প্রত্যয়ের লড়াই শুধু একার নয়
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩, ২২:০০
প্রত্যয়ের লড়াই শুধু একার নয়
জাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সামিউল ইসলাম প্রত্যয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের একজন ছাত্র। গণরুম বিলুপ্তি, মেয়াদোত্তীর্ন ছাত্রদের অবিলম্বে হল ত্যাগ ও বৈধ শিক্ষার্থীদের হলে সিট নিশ্চিত করার দাবিতে ৫ দিন ধরে একাই অনশন করে যাচ্ছে মীর মশাররফ হোসেন হলের এই আবাসিক শিক্ষার্থী।


আকাশ সমান স্বপ্ন নিয়ে তিনি এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে। কিন্তু পরিবেশ তার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে। পদে পদে বাধা পেয়ে এক সময় বিস্ফোরণ ঘটে এই শিক্ষার্থীর মনে। পথে নেমে পরে অধিকার আদায়ের দাবিতে। প্রশাসন আশ্বাস দিলেও থেমে থাকেনি প্রত্যয়। দাবির শেষ যেনো দেখেই ছাড়বে।


শুধু প্রত্যয়ের নয়, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পরে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে র‍্যাগিং, সুষম খাদ্যের অভাব এবং গণরুম। বাসার পরিচ্ছন্ন বিছানা, পড়ার টেবিল রেখে দূর দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য। ভালো মানুষ হওয়ার, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার, বাবা মার স্বপ্ন পূরণ, সংসারের হাল ধরা সহ নানা মুখি স্বপ্ন এক নিমিষেই ভেঙ্গে যায় গণরুমে ঠাই হওয়ার পরে। মাটিতে তোশক বিছিয়ে গাদাগাদি করে ১ রুমে ৮০-৯০ জন করে থাকতে হয়। এভাবেই বিছানা, পড়ার টেবিল ছাড়া কেটে যায় দুই বছর।


রাত হলেই শুরু হয় মুরগি হওয়ার পালা। বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করে সিনিয়রদের তুষ্ট করার পালা। শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগও উঠে প্রায়। কিন্তু সেই অভিযোগ সিনিয়রদের চাপে প্রায় সময় তুলে ফেলা হয়। এর ফলে আরও সাহস বেড়ে যায় বিকৃত মস্তিষ্কের শিক্ষার্থীদের। সময় ঘুরতেই নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা তাদের অতীত ভুলে আবার নিজেরাই নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগ দিতে নেমে পরে। এভাবেই চক্রাকারে চলছে র‍্যাগিং।


বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর পরই অধিকাংশ ছাত্ররা মাদক এবং রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যায়। পড়াশোনা ছেড়ে এগুলোর পেছনেই সময় অপচয় করে। এর ফলে দেখা যায় পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর চাকরি না পেয়ে বছরের পর বছর হলের সিট আকরে ধরে বসে থাকে। হল না ছাড়ার আরও একটি মূল কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক পদ পাওয়া যায় শিক্ষা বর্ষের শেষ সময়ে। অনেকের তো পড়াশোনা শেষেও পদ পাওয়ারও নজির রয়েছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী স্নাতক পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১ সপ্তাহের মধ্যে হল ছাড়ার নিয়ম রয়েছে। মেয়েদের হলে প্রশাসনের প্রভাব থাকলেও ছেলেদের হলের নিয়ম চলে রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে। তাই মেয়েদের হল থেকে অছাত্রদের বের করা হলেও ছেলেদের হলে তা সম্ভব হয় না। অথবা বলা যায় প্রশাসন চেষ্টা করে না। অতীতে দেখা যায় কিছু দিন পর পরই অছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি কখনোই।


প্রত্যয়ের তিনটি দাবি সকল নবীন শিক্ষার্থী মনে মনে পোষণ করে। কিন্তু ছাত্ররা ধরেই নিয়েছে এটাই বোধয় নিয়ম। এভাবেই চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়। তাই প্রত্যয় যখন মাঠে নেমেছে তাই তারা ধরেই নিয়েছে এখনো কিছুই হবে না। অনশন করেও লাভ নেই কোনো। আবার অনেকে মনে করে 'কষ্ট করে কী হবে! বাস্তবায়ন হলে ভোগ করলেই চলবে'।


অনশনের ৫ দিন পার হলেও ইতিবাচক কিছু দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত।


হলে সিটের জন্য অনশন আসলে আমাদের দেখায় একটি জাতির মেরুদণ্ডের অবস্থা কী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কী অপেক্ষা করছে।


বিবার্তা/আয়েশা/সউদ/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com