অভিমান নয়, ক্লান্তি থেকে দায়িত্ব ছেড়েছি : ছোটন
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ১৯:৪২
অভিমান নয়, ক্লান্তি থেকে দায়িত্ব ছেড়েছি : ছোটন
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

গোলাম রব্বানী ছোটন। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক আলোচিত নাম। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সফলতম এই কোচের হাত ধরে দেশের নারী ফুটবলের জাগরণ শুরু হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে দেশের নারী ফুটবলের সঙ্গে জড়িত তিনি। তার অধীনে এসেছে ফুটবলে নারীদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে সিনিয়র জাতীয় দল এবং বয়সভিত্তিক মিলিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাতটি শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, ছোটনের হাত ধরে এসেছে নারী ফুটবলের সবচেয়ে বড় সাফল্য ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়।



বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের জাগরণের এই রূপকার হঠাৎই প্রধান কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর এই লক্ষ্যে গত ২৮ মে রাতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। আর ৩১ মে থেকে তিনি সব দায়িত্ব ছেড়েছেন। 



গোলাম রব্বানী ছোটনের দায়িত্ব ছাড়ার এই ঘটনায় যেন বোমা ফেটেছে দেশের ফুটবল অঙ্গনে। মেয়েদের ফুটবলের সফল এই কোচের এভাবে প্রস্থান কিছুতেই মানতে পারছেন না ফুটবলপ্রেমিরা। তারা বলছেন, ছোটনকে নানা চাপে রেখে দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। 


নারী ফুটবল দলের সফল এই কারিগর সম্প্রতি তার দায়িত্ব ছাড়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিবার্তা২৪ডটনেটের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় কথা বলেছেন। তাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তা প্রতিবেদক মহিউদ্দিন রাসেল। 


বিবার্তা : দেশের নারী ফুটবল দলকে নানা  সাফল্য এনে দিয়েছেন, দেখিয়েছিলেন ভবিষ্যতের সম্ভাবনাও। ঠিক সেই সময়ে কী কারণে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?


ছোটন : দেখুন, আমাদের কাজটা এমনই।  দায়িত্বে আসলে কাজ করতে হয়। আবার একটা সময় ছেড়ে চলে যেতে হয়। এটাই চিরাচরিত নিয়ম। জীবনের এই কঠিন সত্যটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন অনেক আগেই-যেতে নাহি দিব হায়/তবু যেতে দিতে হয়/তবু চলে যায়'।


তবে একটা কথা বলতে পারি, যতদিন কাজ করেছি নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। জানি না, কতটুকু পেরেছি। এক্ষেত্রে আমাদের মেয়েদের কথা না বললেই নয়। আমার নির্দেশনা মোতাবেক তারা পরিবারসহ অনেক কিছু ত্যাগ করে কঠোর পরিশ্রম করেছে। ফলে সাফল্য ধরা দিয়েছে। 


বিবার্তা : নারীর ফুটবল দলের কঠিন সময়ে আপনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর আপনার ছোঁয়াতেই বদলে গিয়েছিল দেশের নারী ফুটবল। এখন তো নারী ফুটবলের সুসময় চলছিল। এই মুহূর্তে আপনার ছেড়ে যাওয়া কি অভিমান নাকি ভিন্ন কিছু? 


ছোটন : অভিমান বা ভিন্ন কিছু নয়। আসলেই আমি দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। সকাল থেকে রাত অবধি খাঁটুনি আমার নিত্যদিনের রুটিন ছিল। নিজের কথা বাদই দিলাম কিন্তু পরিবারকেও একেবারে সময় দিতে পারি না। তাই নিজের ক্লান্তি দূরীকরণ এবং পরিবারকে সময় দিতে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।


বিবার্তা : আপনি দায়িত্ব ছাড়ায় নারী ফুটবল দল তো আপাতত নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ল?


ছোটন : আমি দায়িত্ব ছেড়েছি কিন্তু নতুন কেউ তো অবশ্যই দায়িত্বে আসবে। আমি মেয়েদের নতুন কোচের অধীনে তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার উদাত্ত আহ্বান জানাই।


বিবার্তা : দায়িত্ব ছাড়ার পদত্যাগপত্র কখন জমা দিলেন?


ছোটন : গত ২৬ মে, শুক্রবার গণমাধ্যমে আমি দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেই। পরে ২৯ মে বাফুফেতে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র দেয়ার কথা বলছিলাম।  তবে এর একদিন আগে অর্থাৎ ২৮ মে রাতেই পদত্যাগপত্র প্রেরণ করেছি বাফুফে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার ও নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের বরাবর। 


বিবার্তা : একে একে ক্যাম্প ছাড়ছেন স্বপ্নাসহ কয়েকজন নারী ফুটবলাররা। এদিকে আপনিও ছেড়ে দিয়েছেন। এই বিষয়গুলো কি সম্পর্কযুক্ত?


ছোটন : দেখুন, তারা প্রাপ্তবয়স্কা। তাদের সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে। আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি। এগুলোর কোনটার সাথে কোনটার সম্পর্ক নেই।


বিবার্তা : ক্রীড়াঙ্গনে দেশি কোচরা নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ প্রায়ই আসে। এই বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?


ছোটন : এটা শুধু ফুটবল নয়, পুরো ক্রীড়াঙ্গনে দেশি কোচদের একটু ভিন্নভাবে দেখা হয়। তাদের সুযোগ সুবিধাও বিদেশি কোচদের থেকে অনেক কম। নীতি নির্ধারকরা হয়তো বিদেশিদের বেশি যোগ্য মনে করেন। এটা আসলে আমাদের মানসিক সংস্কৃতির বিষয়। তাছাড়া দেশিদের ক্ষেত্রে কুকথা শুনতেও সময় লাগে না হয়! এটা হয় না, ওটা হয় না—এমন অভিযোগ আসতেই থাকে।


বিবার্তা : কারো বিরুদ্ধে আপনার কোন অভিযোগ আছে কি-না?


ছোটন : না, আমার কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আমি শুধু নিজের কাজটাই ভালোভাবে করার চেষ্টা করি।


বিবার্তা : নতুন কোন ক্লাব কিংবা অন্যকিছুতে যোগদানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি?


ছোটন : এখন আমি ফেডারেশন ছেড়ে দিয়েছি। কাজেই এখন আমি ফ্রি। কেউ ডাকলে ভালো লাগলে সবকিছু মিললে জয়েন করবো। তবে আমি ক্লান্ত। এখন আপাতত রেস্টে থাকবো কিছুদিন। এরআগে ২০২২ সালের নভেম্বরে একটি ভালো ক্লাব প্রস্তাব দিলেও ফেডারেশন যোগদান করতে দেয়নি।


বিবার্তা : বিবার্তাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 


ছোটন : আপনাকেও ধন্যবাদ। বিবার্তার জন্য শুভকামনা রইলো। 


বিবার্তা/রাসেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com