শিরোনাম
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা : সরকার ভেবে দেখুন
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০১৮, ১৭:৫৬
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা : সরকার ভেবে দেখুন
প্রিন্ট অ-অ+

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল, ছিল সাংবাদিকদের তীব্র অসন্তোষও। সাংবাদিকদের সকল সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন এবং দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল বিতর্কিত এ ধারাটি বাতিলের। এক পর্যায়ে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, ধারাটি সংশোধন করা হবে।


সরকার তার কথা রেখেছে, আইসিটি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬,৫৭ও ৬৬ ধারা বাতিল করেছে আর তার জায়গায় প্রস্তাব করেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে নতুন একটি আইনের খসড়া।


কী আছে নতুন আইনে? দেশের পত্রপত্রিকা পরিষ্কার ভাষায় লিখেছে, বিতর্কিত ৫৭ ধারার বিষয়গুলোই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় ভাগ করে দেখানো হয়েছে মাত্র। আগে একটি ধারায় ছিল, এখন বিভিন্ন ধারায় ভাগ করা হয়েছে। আগে যেমন অপব্যবহারের সুযোগ ছিল, এখনো তা আছে। বলা হচ্ছে, রাষ্ট্র বাকস্বাধীনতার পক্ষে কোনো পরিষ্কার অবস্থান নেয়নি।


আমাদের বক্তব্য এখানটাতেই। সরকারি তরফ থেকে নিশ্চয়ই বলা হবে এবং আমরাও জানি, বাকস্বাধীনতারও একটা সীমা আছে। আমরা অবশ্যই বুঝি, দেশ চালাতে গিয়ে সরকারকে নানা সমীকরণ-মেরুকরণ মাথায় রাখতে হয়। ফলে যাবতীয় সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরকারের পক্ষে সবসময় সকলের কাম্য সিদ্ধান্তটি নেয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু বাকস্বাধীনতার সীমানার মতো এরও তো একটা সীমা থাকবে, নাকি?


আমরা বলতে চাই, বিতর্কিত ৫৭ ধারার বিষয়গুলোকে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চারটি ধারায় ভাগ করে দেখানোর মধ্যে ঈশপের গল্পের ধূর্ত শেয়ালের এক কুমিরের বাচ্চাকে সাতবার দেখিয়ে জনগণকে বোকা বানাতে পারার 'মজা' আছে, কিন্তু প্রজ্ঞার কণামাত্র পরিচয় নেই। আমরা নিশ্চিত, এ বিপজ্জনক বুদ্ধিটা সরকারকে যারাই দিক, তারা সরকারের শুভাকাঙ্ক্ষী নয়।


দেশ চালাতে গিয়ে সরকারকে নানা সমীকরণ মাথায় রাখতে হয়, সে কথা আগেই বলেছি। তার সূত্র ধরেই বলি, সংবাদপত্র একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ - একথা আজ তর্কাতীত সত্য। এ স্তম্ভটিকে দুর্বল বা অচল করে দিলে যা থাকে তার নাম স্বৈরতন্ত্র হতে পারে, গণতন্ত্র কিছুতেই নয়। আমাদের শঙ্কা হয়, গণতন্ত্রের ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগ ও তার নেত্রীকে পেছন থেকে কেউ-কেউ কি সেই অন্ধকার পথের দিকে ঠেলে নিতে চাচ্ছে? প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নতুন বোতলে বিতর্কিত ৫৭ ধারার পুরনো মদ পরিবেশন কি তারই অশুভ সূচনা?


যদি তা-ই হয়, তবে আমরা বিনয়ের সাথে সরকারকে সংযত ও সতর্ক হতে বলবো। বলব, যদি জনগণের কল্যাণে এবং জনগণের মতামত নিয়ে দেশ চালাতে চান তাহলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা, জনমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা জানার এটিই অন্যতম প্রধান উপায়। স্বাধীন সাংবাদিকতায় স্বৈরাচারের অসুবিধা হয়, গণতান্ত্রিক সরকারের নয়।


আরো ভাবতে বলি, এ বিতর্কিত আইনের মাধ্যমে কোনো মহল শেখ হাসিনা ও তার সরকারের গায়ে ''সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী''র কলঙ্ক লেপন করে দিতে চাচ্ছে না তো !

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com