বান্দরবানে
শত কোটি টাকার ক্ষতি এড়াতে ইটভাটা চালুর অনুমতি চান মালিকরা
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১:৫৫
শত কোটি টাকার ক্ষতি এড়াতে ইটভাটা চালুর অনুমতি চান মালিকরা
মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মশক্তি হল ইট ভাটার শ্রমিক। এ ধারাবাহিকতায় বান্দরবান পার্বত্য জেলার ৭টি উপজেলায় গড়ে উঠে ৭০টি ইটভাটা। এ জেলায় ইট শিল্প ছাড়া আর কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এ ইট ভাটায় কাজ করেছেন অর্ধ লক্ষাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালি শ্রমিক। শ্রম শক্তির পাশাপাশি এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে উন্নয়নও। ইটের বিকল্প এখনো কিছু গড়ে উঠেনি। এখানে তৈরি ইট ছাড়া সমতল জেলা থেকে ইট নিয়ে জেলায় উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।


অন্তবর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের সমস্ত অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। পরিবেশ বান্ধব ব্লক ইট তৈরি করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। পার্বত্য জেলাতে মোটেই ইট ভাটা করতে দেয়া হবে না।


এ ঘোষণার পর ইট ভাটা বন্ধ হলে তিন পার্বত্য জেলার সীমান্ত সড়ক নির্মাণসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে চলমান কয়েক হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন থমকে যাবে। এতে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ভেস্তে যাওয়ার পাশাপাশি উন্নয়ন বঞ্চিত হবে এ জেলা। শত কোটি টাকার ক্ষতি হবে ইটভাটা মালিকদের। শক্ত প্রভাব পড়বে পাহাড়ের উন্নয়নমূলক কাজে। বেকার হয়ে পড়বে এ পেশায় নিয়োজিত অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক। ভেঙে পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতি। তাই বিশেষ বিবেচনায় আগামী ৬ মাস পর্যন্ত জনস্বার্থে এ বান্দরবান জেলায় ইটভাটা চালুর রাখার ব্যবস্থা গ্রহণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন ঠিকাদার, নির্মাণ শ্রমিক, ইটভাটা শ্রমিক, পরিবহন সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সচেতন মহল।


২৫ অক্টোবর, শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময়ে এ দাবি তুলেন তারা।


জেলার জনপ্রতিনিধিদের মতে, শহর অঞ্চলের তুলনায় পার্বত্য এলাকায় বায়ুদূষণ যৌক্তিক পর্যায়ে আছে। তাছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে শিল্প কারখানা বা অন্য কোন ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলা। এখানে গড়ে উঠা ইট ভাটাগুলোই অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান ও অন্ন যোগানের একমাত্র ভরসাস্থল। এসব ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে দেশের বিরাজমান এ পরিস্থিতিতে গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়বে, বেড়ে যাবে চুরি ডাকাতি রাহাজানি।


তারা আরও বলেন, পার্বত্য জেলায় ঢালাওভাবে পাহাড় কাটা হয় এ ধারণা ঠিক নয়। পাহাড় কাটা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন প্রতিনিয়ত আইনি পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। বাস্তবে যে সকল ইট ভাটা পাহাড় কাটার সাথে জড়িত নয়, যারা পুকুর বা বাঁধে ভরাট হয়ে যাওয়া মাটি থেকে ইট তৈরির মাটি যোগান দিয়ে থাকেন, তাদেরকে নিয়মনীতি মেনে জনস্বার্থে ইটভাটা চালুর অনুমতি দেওযার ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টার মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টার সুদৃষ্টি কামনা করছি। প্রসঙ্গত, ২০২৫ সাল পর্য্যন্ত মাটির তৈরি ইট বানানোর সরকারি গেজেট রয়েছে। এছাড়াও মাননীয় উচ্চ আদালতের আদেশও আছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের আগে ইটভাটাগুলোর মালিকরা সরকারি বেসরকারী ঋণ নিয়ে প্রায় শত কোটি টাকা লগ্নি করেছেন। এসব ক্ষতি পোষাতে আগামী ছয় মাস সময় চেয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা বরাবরে আবেদনও করেন ভাটা মালিকরা। আগামী ছয় মাস পর তারা আর ইট ভাটা করবেন না বলে মন্তব্য করেন।


এ বিষয়ে লামা উপজেলার ইট ভাটা মালিক মো. খোরশেদ আজম বিবার্তাকে জানায়, ইট ভাটা স্থানান্তরের ব্যবস্থা নিতে হলে সময়ের প্রয়োজন আছে। ভ্যাট ট্যাক্স ও জমির উন্নয়ন করসহ প্রায় ১০ লাখ টাকা হারে সরকারী কোষাগারে জমা করেন প্রতি ভাটার মালিক। আগামী ৬ মাস ভাটা চালুর অনুমতি দিলে চলমান উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের সুযোসহ বড় অংকের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে ইটভাটার মালিকরা।


ইটভাটায় নিয়োজিত শ্রমিক আনোয়ার হোসেন, জমির উদ্দিন, মাহফুজ, দেলোয়ার হোসেন ও কামাল উদ্দিন বলেন, প্রতি বছরের মত এবছরও আমরা ভাটা মালিক থেকে আগাম টাকা করে নিয়ে পরিবারের জন্য খরচ করেছি। এখন ভাটা বন্ধ থাকলে দেনার দায়ে পালিয়ে বেড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তাই আমরা নিয়মনীতির মাধ্যমে ভাটা চালুর দাবি জানাই।


ইট ভাটা বন্ধের খবরের পর কয়েকটি ভাটায় মজুদ থাকা ইট দাম কয়েক হাজার টাকা বেড়ে গেছে বলে জানান প্রবীণ ঠিকাদার করিমুল মোস্তফা, ভুট্টু ও নুরুল আবচার সোহেলসহ অনেকে। তারা আরও জানান, এ জেলায় ইট ভাটা বন্ধ রাখা হলে সীমান্ত সড়কসহ সরকারি বেসরকারী বিভিন্ন বিভাগের চলমান রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ ও প্রক্রিয়াধীন টেন্ডারের কাজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ থমকে পড়বে। এতে পিছিয়ে পড়ে পার্বত্য এ জেলা।


এদিকে বান্দরবান জেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল কুদ্দুস ও লামা উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোক্তার আহমদ বিবার্তাকে বলেন, জেলার ইটভাটাগুলোতে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি মিলে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আমরা ইটভাটার জন্য মাটি সংগ্রহ করি পুকুর থেকে।


তারা আরও বলেন, সমতল জেলা থেকে পরিবহন করে ইট এনে বান্দরবান জেলায় উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব না। পাশ্ববর্তী জেলায় ইটভাটা করতে পারলে আমরা করতে পারবো কেন? আমরা আগামী ছয় মাসের জন্য ইটভাটা করার অনুমতি দেওয়ার জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টার নিকট বিনয়ের সহিত জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিবার্তা/আরমান/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com