বিদ্যালয়ের রাস্তা নেই, জমির আইল আর উঠানই ভরসা!
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪, ২৩:০৩
বিদ্যালয়ের রাস্তা নেই, জমির আইল আর উঠানই ভরসা!
খানসামা, দিনাজপুর থেকে জে.আর.জামান
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ৬৪নং ফরিদাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামো, শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও খেলার মাঠ থাকলেও নেই যাতায়াতের জন্য কোনো রাস্তা। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।


উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ফরিদাবাদ গ্রামে অবস্থিত বিদ্যালয়টির চারপাশে ফসলি জমি। বছরের অন্যান্য সময় জমির আইল ও মানুষের বাড়ির উঠান দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে।


বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী বীরগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন মূল সড়ক থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরত্বের আকাঁবাকাঁ পথ আর ফসলি জমির পরে ৬৪নং ফরিদাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারদিকেই আবাদি জমি। সেখানে ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করা হয়েছে।


বিদ্যালয়ের মূল ভবনে যেতে পার হতে হয় বাড়ির উঠান ও জমির আইল।



ওইদিন দুপুর ১২টার সময় বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ভুট্টা ক্ষেতের আইল ও বাঁশ ঝাড়ের পাশ দিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করছে। এ সময় ওই বিদ্যালয়ের বেশকিছু শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।


পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোখলেছুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে খুব অসুবিধা হয়। বর্ষাকালে আরো সমস্যা হয়, তখন কাঁদা-পানি পার হয়ে আসতে হয়।


একই শ্রেণির জ্যোতি সরকার বিবার্তাকে বলেন, রাস্তা না থাকায় ভুট্টা ক্ষেত ও বাঁশঝাড় দিয়ে স্কুলে আসতে ভয় লাগে। তখন শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের স্কুলে যেতে সহায়তা করে। তাই স্কুলের যাতায়াতের রাস্তা খুবই প্রয়োজন।


বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও সরকারীকরণ হয় ২০১৩ সালে। এখানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৯৬ জন। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক রয়েছেন ছয় জন।


বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বিদ্যালয়ের রাস্তার জন্য ওই এলাকার হরিপদ অধিকারী, সোলেমান আলী ও রবি সেনের দেওয়া জমি দিয়ে ১৯৯০ সালের দিকে চলাচলের রাস্তা তৈরি হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে দীর্ঘ ১৫ বছর পর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদ থেকে হরিপদ অধিকারী বাদ গেলে ও জমির সীমানা জটিলতার জেরে বিদ্যালয়ে যাওয়ার নির্ধারিত রাস্তা কেটে আবাদি জমিতে পরিণত করেন। ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা আইল দিয়ে যাতায়াত করছে।


তবে রাস্তা কেটে ফেলার বিষয়টি অস্বীকার করে হরিপদ অধিকারী বিবার্তাকে বলেন, এটি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি- তাই আমি ছেড়ে দিব না। এ বিষয়ে সাক্ষাতে কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন তিনি।


ওই এলাকার বাসিন্দা নূর ইসলাম, শামসুল আলম ও মোহেন সেন বিবার্তাকে বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরে চলাচলের জন্য রাস্তা থাকলেও পরে কেন জানি সেটা কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে স্কুলে যেতে বাচ্চাদের কষ্ট হচ্ছে। তাই স্কুলের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে রাস্তা নির্মাণের দাবি জানায় তারা।


বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলী বিবার্তাকে বলেন, রাস্তা না থাকায় শিক্ষার্থীসহ সবারই বিদ্যালয় আসতে খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়। এতে অভিভাবকরা স্কুলে শিক্ষার্থী পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তবুও আমরা শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিত ও শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখতে কাজ করছি। তবে সকলের সদিচ্ছায় রাস্তাটি নির্মাণ হলে শিক্ষার মান ভালো হবে।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বিবার্তাকে বলেন, ইতোপূর্বে একাধিকবার রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু জমি মালিকের অনিচ্ছায় সেটি সম্ভব হয়নি, ফলে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে চলাচল করে। দুর্ভোগ নিরসনে পুনরায় রাস্তা নির্মাণের জন্য ইউএনও মহোদয় ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।


স্কুলের রাস্তার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজ উদ্দিন বিবার্তাকে বলেন, ওই স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দুর্ভোগের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। শিক্ষার পরিবেশ যাতে ব্যাহত না হয়, দুর্ভোগ লাঘবে শিক্ষা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বদা সজাগ।


বিবার্তা/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com