১২ হাত ঘরে দুই'শ শিক্ষার্থীর পাঠদান
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩, ১৪:৫৭
১২ হাত ঘরে দুই'শ শিক্ষার্থীর পাঠদান
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ভাঙা নড়বড়ে ১২ হাত দোচালা টিনের ঘর। দরজা, জানালা নেই। বেঞ্চ আছে মাত্র কয়েকটি সেগুলো নড়বড়ে। টিন সেটের ঘরে চারদিকে গাছ। সামন্য বাতাস এলেই ভেঙ্গে পড়বে যে কোন মুহুর্তে। রাস্তা ঘেঁষা এই ১২ হাত ঘরেই তিন রুমে চলছে ২০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান। এ চিত্র গাইবান্ধার ফুলছড়ির সদরের দক্ষিন বুড়াইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।


স্কুলটি ভবন নির্মানে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এলজিইডির অধীনে অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ন জনগোষ্ঠির সহনশীলতা বৃদ্ধি (প্রভাতী) প্রকল্পে মাধ্যমে কাজের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কাজটি পায় ঢাকার সোনারগাঁওয়ের শামীম আহম্মেদ মন্ডল নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
ঐ প্রতিষ্ঠান সাব চুক্তি করেন স্থানীয় ঠিকদার কাদের ভূইয়া আকাশের সাথে। স্কুলটির ভবনের কাজ কাজ শুরু হয় ২০ ডিসেম্বর ২০২১ সালে। ভবনটি কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরে ১৯ জুন। ১৫ মাসেও স্কুলের ভবনটির কাজ এখনও ৩০ ভাগ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। ডিজাইনের সাথে স্পেসিফিকেশন মিল না থাকার কারন দেখিয়ে দেড় মাস ভবনের কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদার। ভবনের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শংঙ্কিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাইবান্ধা শহর থেকে ফুলছড়ির সদরের প্রবেশ দ্বারের পার্শ্বেই দক্ষিন বুড়াইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাস্তার পাশে ১২ হাতে টিনের ঘরটিতে ৩টি রুম। বসে পড়ার মত কোন পরিবেশ নেই। দেখে মনেই হয় না এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যেই ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক। শিশু শ্রেনী শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলছে প্রধান শিক্ষকের বাড়ির রুমের বারান্দায়।


পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সুইটি আকতার বলেন, স্কুলে নতুন ভবনের কাজ শুরু সময় থেকে এই টিন সেটের ঘরে আমাদের ক্লাস হচ্ছে। ছোট তিনটি রুম। রুম গুলো চার হাত করে। দুই তিন বেঞ্চ বসে। স্যার ম্যাডাম ক্লাসে গেলে সবাই বেঞ্চে বসতে পারি না। অন্য রুম থেকে শব্দও আসে। পড়ার মনোযোগ হারিয়ে যায়।


আরেক শিক্ষার্থী রিফা বলেন, স্যারেরা বলছিলো আগামী জুনের মধ্য কাজ শেষ হবে। কাজ শুরু অনেক দিন হয়ে গেলেও এখনও মাটির নীচেই কাজ পড়ে আছে। রুম না থাকার কারনে আমাদের পড়াশোনা হচ্ছে না।


স্কুলের সহাকরি শিক্ষক শ্রী মমতা রানী বলেন, নতুন ভবনের জন্য স্কুলের জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। ভবনের কাজ অনেক আগে শুরু হলেও এখনও পিলার ছাড়া কিছুই হয়নি। ভবন না থাকার কারনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিয়ে চিন্তায় আছি। ছোট ৩টি রুম করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছি। রুমের কারনে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না।


শিক্ষক আব্দুস সোবাহান বলেন, ক্লাসে ঢুকেও ভয় হয়। রাস্তার সাথেই টিন সেট ঘরে পাঠদান হচ্ছে। রাস্তার দিয়ে প্রতিনিয়ত গাড়ি চলাচল করছে। কখন যে কোন শিক্ষার্থী দূর্ঘটনা ঘটায়। খুবই মানসিক চাপে আছি।


স্কুলের সভাপতি শ্রী অনিল কুমার বর্মন বলেন, স্কুলটির ভবনের জন্য আমরা জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। ১৫ মাস গেলেও কাজটি একটি দৃশ্যমান হয়নি। এখানে ঠিকাদারের না ইঞ্জিয়ারের গাফিলাতি কিছু বুঝতে পারছি না। কাজটি ২২ দিন থেকে বন্ধ করে রেখেছেন ঠিকাদার। এই বিষয়ে এলজিইডির নির্বাহীকে বার বার অবগত করার পরও কোন সূরাহা পাচ্ছি না।


এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক শামসুজোহা মিয়া প্রধান বলেন, স্কুলের ভবন হলে ক্লাস রুমের সংকট কাটবে। এ ভেবে আমরা স্কুলের জায়গা ছেড়ে দিয়ে পার্শ্বেই স্থানীয়দের সহযোগিতায় ও স্লিপের টাকা দিয়ে একটি দোচালা টিনে ঘর করি। শিক্ষার্থীদের যাতে পড়াশুনা ক্ষতি না হয়। ঠিকাদার শুরু থেকেই ধীর গতিতে কাজ করছে। তারপর বেশ কিছু দিন থেকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন গরমের সময় শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নীচেও পাঠদান করাতে পারছি। সামনে বর্ষা এলে কিভাবে পাঠদান দিব। সেই চিন্তায় মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থে আছি শিক্ষকরা।


এবিষয়ে ঠিকাদার কাদের ভুইয়া আকাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজের ডিজাইনের সাথে স্পেসিফিকেশন মিল না থাকার বিষয়টি আমি এলজিইডির নির্বাহীকে বহুবার বলছি। তিনি ঠিক করে দেননি। আমি লস করে কি কাজ করবো। এজন্য কাজটি করতে দেরি হচ্ছে। ডিজাইন ঠিক করে দিলে কাজটি দ্রুত শুরু করব।


গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী মো. ছাবিউল ইসলাম বলেন, কাজটি দ্রুত সময়ে শেষ করার জন্য আমি ঠিকাদারকে বলছি। তার পরও বাজারে জিনিস পত্রের দাম অনেক বেশী। এজন্য ঠিকাদার কাজটি দ্রুত করতে পারছে না। দেখি কাজটি যতদুর সমম্ভব দ্রুত শেষ করা যায়।


বিবার্তা/শামীম/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com