সারাদেশের মতো বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায়ও শুরু হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পাঁচ দিনের এ উৎসব আনন্দমুখর করে তুলতে মণ্ডপে মণ্ডপে নানা আয়োজন করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
বুধবার (৯অক্টোবর) মহা ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, দেবীর মুখোন্মোচন, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় এ পূজা। প্রতি বছরের মতো এ বছরও উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের ৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা চলছে। এসব পূজামণ্ডপে কারিগরদের নিপূণ হাতের ছোঁয়ায় সজ্জিত হয়েছে দেবীদুর্গা সহ অন্যান্য দেবী-দেবতা। ১৩ অক্টোবর বিকেলে দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এ উৎসব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহত্তর সনাতনী যুব সমাজের আয়োজনে পূজায় সার্বিক সহযোগিতা করছে লামা পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ। দুর্গা পূজা নির্বিঘ্নে করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা-ব্যবস্থার পাশাপাশি সহযোগিতাও করা হযেছে আর্থিকভাবে।
পঞ্জিকা সূত্রে জানা গেছে, এবার দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে দোলায় এবং ঘোটকে চড়ে গমন করবেন। পূজার সার্বিক তত্বাবধানে রয়েছে লামা কো অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড. কেন্দ্রীয় হরি মন্দির পরিচালনা পরিষদ, সনাতনী যুব সমাজ ও কেন্দ্রীয় গীতা সংঘ।
বুধবার সন্ধ্যায় পুজা উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন,আলীকদম সেনাবাহিনীর জোন কমান্ডার সৈকতুল মোনায়েম পিএসসি। এ সময় ১২ আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক নুরুল আবচার, লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো, শামীম শেখ, আলীকদম থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ খন্দকার তবিদুর রহমান, উপজেলা বিএনপি’র (একাংশ) সভাপতি মো. আমির হোসেন ও বিএনপির (অপর একাংশ) সভাপতি আবদুর রব অতিথি ছিলেন উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পূজাকে কেন্দ্র করে পুরনো কমিটি পরিবর্তন করে ইতিমধ্যে বান্দরবান জেলা প্রশাসককে প্রধান উপদেষ্টা করে কেন্দ্রীয় হরি মন্দির পূজা উদযাপন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে গোপন কান্তি চৌধুরীকে সভাপতি, বিধান দাশকে সাধারণ সম্পাদক ও অনুপ দাশকে অর্থ সম্পাদক করা হয়। এ কমিটির নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠিতব্য সবকটি পুজা মন্ডপ পরিচালনায়ও দায়িত্ব পালন করছেন। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন মণ্ডপ পরিদর্শন করেন এ কমিটির নেতারা।
বৃহস্পতিবার কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে মণ্ডপে, মণ্ডপে, আলোকসজ্জা, তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিদিন পূজা এবং সন্ধ্যায় আরতি, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, ঢাকের শব্দ, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের বাজনা আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলছে দুর্গাপূজা।
উপজেলার ৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা কেন্দ্রীয় দুর্গা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গোপন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক বিধান দাশ বলেন, প্রতি বছর আমরা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করে থাকি। আশা রাখি এবারও সকলে মিলেমিশে এ উৎসব শেষ করতে পারবো। এদিকে প্রতিবছরের ন্যয় এ বছরও পূজার জন্য লামা পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, সেনাবাহিনী, বিজিবি সহ ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান অর্থ সম্পাদক অনুপ দাশ। একই কথা জানালেন ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের গুলিস্তান বাজার, ইয়াংছা, পাগলির আগা, কমিউনিটি সেন্টার, আজিজনগর ইউনিয়নের তেলুনিয়া, মেরাখোলা ও পৌরসভার চম্পাতলী মন্ডপ কমিটির সদস্যরা। মেরাখোলা মণ্ডপ কমিটির সভাপতি সাগর চন্দ্র বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করছি। এবারে মেরাখোলা হরি মন্দির মণ্ডপে ২ লাখ টাকা খরচ হতে পারে।
এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামীম শেখ জানান, ২০২১ সালে মন্ডপে হামলার ঘটনা মাথায় রেখেই এবারে পূজা উপলক্ষে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মণ্ডপে পোষাকধারী ও সাদা পোষাকের পুলিশ, গোয়েন্টা সংস্থা, আনসার ও গ্রাম পুলিশ ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবকরা ২৪ ঘণ্টা কাজ কাজ করছেন। এছাড়া প্রতিটি মন্দিরে সি.সি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ গুলোর সাথে নিয়মিত আলোচনা চলছে। আশা রাখছি প্রতি বছরের মতো এবারও সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে এই ধর্মীয় উৎসব সম্পন্ন হবে।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরও দুর্গাপুজা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক উপজেলার প্রতিটি মণ্ডপে বরাদ্দের পাশাপাশি সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিবার্তা/আরমান/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]