কুবি শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষক সমিতির আবেদন
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:০৩
কুবি শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষক সমিতির আবেদন
কুবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নবগঠিত কার্যনির্বাহী কমিটি উপাচার্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ উপস্থিত শিক্ষকদের উপর অতর্কিত ‘হামলা ও হেনস্থার’ ঘটনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন, উপাচার্য কার্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সংস্থাপিত সিসিটিভিসমূহের বিগত এক মাসের ফুটেজ সংরক্ষণের জন্য এ আবেদন করা হয়।


রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত আলাদা চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর দেয়া দুটি পত্র থেকে বিষয়টি জানা যায়।


কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন, উপাচার্য কার্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সংস্থাপিত সিসিটিভিসমূহের বিগত এক মাসের ফুটেজ সংরক্ষণের জন্য দেয়া আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি-২০২৪ এর নির্বাচিত কার্যনির্বাহী সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকগণ মাননীয় উপাচার্যের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে অযাচিতভাবে অকস্মাৎ অতর্কিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার নেতৃত্বে কতিপয় অছাত্র ও বহিরাগত সন্ত্রাসী উপাচার্য দপ্তরে অবস্থিত শিক্ষকদের উপর প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা চালায়।


এছাড়া উপাচার্য কক্ষে মাননীয় উপাচার্যের পক্ষে স্লোগান, ভোটের দিন প্রশাসনিক ভনের চতুর্থ তলার বারান্দা থেকে ভোটারদের পর্যবেক্ষণ ও আলোকচিত্র ধারণ করা, উপাচার্য এবং প্রক্টরিয়াল বডির সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারী, বহিরাগত সন্ত্রাসী এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরের নিকট সভা ও অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় ১৯ ফেব্রুয়ারি হামলায় অংশগ্রহণকারীরা উপাচার্যের সাথে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে।


উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক জীবননাশের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য দপ্তরে ঘটা সমস্ত ঘটনার তথ্য-প্রমাণ বিভিন্ন মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরাসমূহ, রেজিস্ট্রার ভবন এবং ভিসি দপ্তরের অভ্যন্তরস্থ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ফোন কল রেকর্ড অনুসন্ধান করলে সহজেই বেড়িয়ে আসবে আসল সত্য।


এমতাবস্থায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সামগ্রিক নিরাপত্তা বিধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন, উপাচার্য কার্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সংস্থাপিত সিসিটিভিসমূহের ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফুটেজ জরুরিভিত্তিতে সংরক্ষণ ও নিয়মিত রেকর্ড সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।


বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি-২০২৪ এর নবগঠিত কার্যনির্বাহী কমিটি উপাচার্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ উপস্থিত শিক্ষকদের উপর অতর্কিত ‘হামলা ও হেনস্থার’ ঘটনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অন্য চিঠিতে উপাচার্যের সাথে নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতি সৌজন্য সাক্ষাতের ঘটনা তুলে ধরা হয়।


চিঠিতে লিখা হয়, নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লিখিত বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সংকটগুলোর সমাধানের জন্য উপাচার্য মহোদয়ের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয় তখন তিনি জানান, ‘প্রশাসনে কোনো সংকট নেই, কোনো অনিয়ম নেই। সবকিছু নিয়মের মধ্যে থেকেই করা হচ্ছে। প্রশাসন নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার শিক্ষকদের নেই এবং উপস্থাপিত আলোচ্য বিষয়গুলো সম্পূর্ণভাবে পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক)। রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বললে আমি কোনো কথা বলবো না। এতো কথা বললে শিক্ষক সমিতি কাজ করতে পারবেনা, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি বলে কিছু থাকবে না।’


এছাড়া উপাচার্য কর্তৃক শিক্ষকদের ‘লায়ার (মিথ্যাবাদী)’, ম্যনারলেস (অভদ্র) বলে সম্বোধনের কথা চিঠিতে তুলে ধরা হয়। এসময় ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন ও পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক (চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত) দেলোয়ার হোসেনসহ এর নেতৃত্বে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারী, বহিরাগত সন্ত্রাসী এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে উপাচার্য দপ্তরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আপত্তিকর স্লোগান দেয় ও হামলার কথা তুলে ধরা হয়।


এমতাবস্থায়, আগামী তিন দিনের মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণসহ চার দফা দাবি জানায় শিক্ষক সমিতি। সেগুলো হলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৃশ্যমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন ও পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক (চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত) দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন পূর্বক যথাযথ শান্তি নিশ্চিতকরণ, নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থ প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর অপসারণ; এবং ক্যাম্পাস থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসী ও অছাত্রদের চিহ্নিত করে তাদেরকে গ্রেফতারপূর্বক বিচার নিশ্চিত করা।


এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দদের উপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এখনো কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করলে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে। সিসিটিভি ফুটেজগুলো সংরক্ষণ করলে হামলার সবকিছু পরিষ্কার বুঝা যাবে।’


বিবার্তা/প্রসেনজিত/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com