শিক্ষা
প্রয়োজন বেশি, সামর্থ্য কম: কুবি মেডিকেল সেন্টারের বেহাল দশা
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৫, ১৭:০২
প্রয়োজন বেশি, সামর্থ্য কম: কুবি মেডিকেল সেন্টারের বেহাল দশা
কুবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, ঔষধ নেই, নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম—এমনই নাজুক অবস্থায় চলছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) একমাত্র মেডিকেল সেন্টারের সেবা কার্যক্রম। জরুরি চিকিৎসা সেবার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রায় সময়ই দ্বারস্থ হতে হয় শহরের ক্লিনিক বা হাসপাতালে। ফলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই চরম ভোগান্তির মুখে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য অংশীদাররা।


বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর মেডিকেল সেন্টারের জন্য বরাদ্দকৃত ৬ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা যন্ত্রপাতি ও বাকি ৪ লাখ টাকা ওষুধ ক্রয় বাবদ খরচ হয়। এছাড়া প্রতি মাসে ওষুধ ক্রয় করার জন্য উত্তোলন করা হয় ২৫ হাজার টাকা–যার মধ্যে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা আবার ভ্যাট পরিশোধ করতেই চলে যায়।


এছাড়া এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯৩৪। এছাড়া বর্তমানে ২৮১জন শিক্ষক, ৩০৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। অথচ এদের বিপরীতে মেডিকেলে ডাক্তারের সংখ্যা মাত্র ৫ জন হলেও এরমধ্যে ১জন শিক্ষাছুটিতে থাকায় বর্তমানে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া আছেন ১জন নার্স এবং ৩ জন সাপোর্টিভ স্টাফ। ফলে মেডিক্যালের প্রকৃত সেবা থেকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি চিকিৎসকদের উপরও পরছে অতিরিক্ত রোগী দেখার চাপ।


এদিকে ২০২৩ সালের ২৮ আগস্টে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষ হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাসেবা উন্নত করার লক্ষ্যে কিছু আধুনিক মেডিকেল সরঞ্জাম প্রদান করেছে। এসব সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে দুটি বেড, একটি এক্সরে ভিউ বক্স, একটি ইসিজি মেশিন এবং একটি অপারেশন-সামগ্রী জীবাণুমুক্ত করার অটোক্লেভ মেশিন। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার না হওয়ায় অল্পকিছু সরঞ্জাম থেকেও তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা লাভে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।


অন্যান্য সংকটের পাশাপাশি, ওষুধের সংকটও এখানে প্রকট। বাজেট সংকুলান হওয়াতে মাত্র ১২ প্রকার ঔষধ দিয়েই সকল রোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে। মেডিকেলে সরবরাহ করা হয় না কোনোপ্রকার অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ। ফলে অধিকাংশ ওষুধই বাইরে থেকে কিনে আনতে হয় শিক্ষার্থীদের নিজেদের খরচে। এতে করে আর্থিকভাবেও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।


তবে কবে এই সংকট নিরসন হবে, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। বিকেল ৫টায় মেডিকেল বন্ধ হওয়াতে ২৪ ঘণ্টা মেডিকেল সেবা না পাওয়ারও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। ফলে শিক্ষার্থীরা চাইছেন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ এবং একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সেবার নিশ্চয়তার আশ্বাস।


এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১- বর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাসেল মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। কিন্তু মেডিকেলে পর্যাপ্ত ঔষধ নেই। তাই শিক্ষার্থীদের বাহির থেকে ওষুধ কিনতে হয়। তাই, তাদের কথা চিন্তা করে প্রেসক্রিপশনে যে ঔষধগুলো লিখা হয়, সেগুলো প্রভাইড করার ব্যবস্থা করা হোক।


গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ইব্রাহিম ভুঁইয়া বলেন, এখানে বাজেট সংকটে সবরকম ঔষধ পাওয়া যায় না। আবার বিষয়ভিত্তিক ডাক্তারও নেই। যেমন আমার এখন ত্বকের সমস্যা হয়েছে, কিন্তু আমাকে জেনারেল কোন ডাক্তার দেখিয়েই ঔষধ নিতে হচ্ছে। কারণ এখানে ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে। তো সবমিলিয়ে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা হোক।


এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের প্রধান ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলিয়ে যে সংখ্যা সেটা হিসেবে আমাদের ডাক্তারের সংখ্যা খুবই কম। এতে আমাদের উপরও প্রচুর প্রেশার পড়ে। আমাদের যে বাজেট সেটাও বাৎসরিক হিসেবে একটু কম। এছাড়া মেডিকেলে ছোট্ট একটা জায়গায় গড়ে উঠেছে আবার আমাদের যন্ত্রও কম। আমরাও চাই মেডিকেলেও এই সমস্যাগুলো কেটে উঠুক


এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, রাতে দুজন ডাক্তার আনার ব্যাপারে আমাদের আলোচনা চলছে। বাজেট বাড়ানোর ব্যাপারেও অর্থ কমিটির সাথে কথা বলেছি। আমি সমস্যার কথাগুলো শুনেছি। সংকট-সমস্যা এগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য চেষ্টা করব


বিবার্তা/প্রসেনজিত/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com