বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের মেয়াদ দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ১৪ জুন। এ সময়কালে প্রায় অর্ধশতাধিক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হলেও তার একটিও সশরীরে করেননি তিনি।
এগুলোর মধ্যে অন্তত ৩০টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বডি সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটির। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা থাকলেও নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থেই তিনি সশরীরে কোন সভা করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। একটা নির্দিষ্ট সময় আগে সদস্যদের সভার আলোচ্যসূচি দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না।
জানা যায়, ২০২১ সালের ১৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম উপাচার্য হিসেবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ। এরপর থেকে তিনি সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ সভা সশরীরে না করে অনলাইনে করে আসছেন। এমনকি ভর্তি পরীক্ষাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সভাও তিনি অনলাইনে করে থাকেন।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুরে বক্তব্য নিতে গেলে রেগে যান উপাচার্য প্রফেসর হাসিবুর রশীদ। এসব তথ্য সাংবাদিকদের কে দিয়েছে সেই সোর্সের সন্ধান না দিলে তিনি কথা বলবেন না বলে জানান। তবে একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটির সভা সশরীরেই হয় এবং সিন্ডিকেটের একটি সভাও সশরীরে হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি। রেগে গিয়ে তিনি আরো বলেন, গত পাঁচ বছরে কোন সিন্ডিকেট সভার এজেন্ডাই (আলোচ্যসূচি) দেয়া হয়নি। এখন তো তবুও দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস ও কাউন্সিল শাখা সূত্র জানায়, বর্তমান উপাচার্য যোগদানের পর সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৬টি, একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ১৩টি এবং অর্থ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় ৫টি। উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট তিনি সিন্ডিকেটের প্রথম (৭৯তম) সভা করেন এবং শেষ (৯৪তম) সভা করেছেন গত ৩১ মার্চ, ২০২৩ তারিখে। এগুলোর সবগুলোই তিনি অনলাইনে করেছেন।
এছাড়াও তার আমলে প্রথম একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা (৩১তম) করেন ২০২১ সালের ৩০ জুন এবং শেষটি (৪৩তম) অনুষ্ঠিত হয় গত ২৮ মার্চ ২০২৩ তারিখে। অর্থ কমিটির প্রথম সভা (৩১তম) হয়েছিল ২৪ জুন ২০২১ তারিখে এবং শেষটি (৩৫তম) অনুষ্ঠিত হয় গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি সভাও সশরীরে অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম গতকাল বলেন, অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেস টু ফেস মিটিং হয় কিন্তু শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়েই হয় না। তবে সিন্ডিকেট হলো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম এখানে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ সদস্য হিসেবে থাকেন সুতরাং এই মিটিং ফেস টু ফেস হওয়া জরুরি। সভার নির্দিষ্ট সময় আগে আলোচ্যসূচি দেয়া হয় না, মিটিং শুরুর সামান্য আগে অনলাইনে দেয়া হয় বলেও তিনি জানান।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে উপাচার্য মহোদয়কে বিষয়টি অনেকবার বলেছি তিনি তা শোনেননি। তার (উপাচার্য) নাকি প্রব্লেম আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউকে তিনি বিশ্বাস করেন না তাই আগেই আলোচ্যসূচি প্রকাশ করা হয় না। আমি বুঝি না এটা প্রকাশ করলে ক্ষতি কী? আর এটা তো গোপন কিছু না, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট পাবলিক ফোরাম, এটার আলোচনা মানুষ জানবেই। এবিষয়ে উপাচার্যের সাথে তর্ক হয়েছে বলেও জানান প্রফেসর আবুল কাশেম।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছেন, বর্তমান উপাচার্য যোগদানের পর একাডেমিক কাউন্সিলের যে-সব সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে ৩২তম, ৩৩তম ও ৩৪তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল অফলাইন ও অনলাইন দুই প্রক্রিয়াতে। এছাড়া আর কোন সভা অফলাইনে বা সশরীরে হয়নি। তারা অভিযোগ করেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয় একাডেমিক কাউন্সিলে। কিন্তু অনলাইনে হলে সেগুলোতে ভালোভাবে মতামত প্রদান করা সম্ভব হয় না। কিন্তু মাননীয় উপাচার্যকে এটা বোঝানো সম্ভব হয় না।
বিবার্তা/সেলিম/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]