমাটি খুব ভালো হয়েছে, আমরা অবেগ ধরে রাখতে পারিনি। কারণ সেই সময় তো আমরা জলন্ত সাক্ষী ছিলাম। যখন বঙ্গবন্ধুর নাম আলোচনা তো দুরে মুখেও আনা যেত না। ৭৫ পরবর্তী সে সময়টা খুবই কঠিন ছিল। এই শিশুতোষ সিনেমাতে সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে। সিনেমাটির মাধ্যমে বাচ্চাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা যোগানো এটা চমৎকার একটি চিত্যনাট্য হয়েছে। সিনেমাতে শিশুরা চমৎকার অভিনয়ের মাধ্যমে দেশের সত্য ইতিহাস তুলে ধরেছে।


শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন (ইউএসএ) ইনক'র সভাপতি ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ‘মাইক’ সিনেমাটি অসাধারণ লেগেছে। বাংলাদেশকে কেউ যদি ভালোবাসে, বাংলাদেশকে কেউ যদি ধারণ করে এ সিনেমাটি না দেখার কোন কারণ নাই। এই যে দাদু চরিত্রটা এরা যে কষ্টটা বয়ে বেড়াচ্ছে আমরা এর উত্তর কিভাবে দিব? এই সিনেমাটির আরেকটি নাম আমি দেব 'রক্ত কখনো বেইমানি করে না'। এই যে ধারণ করার যে ঘটনাটি দেখলাম এটা বাবা ছেলে ও নাতী। এ ধারণটি কিন্তু তিনটি প্রজন্মের কাছে অটোমেটিক চলে আসছে।


তিনি বলেন, এখন তো দেশে বঙ্গবন্ধুর ফলোয়ার সবাই হয়ে গেছে। কিন্তু সিনোমাই কাউকে তাকে নিয়ে কাজ করতে দেখা যায় না। দেশে মাঝে-মধ্যে দু একটা শিশুতোষ চলচ্চিত্র আসে। আর মাইকের মত দেশ নিয়ে বাস্তবভিত্তিক সিনেমা তো ২০ বছরে একটাও আসেনা। আমাদের দেশের সন্তানরা মাইক সিনেমাটি দেখুক এটাই আমার আহ্বান। বিশ্বময় এই মাইককে নিয়ে যাব আমি। তরুণ প্রজন্মকে দেশের সত্যিকার বার্তা দিয়ে যেতে হবে। তা না হলে এ স্বাধীনতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।


প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব গুলশাহানা ঊর্মি বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিলে তারা ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেনি, দেশকে ভালোবাসেনি। তারা বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও মুক্তিযুদ্ধকে সামনে নিয়ে আসতে ভয় পেয়েছিল। কারণ তাদের ভেতর বোধশক্তি ছিল না। শুধু তাই নয়, তারা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ মুছে ফেলতে চেয়েছিল। অথচ এই ভাষণের উপর ভিত্তি করে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে কেন্দ্র করে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মাইক’ এক অনবদ্য সৃষ্টি।


বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মফিজুল হক সরকার বলেন, ‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি বাঙালি জাতির সম্পদে পরিণত হবে। সীমান্ত ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কম চলচ্চিত্র হয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচাইতে মূল্যবান। ১৯৭১ সালে চাপিয়ে দেয়া অসম পশু শক্তির বিরুদ্ধে কৃষক, শ্রমিক ছাত্ররা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছে, মা-বোনেরা সম্ভ্রম দিয়েছিল। এই অর্জন আমাদের কাছে সম্পদ।


আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. নবী নেওয়াজ বলেন, ‘মাইক’ সিনেমাটি দারুণ হয়েছে। নির্মাতা কলাকৌশলীরা সফল হয়েছে। বিশেষ করে সিনেমার অর্ধেক থেকে শেষ পর্যন্ত যা দেখেছি আসলে তা চিন্তা করা যায় না। বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে খুবই প্রয়োজন ছিল এ সিনেমাটির। মাইক সিনেমার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা উপহার দেওয়ার জন্য।


গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, শিশু কিশোরদের জন্য চলচ্চিত্র খুব একটা হয়না দেশে। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিষয় নিয়ে হয় আরও কম। ছোটরা যে ছবি দেখার ভিতর দিয়ে সামাজিক ভাবে জাগ্রত, এবং ভবিষ্যতের দায়িত্ববান নাগরিক হয়ে উঠতে পারে, সেই ভাবনাটা আমাদের চলচ্চিত্র ভুবনে নেই। হঠাৎ হঠাৎ একেকটি ছবি আসে, যেমন এখন এসেছে ‘মাইক’।


তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ভিত্তি ধরে সরকারি অনুদানে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাইক’। এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে পারবে।


আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে উপজীব্য করে শিশুতোষ সিনেমা এর আগে কখনো হয়নি, এটি প্রথম সিনেমা। 'মাইক' সিনেমাটি স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসের স্মারক হয়ে থাকবে। পচাঁত্তর পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর কথা বলা যেত না, স্বাধীনতার কথা বলা যেত না, ৭ই মার্চের ভাষণের কথা বলা যেত না।


তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্ম জানে না, ৭৫ পরবর্তী সময়ের কথা। তারা এই বিষয়ে শুনেওনি। সিনেমায় বাচ্চারা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনছে এবং মানুষের মধ্যে প্রচার করার জন্য দুঃসাহস দেখিয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানবার জন্য 'মাইক' চলচ্চিত্রটি প্রতিটি স্কুলে স্কুলে দেখানোর ব্যবস্থা করা দরকার, যা শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজির লিটন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চকে উপজীব্য করে নির্মিত এই সিনেমা দেখলে ইতিহাস জানা যাবে। শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের বলবো 'মাইক' সিনেমাটি দেখতে। তাছাড়া শিশু একাডেমির একজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থী এই সিনেমায় কাজ করেছে, যেটি আমাদের জন্য অনেক আনন্দের।


অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, মাইক মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের উপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। কাজেই আশা করছি, এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসসহ জাতির পিতার বিশ্ব কাঁপানো ভাষণ সম্পর্কে জানতে পারবে। তাই সবাইকে বিশেষ করে শিশু, তরুণদের ছবিটি দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। মাইক সিনেমার সাথে নির্মাতা ও কলাকৌশলীদের ধন্যবাদ জানাই- দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা উপহার দেওয়ার জন্য।


আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেন, 'মাইক' একটি অসাধারণ চলচ্চিত্র। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং পঁচাত্তর পরবর্তী ইতিহাসের সাথে জড়িত এই চলচ্চিত্র। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ইতিহাস জানতে চলচ্চিত্রটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


তিনি বলেন, 'মাইক' সিনেমা দেখে খুবই মুগ্ধ হয়েছি। এটি ইতিহাসনির্ভর সিনেমা। এই সিনেমার শিশুশিল্পীদের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে একদিকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান ফুটে উঠেছে। এর পাশাপাশি পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল- বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে জিয়াউর রহমানের যে অবস্থান ছিল সেটা ফুটে উঠেছে।


হানিফ আরো বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান জয় বাংলা স্লোগান ও ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সকল কাজ করেছিল। রাজাকারদের পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দেশকে পেছন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। সেটা মাইক চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অনেকটা ফুটে উঠেছে।


‘মাইক’ চলচ্চিত্রের গল্পকার, প্রযোজক ও পরিচালক এফ এম শাহীন বলেন, মাইক চলচ্চিত্রটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে নির্মিত প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র। এই ভাষণকে জাতিসংঘের ইউনেস্কো পৃথিবীর অন্যতম ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাকে উপজীব্য করে আশির দশকের প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ পৌঁছে দিতে আমাদের এ নির্মাণ।


তিনি আরও বলেন, চলচ্চিত্র আমাদের অনুভূতি ও স্বপ্নের দুনিয়ায় সরাসরি প্রবেশ করতে পারে, তাই এই শক্তিশালী মাধ্যমকে আমি শিশুদের মনোবিকাশে ব্যবহার করতে চাই। তারই ধারাবাহিকতায় শিশু-কিশোরদেরকে নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্র ‘মাইক’ নির্মাণ করা।


লেখক, কলামিস্ট ও সংগঠক এফ এম শাহীনের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করছেন এফ এম শাহীন ও হাসান জাফরুল বিপুল।


গত ২৯ মে চলচ্চিত্রটি আনকাট সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছিল। ‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি দেখে সেন্সরবোর্ডের সদস্যরা ভূয়সী প্রশংসা করেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে এ ধরনের সিনেমা নির্মাণকে তারা সাধুবাদ জানিয়েছেন। গত ২৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে চলচ্চিত্রটির বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।


‘মাইক’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন বিশিষ্ট অভিনেতা তারিক আনাম খান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, অভিনেত্রী তানভীন সুইটি, অভিনেতা নাদের চৌধুরী, ঝুনা চৌধুরী, জয়িতা মহলানবিশ, সংগীতা চৌধুরী, রহিম সুমন, ইকবাল হোসাইন, শিশুশিল্পী সানজিদ রহমান খান, আলী আবদুল্লাহ দাইয়ান ভূঁইয়া, খোন্দকার মেঘদূত জলিল, মীর্জা ত্বাবীব ওয়াসিত প্রমুখ।


বিবার্তা/রিয়াদ/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com