শিরোনাম
ঢাবি উপাচার্যের বিধিবহির্ভূত সিনেট আহবান: যোগ দিচ্ছেন না দুই উপ-উপাচার্য
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২০, ২০:৩৫
ঢাবি উপাচার্যের বিধিবহির্ভূত সিনেট আহবান: যোগ দিচ্ছেন না দুই উপ-উপাচার্য
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের বার্ষিক সভা আহবান করা হয়েছে রবিবার (১৪ জুন)। এই অধিবেশনের মূল কার্যসূচি হচ্ছে কোষাধ্যক্ষ কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১ সালের বাজেট উপস্থাপন করা।


এছাড়া গত ২০১৯ সালের দুটি সিনেট অধিবেশন, বিশেষ করে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত সিনেট অধিবেশনে ভোটের ফল জালিয়াতি করে বিতর্কিত উপাচার্যের প্যানেল নির্বাচনের কার্যবিবরণী অনুমোদনসহ আরো কিছু এজেন্ডা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ কর্তৃক প্রতি বছর এপ্রিল মাস থেকে বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয় এবং জুনের শেষ সপ্তাহে সাধারণত ২৭ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে বাজেট সিনেট অধিবেশনে উপস্থাপন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ২৭ জুনের আগে সিনেটে বাজেট উপস্থাপনের কোনো নজির নেই।


উল্লেখ্য, ঢাবির আর্থিক বিধি অনুযায়ী বাজেট প্রথমে কোষাধ্যক্ষ ফাইন্যান্স কমিটিতে উপস্থাপন করেন এবং দীর্ঘ সময় চুলচেরা বিশ্লেষণের পর তা অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তীতে সিন্ডিকেট সভার অনুমোদন নিয়ে বাজেট সিনেট অধিবেশনে উপস্থাপন করা হয়। গত ৭ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এক চিঠিতে করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আর্থিক বিধি মেনে বাজেট উপস্থাপন করা সম্ভব নয় বলে উপাচার্যকে জানিয়েছেন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট সিনেটে উপস্থাপন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র পাস করানো বা অনুমোদনের কোনো বাধ্যবাদকতা নেই। এ বছর করোনা মহামারীর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, কোষাধ্যক্ষ এবং লকডাউন করা ঢাকা শহর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল মেডিকেল কলেজসহ সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা অন্তত শতকরা ৬০ ভাগ সিনেট সদস্য অধিবেশনে যোগদান করতে ইতিমধ্যেই অপারগতা জানিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।


এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩-এর ক্যালেন্ডার পার্ট-২ চ্যাপ্টার-১ (৬) অনুযায়ী ২১ (21 clear days) কার্যদিবস পূর্বে সিনেট সভার নোটিশ দিতে বা চিঠি বিতরণ করতে হয়। সেদিক থেকেও সিনেট সভা আহবান বিধিসম্মত হয় নাই।


বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারসহ অধিবেশনে যোগ না দেয়াদের অভিযোগ, আগামী রবিবার অনুষ্ঠিতব্য সিনেট অধিবেশনে তিনজন সিন্ডিকেট সদস্য মনোনয়নের এজেন্ডা রয়েছে। সিনেটের ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৬ জুন। তাই ১৬ তারিখের পর সভা ডাকলে উপাচার্য তার পছন্দের কয়েকজন ব্যক্তিকে সিনেট থেকে সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দিতে পারবেন না। মূলত উপাচার্য তার নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কভিড-১৯ এর ঝুঁকির মধ্যেই এ অধিবেশন ডেকেছেন। কেউ কেউ বলছেন, গত সিনেট (২০১৯ সালের ৩১ জুলাই) অধিবেশনে উপাচার্য নির্বাচনের বিতর্কিত প্যানেল গঠনের কার্যবিবরণী অনুমোদন এবং করোনা শনাক্তকরণ কমিটি গঠনসহ কিছু বিষয়ে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে কেউ যাতে সিনেটে প্রশ্ন তুলতে বা আলোচনা করতে না পারে; সে জন্য অনুগত স্বল্প সংখ্যক সিনেট সদস্যের উপস্থিতিতে সিনেট অধিবেশন সম্পন্ন করতে চান উপাচার্য।


চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সভায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ। তিনি বলেন, এ অধিবেশনটি বাজেট নিয়ে হওয়ার কথা ছিল। অথচ এখনো বাজেট প্রণয়নই হয়নি। এমনকি ট্রেজারার জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আয়-ব্যয়ের হিসাবও হয়নি। উপাচার্য এ অধিবেশন ডাকার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করেনি। আর কিছু নয়; উপাচার্যের মূল উদ্দেশ্যই হলো- শিক্ষক ক্যাটাগরি ও বিশিষ্ট নাগরিক ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দেয়া।


একইভাবে চিঠি দিয়ে সভায় অংশ না নেয়ার কথা জানিয়েছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, উপাচার্য আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই এ অধিবেশন আহবান করেছেন। এ পর্যন্ত কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অধিবেশন ২৯ জুনের আগে হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আর এ বছর এখন বাজেটের কাজই শেষ হয়নি। তাই চিঠি দিয়ে সভায় অংশ না নেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছি।


তড়িগড়ি করে ডাকা সিনেটে উত্থাপনের জন্য নির্ধারিত সময়ের আগে বাজেট প্রণয়নের চাপ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক কামাল উদ্দীনের ওপর। যদিও উপাচার্যকে পাঠানো এক দীর্ঘ চিঠিতে এ সময়ের মধ্যে বাজেট প্রণয়ন সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন তিনি। চিঠিতে ট্রেজারার বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতিতে আর্থিক বিধি-বিধান মেনে ন্যূনতম নির্ভুল একটি বাজেট তৈরি করা সম্ভব নয়। বাজেটের বিষয়টি জরুরি মনে করলে, আমি সাময়িক ছুটি নিতে পারি, উপাচার্য মহোদয় প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন।’


এদিকে উপাচার্যের পছন্দের সিনেট সদস্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাদের অধিকাংশই জানান, ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামকেই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দিতে চান উপাচার্য। এ বিষয়ে একজন উপ-উপাচার্য বলেন, শিবলী রুবাইয়াতের মেয়াদ শেষ হবে ১৬ তারিখ। এরপর তাকে সিনেট থেকে মনোনয়ন দেয়া সম্ভব নয়। গত বছরও তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। যদিও শিক্ষাবিদ ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেটে যাওয়া শিবলী রুবাইয়াতের পিএইচডি ডিগ্রিও নেই। উপাচার্য একজন ব্যক্তিকে সিন্ডিকেটে আনতে সব সিনেট সদস্যকে কোভিড-১৯ তথা মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলছেন।


তবে সব ধরনের নিয়ম-নীতি মেনেই সিনেটের অধিবেশন ডাকা হয়েছে বলে দাবি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটেছে বলেছে মনে হয় না। অধিবেশনটি সাধারণত বিশ তারিখের পর হয়। এ বছর এগিয়ে আনার একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। সিনেটের ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৬ জুন। এরপর সভা হলে আমরা তাদের সম্মান জানাতে পারব না, ধন্যবাদ দিতেও পারব না। তাই সহকর্মীদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানাতেই অধিবেশন এগিয়ে আনা হয়েছে।


বিবার্তা/জাহিদ/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com