ভিকারুননিসায় যৌন হয়রানি
কারাগারে শিক্ষক মুরাদ, অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ
প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:১৪
কারাগারে শিক্ষক মুরাদ, অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির মামলায় রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার সিনিয়র শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।


২৯ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার দুইদিনের রিমান্ড শেষে আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। অপর দিকে মুরাদের আইনজীবী চিকিৎসা চেয়ে আবেদন করেন।


শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম যৌন নিপীড়ককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে কারাবিধি অনুসারে তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।


এদিকে মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মায়ের অভিযোগের পর শিক্ষক মুরাদকে গ্রেফতার করা হয়।


বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।


সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, স্কুলের পাশে কোচিং সেন্টারে ছাত্রীদের পড়ানোর নামে বিভিন্ন সময় স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়াসহ নানা অশোভন আচরণের মাধ্যমে যৌন হয়রানি করেছেন শিক্ষক মুরাদ। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে তার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে। ৪৮ বছর বয়সী শিক্ষক মুরাদ একাধিক ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়েছে। তাদেরকে জড়িয়ে ধরে চুম্বনও করেছেন। একাধিক ছাত্রীর বেশকিছু অডিও রেকর্ডিং ও কথোপকথনে এর প্রমাণ মিলেছে।


সর্বশেষ গত বছরের ১৯ নভেম্বর স্কুলে পরীক্ষা শেষে শিক্ষক মুরাদের কোচিং সেন্টারে পড়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায় এক ছাত্রীকে। বিকেলে কোচিং শেষে অন্যরা বাসায় চলে গেলেও ওই ছাত্রীকে মুরাদ কৌশলে বসিয়ে রেখে নামাজের রুমে যেতে বলে। এরপর তাকে জোর করে জড়িয়ে ধরে যৌন নির্যাতন করে।


পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে মুরাদ বলেন, আমি তোমার বাবার মতো। এই ঘটনা জানাজানি হলে তোমার মা-বাবার সম্মানহানি হবে এবং স্কুল থেকে তোমাকে বের করে দেয়া হবে।


তিনি বলেন, কোচিং শেষে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন মুরাদ। অল্প বয়সী ছাত্রীরা ভয়ে এসব প্রকাশ করেনি। একজন ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা অশালীন আচরণের ঘটনা স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন।


গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী ছাত্রীর মাসহ আরো বেশ কয়েকজন অভিভাবককে নিজ নিজ সন্তানসহ ডেকে নিয়ে বসেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এসময় অভিভাবকসহ স্কুলের সাবেক ও বর্তমান অনেক ছাত্রী শ্লীলতাহানীর ঘটনা জানান। এরপর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনার বিচার দাবিতে স্কুলের সামনে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা।


ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, মামলা দায়েরের পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার দিকে কলাবাগান থানা এলাকা থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন, দুটি সিম কার্ড এবং একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে ঘটনার বিষয়ে শিক্ষক মুরাদকে জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। এ ছাড়া, ভুক্তভোগী ছাত্রী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। শিক্ষক মুরাদের মোবাইল ও ল্যাপটপ থেকে বেশ কিছু ভিডিও ও অডিও রেকর্ড উদ্ধার করা হয়েছে। যা যাচাই-বাছাই অব্যাহত আছে।


এ ঘটনার পর অভিভাবকদের অনেকেই চিন্তিত, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন- এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কোনো ম্যাসেজ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারী ও শিশুর বিষয়ে পুলিশ অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ যদি কেউ করে থাকে তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।


ভিকারুননিসা স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পেশাগত অবহেলা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে ড. মহিদ বলেন, ব্যক্তির দায় কখনো প্রতিষ্ঠান নেয় না। প্রতিষ্ঠানটিতে আরো অনেকে চাকরি করেন। তারা নিশ্চয় এমন আচরণ করছেন না। একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের যে আচরণ করা দরকার তারা সেটা করছেন। বিক্ষিপ্তভাবে একজন শিক্ষক যদি এ ধরনের কাজ করেন সে দায়ভার তো অন্য শিক্ষক নেবেন না।


একই প্রতিষ্ঠানে এমন অভিযোগে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে, সেই তদন্তে তাদের দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে; এই দায় মুক্তি পুলিশের তদন্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এটি একটি একাডেমিক বিষয়। তদন্তের বিষয়গুলো দেখার জন্য প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটি রয়েছে। দায়িত্বশীল জায়গাগুলো তারা দেখবেন। তবে ফৌজদারি বিষয়গুলো আমাদের অংশ। আমরা তা দেখছি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com