সরাইলে দাঙ্গা আবার চাঙ্গা, গ্রেফতার ৪৬
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:০৯
সরাইলে দাঙ্গা আবার চাঙ্গা, গ্রেফতার ৪৬
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কখনো দুগোষ্ঠী, আবার গ্রামে গ্রামে বাড়ির সীমানা, গাড়ি ভাড়া, প্রেম বিষয়ে ও বিভিন্ন অজুহাতে, ঈদ বা মৌসুমি দাঙ্গা নামে বসতবাড়ি ঘর লুটতরাজ, বৃদ্ধা ও শিশু বাচ্চাসহ রক্ষা পায়নি এলাকায় নিরপরাধ লোকজন। আহত হয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নাটের গুরু এলাকার শকুনি মামারা থাকে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে।


এ দিকে বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪৫জনের নাম উল্লেখ করে মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে তিন- চারশত জনকে। ওইদিন ঘটনাস্থল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৪১ জনকে গ্রেফতার করেছে সরাইল থানা পুলিশ। এলাকার সুধীমহলের ভাষ্যমতে, এ দাঙ্গার জন্য সরাইলে ঐতিহ্য আর ইতিহাস কলঙ্কিত হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।


এ এলাকায় প্রায় অনেক দিন ধরে সংঘর্ষের কোন ঘটনা না ঘটলেও। ঈদের পরে শাহজাদাপুর ও গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকাল নয়টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।


এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পরমানন্দপুর গ্রামের বুইল্লার বাড়ির রশিদ মিয়া ও সোনা উল্লাহ গোষ্ঠীর মান্নান মিয়ার সাথে ধান শুকানোর খলা দখল ও মাটি কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে।


এসময় সংঘর্ষের নেতৃত্ব দেন সানা উল্লাহ গোষ্ঠীর কাঞ্চন মিয়া এবং বুইল্লার দলের পক্ষে জিয়াউল আমিন। পরে সানা উল্লাহর পক্ষে সংঘর্ষে যোগ দেয় খাঁ বাড়ি, কৈবতবাড়ির লোকজন। অপরদিকে বুইল্লার বাড়ির পক্ষে যোগ দেন বুদ্ধির গোষ্ঠী,বড়বাড়ি ও উজিবাড়ির লোকজন। পরমানন্দপুর গ্রাম দুইভাগে বিভক্ত হয়ে দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ে। আশপাশের গ্রাম থেকে আত্মীয় -স্বজনরা ঝগড়ায় গ্রাম্য অস্ত্র দিয়ে জোগান দেয়। এসময় উভয়পক্ষের নারী, পুরুষ ও পুলিশসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। এমন ভয়াবহতার খবর ছড়িয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেজবা উল আলম ভূইঁয়া।


সরাইল থানা পরিদর্শক (তদন্ত ) আ স ম আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে সরাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৩ রাউন্ড টিয়ারশেল ছুড়েন। সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। পুলিশ ৫জন আহত হয়। আহতদের সরাইল হাসপাতালে ও ভৈরব হাসপাতাল সহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি ও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। দাঙ্গাবাজদের দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করে সরাইল থানা পুলিশ।


দাঙ্গা এলাকায় এখন পুরুষশূন্য। নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন স্কুল শিক্ষক বলেন, এই ঝগড়ার পিছনে অরুয়াইল ও পাকশিমুলের কিছু রাঘব বোয়ালের হাত রয়েছে। তারা গ্রামে বসে বিভিন্ন কুট- কৌশল চালিয়ে মানুষের মাঝে এই ঝগড়ার সৃষ্টি করেন। তাদের সামান্য অর্থ লোভের জন্য এলাকায় দাঙ্গার মতো ঘটনা ঘটে।


এলাকার গুটি কয়েক জন রাঘব বোয়ালদের থামাতে পারলেই এলাকা শান্ত হয়ে যাবে। দাঙ্গা ফ্যাসাদ থাকলে তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন হাতে অর্থ লেনদেনে নিজেদের পকেট তাকে গরম। তিনি বলেন, নাটের গুরু এলাকার শকুনি মামারা থাকে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে।


ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সরাইল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, পরমানন্দপুর গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ৫জন পুলিশ আহত হয়েছে। আহত ৫ পুলিশ সদস্যকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।


ওসি জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। ৪১ জনকে আটক করা হয়েছে। ১৪৫ জনের নাম উল্লেখ্য করে ৩-৪ শতজন অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়েছে। দাঙ্গাবাজদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গ্রেফতার এড়াতে দাঙ্গাবাজরা এলাকা ছেড়েছে। এদিকে, সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুরের মাসুক মিয়া ও একি গ্রামের রিপন মিয়ার লোকজন গত শনিবার ১৩ এপ্রিল খাস জমির ধান কাটা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।


শনিবার সকাল সাড়ে দশটা এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত কামাল উদ্দিন (৬০) ওই উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের শাহজাদাপুর গ্রামের শাহাদাৎ আলীর ছেলে। ওইদিন শনিবার সকালে সরকারি খাস জমির ধান কাটাকে কেন্দ্র করে শাহজাদাপুর গ্রামের মাসুক মিয়ার সঙ্গে একি গ্রামের রিপন মিয়ার লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জেরে শাহজাদাপুর গ্রামের মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গ্রামে হামলা চালায়। হামলায় কামাল মিয়া আঘাত পেয়ে হাসপাতালে নিলে মারা যান। সরাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় সরাইল থানায় ১১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলাও ৪৫ জনকে আসামি করে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা করা হয়েছে।


সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মেজবা উল আলম ভূইঁয়া বিবার্তা প্রতিনিধিকে বলেন, এলাকার গোষ্ঠীগত দাঙ্গা বা ঝগড়া নির্মূল করতে এলাকার সালিশকারক এবং মুরুব্বিরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। এলাকার শান্তির লক্ষ্যে তাদেরকে আইনের প্রতি আরো শ্রদ্ধাশীল হতে বললেন তিনি।


বিবার্তা/আকঞ্জি/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com