স্থানীয় বাজারে মুরগি জবাই ও বিক্রিতে অবহেলা, টাইফয়েডের ঝুঁকি
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৫, ২২:৫৬
স্থানীয় বাজারে মুরগি জবাই ও বিক্রিতে অবহেলা, টাইফয়েডের ঝুঁকি
বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ মাংস প্রাপ্তি মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। তবে দেশের অধিকাংশ স্থানীয় পোল্ট্রি বাজারে এখনো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই করা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি।


সম্প্রতি বাংলাশে কৃষি বিশ্বব্যিালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক ময়মনসিংহ সদরের স্থানীয় বাজারগুলোতে সাধারণভাবে জবাইকৃত মুরগির মাংসে টাইফয়েড (সালমোনেলা) ও ডায়রিয়া (ইকোলাই) রোগের জীবাণু পেয়েছেন। এছাড়াও বেশিরভাগ দোকান মালিক (৯৬.১৫ শতাংশ) অসুস্থ মুরগি আলাদা রাখা বা মেরে ফেলার পরিবর্তে বিক্রি করে দেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।


ময়মনসিংহ সদর ও এর আশেপাশের পোল্ট্রি মুরগির বাজারগুলোর অবস্থা পর্যেবক্ষণ, বায়োসিকিউরিটি ও পোল্ট্রি জবাইকরণ সম্পর্কে বিক্রেতাদের মনোভাব যাচাইকরণ এবং সেখানে বিক্রয়কৃত মাংসের গুণগতমান যাচাইয়ের জন্য বাকৃবির পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেনের নেতৃত্বে গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। গবেষণাটি ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ শাখা উদ্যোগে আয়োজিত ‘১৩তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার-২০২৫’ এ উপস্থাপন করা হয়।


ওই গবেষণায় দেখা গেছে, স্থানীয় বাজারে সাধারণভাবে জবাইকৃত মাংসে ক্ষতিকর ইকোলাই ও সালমোনেলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উপস্থিতি রয়েছে, যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় মাংসে এগুলো থাকার কথা না। এসব মাংসের নমুনায় সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ লগারিদম ৪.০২ থেকে ৫.৫৯ সিএফইউ/গ্রাম এবং ইকোলাই ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ লগারিদম ৪.০১ থেকে ৫.৯৪ সিএফইউ/গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাজারের নমুনায় মোট কার্যকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণও (টিভিসি) বেশি ছিল।


অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, গবেষণায় ময়মনসিংহ সদরের চরপাড়া বাজার, মিন্টু কলেজ বাজার, মেছুয়া বাজার, নতুন বাজার, সানকিপাড়া বাজার, কেওয়াটখালী বাজার, শেষমোড় বাজার, সুতিয়াখালী বাজার, ভাবখালী বাজার, কে আর মার্কেট, শম্ভুগঞ্জ বাজার এবং গাছতলাসহ ১২টি স্থানীয় বাজারের পোল্ট্রি দোকানের তথ্য নেওয়া হয়। একটি সুনির্ষ্টি প্রশ্নাবলীর তালিকা অনুসরণ করে এ ১২টি বাজারের ২৪টি পোল্ট্রি দোকানের কর্মীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল।


তিনি আরো জানান, এসব বাজারে সাধারণভাবে জবাইকৃত এবং প্রসেসিং ইউনিটের পদ্ধতি অনুসরণ করে পোল্ট্রি ফার্মে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাইকৃত মোট ২৬টি মাংসের (উরু এবং বুকের মাংস) নমুনা এবং দুইটি পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। নমুনাগুলো বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল।


গবেষণায় উঠে আসা স্থানীয় বাজারের মুরগির দোকানগুলোর অবস্থা সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, “গবেষণার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৮৪.৬২ শতাংশ দোকানে মুরগি রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই, ৯২ শতাংশ দোকানে ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই এবং ৪৬.১৫ শতাংশ দোকানে পর্যাপ্ত আলো ছিল না। এছাড়াও, ৩০.৭৭ শতাংশ দোকানে মাংস কাটার জায়গা অস্বাস্থ্যকর ছিল এবং পরিকল্পিত বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল না। এ রকম পরিস্থিতি ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি এবং দূষণের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে।”


স্বাস্থ্যকর মাংস প্রাপ্তির বিষয়ে অধ্যাপক ইলিয়াস বলেন, “বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারগুলোর অধিকাংশ পোল্ট্রি দোকানে অপর্যাপ্ত জায়গায় পাখিগুলোকে রাখা হয় এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই করা হয়, যা অত্যন্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও নানা রোগ বিস্তারের কারণ হতে পারে। এটা সমাধানে স্থানীয় বাজারগুলোতে ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে ক্রেতাদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাংস পৌছে দেওয়া সম্ভব।”


তিনি বলেন, “ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বাজারগুলোতে ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা গেলে তা নিরাপদ মাংস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি স্থানীয় পোল্ট্রি দোকানগুলো আরো লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে। আর প্রসেসিং ইউনিটের মাংসে কোনো সালমোনেলা বা কলিফর্ম সনাক্ত করা যায়নি, যা ইঙ্গিত করে যে প্রসেসিং ইউনিট থেকে পাওয়া মাংস খাওয়ার জন্য নিরাপদ।”


তিনি আরো বলেন, “প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারের পোল্ট্রি দোকানীদের ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট স্থাপনে উৎসাহিত করতে হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পোল্ট্রি মুরগি বিক্রি বন্ধ করতে হবে। বাজার থেকে মাংস কেনার সময় ক্রেতাদের সতর্ক হতে হবে। ক্রেতা ও বিক্রেতাকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাই করা মাংসের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করার জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।”


বিবার্তা/আমান/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com