ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টঙ্গী-গাজীপুর রুটের পরিবহন ক্ষণিকা বাসে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মারধরের পর ভুক্তভোগীকে গাজীপুর থানায় নিয়ে তার নামেই অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন অভিযুক্তরা। তবে 'বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়' বলে অভিযোগ নেয়নি পুলিশ।
নিজেকে ভুক্তভোগী দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের মাসুম বিল্লাহ শাওন প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযোগকারী শাওন নিজে ‘অপরাধী’ বলে দাবি করেছেন বাসে অবস্থান করা অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এবং কর্মরতরা।
গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারী ) ক্ষণিকার ৬২১৩ নম্বর বাসে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার জেরে গতকাল বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারী ) শাওন প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী- ক্ষণিকা বাস কমিটির সভাপতি আতিকুল ইসলাম আতিক, সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলাম সানি, সাবেক পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের এহসান সাদি খান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান এদের নাম উল্লেখ করেন।
জানা যায়, ঘটনারদিন বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের বাসে যাতায়াতের সময় শাওনের পরিচয়পত্র দেখতে চান কয়েকজন। এ সময় তিনি জানতে চান, আপনারা হেল্পার নাকি কন্ডাক্টর?- এ কথা বলায় শাওনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান তারা। এক পর্যায়ে মগবাজার ফ্লাইওভারে মারধর করে তাকে বাস থেকে নামিয়ে দেন। পরে আবার জোর করে বাসে ওঠেন শাওন। বাস উত্তরায় থামলে তিনি নিচে নামেন। এরপর 'বেয়াদব' অভিহিত করে আতিকুল ও রবিউলের নেতৃত্বে শাওনকে পুনরায় মারধর করা হয়।
এদিকে বাসে অবস্থান করা একাধিক শিক্ষার্থীর দাবি, শাওন নিজে এ ঘটনার জন্য দায়ী। তিনি সিনিয়র ভাইদের সঙ্গে চরম মাত্রায় বেয়াদবি করায় তাকে ধমক দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেও না বুঝে উল্টো বেয়াদবি করতে থাকে।
তাদের দাবি, সিনিয়র ভাইদের অমান্য করে তাদের সামনেই সিগারেট খাওয়া শুরু করে। যা ক্যম্পাসে চরম বেয়াদবি বলে গণ্য। এতে বাসের সবাই তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। লিখিত অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যমূলক বলেও দাবি তাদের।
মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ক্ষণিকা বাসের নিয়মিত যাত্রী মিম বলেন, আমি বাসের সামনেই ছিলাম। বাসের গেটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা স্টপেজ ছাড়া বাসে উঠছিল সবাইকেই জিজ্ঞেস করছিলো তারা বাসের শিক্ষার্থী নাকি বহিরাগত। কারণ নিয়মিত অনেক বাইরের শিক্ষার্থী বাসে ওঠায় ক্যাম্পাসের ছাত্ররা সিট পায় না। তেমনি শাওনকেও জিজ্ঞেস করায় সে ক্ষিপ্ত হয়, গায়ে পড়ে রাগ দেখানো শুরু করে। তবে সে-ই বারবার বলছিলো আমাকে মারেন, দেখি কেমন 'হেডাম' আপনাদের।
তিনি আরো বলেন, পরে আতিক ভাই উত্তরা থেকে বাসে উঠে সবাইকে শান্ত করে বিষয়টি সমাধান করতে চাইলে শাওন নিচে নেমে সবার সামনেই বেয়াদবি করে সিগারেট খাওয়া শুরু করে। এতে বাসের সব শিক্ষার্থী তার ওপর ক্ষিপ্ত হলেও তাকে কেউ মারেনি। শাওন নিজেই অপরাধী হয়েও কমিটির ভাইদের বিপক্ষে অভিযোগ দিয়েছে। অথচ আতিক ভাই অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ এবং গত ১ বছরে এই কমিটির আন্ডারে কোনো খারাপ ঘটনা ঘটেনি।
অভিযোগকারী মাসুম বিল্লাহ শাওন বলেন, আমার বাসা উত্তরা। আমি পাবলিক বাসেই যাতায়াত করি বলে তারা আমাকে চেনে না। আমি ঢাবির ছাত্র এবং ক্ষণিকার অনিয়মিত যাত্রী হওয়া সত্বেও যারা আমাকে মারধর করেছে। তাদের সাময়িক বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি, যেন পরবর্তীতে এমন ঘটনা ঘটানোর আগে সবাই ১০ বার ভাবে। এখন এ কমিটির বিলুপ্তির পাশাপাশি কমিটিবিহীন বাস চালানোর দাবি জানাচ্ছি।
ক্ষণিকা বাস কমিটির সভাপতি আতিকুল ইসলাম আতিক বলেন, আমি ঝামেলা দেখে উত্তরা থেকে বাসে উঠে সেটা সমাধান করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলেটি জুনিয়র হয়েও সিনিয়রের সামনে বেয়াদবি করেছে। আমি সব ঘটনা তাৎক্ষণিক বাস ম্যানেজার ও প্রক্টর স্যারকে জানিয়েছি। আমরা সমস্যার সমাধান করে তাকে তার বাবার কাছে তুলে দিই। আমি তাকে মারধর করিনি, সে আমাদের বিরুদ্ধে অযথাই অভিযোগ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, আমি শাওনের কাছ লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মারধর করাটা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাবির পরিবহন ম্যানেজারকে জানিয়েছি। ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। বাস কমিটির ছাত্রদের এমন কাজ করার এখতিয়ার নেই। তারা সর্বোচ্চ করতে পারে যে, বহিরাগত কেউ না উঠে। শাওন যেহেতু আমাদের ক্যাম্পাসের, সুতরাং তাদের কিছু করার অধিকার নেই। আমি আবারও প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। তবে শাওন নিজে অভিযুক্ত হলে এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিবার্তা/সাইদুল/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]