পানিতে আটকে পড়েছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা, বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:০৬
পানিতে আটকে পড়েছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা, বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

অতিবৃষ্টির কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির ফলে শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের স্বীকার হয়েছেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ - কুয়েত মৈত্রী হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হলসহ(একাংশ) ও কয়েকটি হলে বৃষ্টির পানি আটকে থাকায় সেখানে শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে।


২১ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার রাতে একটানা বৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমগ্র ক্যাম্পাসে এবং আশেপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকেও এই জলাবদ্ধতা লক্ষ করা যায় কয়েকটি হলের সামনে।


সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টিতে কয়েকটি হলের মূল গেট পর্যন্ত হাঁটু সমান পানি জমে আছে।কোনো কোন হলে পানি পৌঁছে গেছে বারান্দা পর্যন্ত।


এর মধ্যে আজিমপুর গোরস্তান সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত মেয়েদের দুটি হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের শোচনীয়। সম্পূর্ণ রাস্তায় জমে আছে হাঁটু সমান পানি। গেটের সামনে হাঁটুসমান পানি জমে থাকায় হল থেকে বের হতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।


মৈত্রী হলের এক শিক্ষার্থী বিবার্তাকে জানান, বৃষ্টির পানি শিকদার মনোয়ারা ভবনের সামনে পর্যন্ত চলে এসেছে। পানি মাড়িয়ে কোথাও বের হওয়া যাচ্ছে না। হলে খাবার পানি নেই। গোসল করার পানিও শেষ হয়ে গেছে।গতকাল প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বিদ্যুৎ চলে যায়। আজ বিকেল সাড়ে তিনটায়ও বিদ্যুৎ আসেনি।কিছুক্ষণ পর ফোন বন্ধ হয়ে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। হল প্রশাসনের এসব বিষয়ে কোনো তৎপরতা দেখছি না।


বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমাদের দাপ্তরিক বেশ কিছু নথিপত্রও ভিজে গেছে। মেয়েদের ভবন এবং হাউজ টিউটর ভবনের নিচতলায় পানি উঠে গেছে। আমরা আসলে খুব মানবেতর জীবন যাপন করছি। মুদি দোকানের চাল-ডালসহ অনেককিছু ভিজে গেছে। মেয়েদের সাংস্কৃতিক কক্ষের হারমোনিয়ামসহ অনেককিছু পানিতে ভিজে গেছে।’


তিনি আরও বলেন, ‘খাবার পানি নতুন করে তুলতে না পারায় খাবার পানিও শেষ পর্যায়ে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকল্প পানি আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সমাজকল্যাণ থেকে বিকল্প বিদ্যুতের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ভয়ের ব্যাপার হলো, আজকেও যদি বৃষ্টি হয় তাহলে আবারও একই অবস্থা হবে।’


বঙ্গমাতা হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, এখন অনেকের মোবাইল ফোন অফ হয়ে গেছে। দুপুর থেকে খাবার পানি আনতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। পানিতে গেটের সামনে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন চালককেরা। যাদের একান্ত বাধ্য হয়ে কোথাও যেতে হচ্ছে, তাদের অভিযোগ; পানি পারাপার হতে তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।


বৃষ্টির পানিতে দুর্ভোগে পড়েছেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলের মূল গেট পর্যন্ত পানি জমে আছে। ভেতরে পুরো মাঠেও জমে আছে হাঁটুসমেত পানি৷ বৃষ্টির পানিতে আটকা পড়েছেন এ হলের শিক্ষার্থীরা। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথেই বারান্দা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।


সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইকবাল মামুন রউফ জানান, পানি জমেছে সে বিষয়ে আমি অবগত আছি। এটা শুধু আমাদের হলের সমস্যা নয় সারা বাংলাদেশের একই অবস্থা। এখন দুর্যোগের সময় একটু সমস্যা তো হবেই। রাস্তার পানি নেমে গেলে হলের সামনের পানিও নেমে যাবে। হলের বিদ্যুৎ যাওয়ার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।


জহুরুল হলের এক শিক্ষার্থী জানান, গতকাল ভারী বর্ষণের পর থেকে হলের মাঠ, মাঠের আশেপাশে অংশ এবং হল থেকে পলাশী যাওয়ার রাস্তা সব পানিতে ডুবে যায়। হাঁটু সমান পানি হওয়ার কারণে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের চলাচলের জন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি হলের টিনশেড অংশের টয়লেট গুলোতে পানিতে উঠে যায় যার ফলে এগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং ফল স্বরূপ হলের টিনশেড অংশে থাকা কয়েকশ শিক্ষার্থীর টয়লেট ব্যবহারে দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।


এ বিষয়ে জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ মো’ আবদূর রহিম জানান, আমি হল পরিদর্শন করেছি। শুধু হলে না রাতে আমার বাংলোতেও পানি উঠে গিয়েছিলো। এটা একটা দুর্যোগ তারপরও কী করা যায় এ বিষয়ে আমরা চিন্তা করছি। বিদ্যুতের ব্যাপারে আমি সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি। যেখানে পানি জমেছে ঐসব স্থানে আমাদের কোনো ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইন নেই তবুও আমি কর্মচারীদের সতর্ক করে দিয়েছি রাতেই। এখন আবার কথা বলবো। আশা করি আর বৃষ্টিপাত না হলে পানি নেমে যাবে।


বিদ্যুতের বিষয়ে প্রধান টেকনিক্যাল কর্মকর্তা আনন্দ কুমার বলেন, ‘বৃষ্টির পানির কারণে গতকাল রাতেই কুয়েত-মৈত্রী হলের সাব-স্টেশন ব্লাস্ট হয়ে যায়। পানির কারণে আমরা এটি এখনো চালু করতে পারিনি। বেশি লোড হওয়ায় বিকল্প কোন জায়গা থেকেও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট থেকে কিছু জরুরি লাইন সচল করতে।’


এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা না। এটি একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মেয়েদের মৈত্রী হল এবং বঙ্গমাতা হল আমাদের সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। আমরা সেখানে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়েছি। তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা অস্থায়ী বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করছি।এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে ও দায়ী করেছেন তিনি।


বিবার্তা/ছাব্বির/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com