শিরোনাম
শিক্ষাক্রম নিয়ে আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতি
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:০০
শিক্ষাক্রম নিয়ে আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সরকার কর্তৃক গৃহীত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সমালোচনাকারী ও আন্দোলনকারীদেরকে অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে বিবৃতি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।


বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষাবিদ, অভিভাবক, স্কুলশিক্ষক, অ্যাক্টিভিস্ট সর্বোপরি নাগরিকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছে। পত্র-পত্রিকায় কিংবা সামাজিক মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমের ইতিবাচক দিক নিয়ে অনেকে সমর্থনমূলক লেখা লিখছেন। কেউ কেউ এর সমালোচনা করছেন, দুর্বলতার দিকগুলো তুলে ধরছেন, এমনকি এই শিক্ষাক্রমকে বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন। সেমিনারে আলোচনা এবং রাজপথে সমাবেশও দেখা যাচ্ছে। শিক্ষা যেহেতু মানুষের একটি মৌলিক অধিকার ও শিক্ষাই নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্ধারক, তাই শিক্ষাবিষয়ক যেকোনো নীতি নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় এই আলাপ-তর্ক জরুরি। বাংলাদেশ সরকার শিক্ষাবিষয়ক নানান নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় রয়েছে, এই পর্যায়ের নতুন শিক্ষাক্রমে বেশ বড়সড়ো কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাই এবিষয়ক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ব্যাপকই হবার কথা।


কিন্তু আলাপ-তর্কের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রক্রিয়াটি যেন সরকার মানতে নারাজ। বর্তমান সরকার তার যেকোনো পদক্ষেপের সমালোচনাকে ‘সরকাবিরোধিতা’ হিসেবে বিবেচনা করে, তা 'রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং সনাতনী আইন-কানুনের মাধ্যমে তা মোকাবেলা না করে সরাসরি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো নিন্দিত ও দমনমূলক আইনে মামলা ঠুকে দেয়, যাতে সমালোচনাকারীকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া যায়। শাসনের এই পদ্ধতিই স্বৈরতন্ত্র, যে তন্ত্রে নাগরিকের কথা শোনার কোনো সুযোগ রাখা হয় না।


নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ক আলাপ-তর্ক-বিরোধিতার কারণে চলতি সপ্তাহে তিন জনকে আটক করে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে, তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে। একজনকে উচ্চ আদালত ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়েছে। সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের দুইজন অভিভাবক, একজন শিক্ষা উদ্যোক্তা এবং একজন অনার্স শিক্ষার্থীর নামে মামলা করা হয়েছে। এর আগে ভিন্ন একটি মামলায় আরো তিনজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে দেয়া হয়েছে, যারা নানান পেশার সাথে যুক্ত ও মূলত অভিভাবক।


বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আমরা শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা মনে করি সম্পূর্ণ অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক কায়দায় এই মামলা-মোকদ্দমা-গ্রেফতারের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। ব্যাপক রদবদলের নতুন শিক্ষাক্রম অভিভাবক-শিক্ষকদের মধ্যে নানান দ্বিধা-আশঙ্কা তৈরি করবে এবং তা নিয়ে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হবে এটাই স্বাভাবিক। সরকার যদি মনে করে জাতির জন্য এটাই শ্রেষ্ঠ শিক্ষাক্রম, তবে তা নিয়ে অভিভাবক-শিক্ষক-নাগরিকদের সঙ্গে বিপুল মাত্রায় সংলাপমূলক কর্মসূচিতে যেতে হবে। ওপর থেকে চাপিয়ে দেয়া চলবে না। সংশয় দূর করার দায়িত্ব সরকারের। অন্যদিকে যদি অ্যাক্টিভিস্ট-অভিভাবকদের কথা ও দাবিতে শক্ত যুক্তি থাকে তবে তা গ্রহণ করতে হবে।


বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন হিসেবে আমরাও এই বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করছি এবং আমাদের কাছেও নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ প্রাথমিক অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে:


১। প্রধানত অ্যাক্টিভিটি-নির্ভর পাঠদানের নতুন যে ধরন তা প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য সম্ভাবনা তৈরি করতে পারলেও, উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য বিজ্ঞান ও গণিতের বিশদ ভিত্তি প্রয়োজন। নতুন শিক্ষাক্রমে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যায়ে বিজ্ঞান ও গণিতকে সীমিত করে ফেলাটা আত্মঘাতী হয়েছে। বিজ্ঞান ও গণিতের এই সীমিত জ্ঞান দিয়ে উন্নত মেধার মানবসম্পদ গড়ে তোলা অসম্ভব।


২। নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষা-উপকরণের কারণে অভিভাবকদের ব্যয়ভার হঠাৎ বেড়েছে; শিক্ষকরা এই পদ্ধতিতে পাঠদানে অপ্রস্তুত রয়ে গেছেন; প্রান্তিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ে এই পদ্ধতির বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হবে। অর্থাৎ, যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে।


এসময় শিক্ষাক্রম নিয়ে মতপ্রকাশ বা বিরুদ্ধমত প্রদানের কারণে শিক্ষক-অভিভাক-নাগরিকদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। পাশাপাশি অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিয়ে ও সব মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেবারও জোর দাবি জানিয়েছে তারা।


বিবার্তা/এমজে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com