লামায় তামাকের বিকল্প হতে পারে ইক্ষু ও সাথী ফসল চাষ
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:২১
লামায় তামাকের বিকল্প হতে পারে ইক্ষু ও সাথী ফসল চাষ
লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মাটি, পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর তামাকের বিকল্প হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ইক্ষু ও সাথী ফসল চাষের কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।


৩ এপ্রিল, বুধবার দুপুরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে বান্দরবানের লামা পৌরসভা এলাকার টিএন্ডটি পাড়ার কৃষক জাকির হোসেনের প্রদর্শনী প্লটে এ মাঠ দিবসের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সুগারক্রপ চাষাবাদ জোরদারকরণ প্রকল্প।


এতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌং, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামান ও উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন কাউছার উপস্থিত ছিলেন।


দিবসটির সার্বিক পরিচালনা করেন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সুপার ক্রপ চাষাবাদ জোরদার করণ প্রকল্প’ এর কনসালটেন্ট কৃষিবিদ ক্যছেন।


দিবসে আখ চাষের উপর অনূভুতি প্রকাশ করেন চাষী শাহ জাহান, সমীর, জকির হোসেন। তারা বলেন, টিএন্ডটি পাড়ায় ব্যাপক পানি সংকট থাকায় জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছেনা। তাই এখানে ইক্ষুসহ অন্যান্য ফসল চাষ করতে গিয়ে কৃষকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। তাই এ পাড়ায় সেচ ব্যবস্থা অতীব জরুরি। দিবসে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অংশগ্রহণ করেন ৬০ জন কৃষক-কৃষাণী।


অনুষ্ঠানে কৃষকদের উদ্দেশ্যে নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌং বলেন, মাটি, পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তামাক চাষের তুলনায় ইক্ষু চাষে খরচ ও পরিমশ্রম অনেক কম। আর লাভও দ্বিগুন। এছাড়া ইক্ষুর শিকড় থেকে পাতা পর্যন্ত সবই মানুষের উপকারে আসে। কিন্তু তামাক চাষের ফলে জমি উর্বরতা হারানোর পাশাপাশি তামাক চাষী নিজের, পরিবারের অন্য সদস্যদের ও পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে থাকে। তাই সবাইকে নিজের, পরিবেশের ও দেশের কথা চিন্তা করে তামাক চাষ পরিহার করে বিকল্প ইক্ষু চাষে এগিয়ে আসতে হবে।


এ বিষয়ে প্রকল্পের জুনিয়র কনসালটেন্ট বসন্ত কুমার তঞ্চঙ্গা জানায়, উপজেলায় ৭১ জন কৃষকের মাধ্যমে ৭১ বিঘা জমিতে এ বছর ইক্ষু চাষ করানো হয়। এছাড়া ৯০টি পরিবারের বসতবাড়ির আঙ্গিনায়ও ইক্ষু চাষ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে উপকারভোগী চাষিদেরকে প্রশিক্ষণ, সার, চারা ও কীটনাশক প্রদান করেছি। এতে চিবিয়ে খাওয়াসহ গুড় জাতের আখ রয়েছে।


এদিকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সুপার ক্রপ চাষাবাদ জোরদার করণ প্রকল্প’ এর কনসালটেন্ট কৃষিবিদ ক্যছেন জানান, ইক্ষু অর্থকরী ফসল। এক সময় দেশে ধানের ফলন বৃদ্ধির জন্য ইক্ষু চাষ কমে এসেছিল, কিন্তু বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় আখ চাষের কারণে এ চাষে কৃষকদের সুদিন ফিরে আসছে। অনেক কৃষকই বর্তমানে ইক্ষু চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।


তিনি আরও বলেন, বান্দরবানের প্রতিবছর গুড়ের চাহিদা ৩০ থেকে ৩২ টন কিন্তু এ জেলায় স্থানীয়ভাবে গুড় উৎপাদিত হয় শুধুমাত্র ২ থেকে ৪ টন। বাৎসরিক গুড়ের চাহিদা মেটানোর জন্য আরো ২৬ থেকে ২৮ টন প্রয়োজন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।


ক্যছেন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় তামাকের বিকল্প হিসেবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে ইক্ষু চাষ এবং পাহাড়ী ইক্ষু গুড় উৎপাদন শিল্প। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ইক্ষু জাত এবং ইক্ষু উৎপাদন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে হেক্টর প্রতি ১৫০ থেকে ১৭০টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এ থেকে প্রতিয়মান হয়, সম্প্রতি উদ্ভাবিত ইক্ষু জাত এবং ইক্ষু উৎপাদন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ইক্ষুর ফলন বৃদ্ধিসহ বান্দরবানের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব।


বিবার্তা/আরমান/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com