বশেমুরবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মানববন্ধন
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩, ২২:৪৮
বশেমুরবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মানববন্ধন
বশেমুরবিপ্রবি থেকে অহনা মজুমদার
প্রিন্ট অ-অ+

অশ্রাব্য, অকথ্য, উস্কানিমূলক কথা বলার অভিযোগে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. মোবারক হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।


সোমবার (২৯ মে, ২০২৩) বেলা ১১টায় একাডেমিক ভবনের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেন প্রায় শতাধিক শিক্ষক। মানববন্ধনে শিক্ষকবৃন্দ কোষাধ্যক্ষের অশ্রাব্য কথা বলে অনুতপ্ত না হয়ে উল্টো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ায় তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন।


মানববন্ধনে আইন অনুষদের ডিন ড. মো. রাজিউর রহমান বলেন, ’আমরা কিছুদিন আগে একটি মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে ট্রেজারার তার বেতন-বোনাস সংক্রান্ত জটিলতার জন্য ভিসি স্যারের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্সের একজন কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি দেন- আমরা তার স্বাক্ষী। এমন কী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কিছু করতে পারবেন না বলেও ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও যে আচরণ করেছেন তা গ্রহনযোগ্য নয়। তার এই অশ্রাব্য কথায় তিনি অনুতপ্ত নন বরং আমাদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। তাই আমরা তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করলাম।’


শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা বলেন, ‘প্রায় ২০-২৫ জন শিক্ষক তাদের প্রমোশন ও আপগ্রেডেশন আটকে আছে গত  প্রায় ৪ বছর ধরে। তাদের বিভিন্ন ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য যে ডিউ ডেট আছে নিয়ম অনুসারে তা দেওয়া যায় কি না- এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছিল। ওইসময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যাপক ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন অধ্যাপক বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন। তাদের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন তার সরাসরি ছাত্র। তার ছাত্রের সামনেই সে বারবার চিৎকার করে উঠছিলেন এবং উপাচার্য মহোদয়ও তাকে বেশ কয়েকবার থামানোর চেষ্টা করেছেন। এসময় তিনি ঢাকা যাবেন বলে গাড়ি দাবি করেন। প্লানিংয়ের এক কর্মকর্তা তাকে জানান তার গাড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। তখন তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেন।’


জাকিয়া সুলতানা মুক্তা প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, ‘তার গাড়ির সঙ্গে শিক্ষকদের কী সংযোগ আছে? এসময় বেশ কয়েকজন শিক্ষক তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও তিনি শান্ত হননি। আমরা তখনও চুপ ছিলাম। আমি তাকে বলেছিলাম ক্ষমাও চাইতে হবে না, অন্তত ওই ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করে একটা মেইল করতে। কিন্তু তিনি আমার মুখের উপর ফোন কেটে দিয়েছেন।’


মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. সালেহ আহমেদ বলেন, ‘তিনি যখন এখানে নিয়োগ পেলেন- আমরা খুবই আনন্দিত হয়েছি, আমাদের অভিভাবক হিসাবে তিনি আমাদের নতুন পথ দেখাবেন। কিন্তু আমরা ধীরে ধীরে উদঘাটন করেছি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জবাসীকে  তিনি গণ্য করেন না।’


তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেজারার এমন কথা বলেছেন যা অশ্রাব্য- যেগুলো আমরা মুখে আনতে পারবো না। তারপরও আমরা ধরে নিয়েছি তিনি যা বলেছেন হিট অফ দ্যা মোমেন্টে। তাই আমরা তাকে সময় দিয়েছি এর মধ্যে হয়তোবা তিনি তার ভুল স্বীকার করবেন। যখন তিনি ভুল স্বীকার করলেন না, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেই আমরা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি জমা দিব। তাকে সময় বেধে দিব, এর মধ্যে মীমাংসা হয়ে গেলে তা নিজেদের ভিতর সীমাবদ্ধ রাখব। দেখা গেল, তিনি ২৭ তারিখ পর্যন্ত আমাদের সাথে কোনো রকম কথা বললেন না। পরবর্তী মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, এটি যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপার তাই একটি সাধারণ সভার আয়োজন করি। শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করে  সিদ্ধান্ত নেই কোষাধ্যক্ষকে অবাঞ্চিত ঘোষণার। সেই সাথে আমারা তার কোন একাডেমিক ও প্রশাসনিক মিটিংয়ে অংশগ্রহন করব না ও তার প্রতিনিধিত্বে কোন মিটিংয়ে বসবো না।’


এ সকল বিষয়ে জানতে চাইলে কোষাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সবথেকে বেশি করাপশন হয়। কিছু শিক্ষক অবৈধভাবে প্রমোশন পেতে চেয়েছিলেন। আমি তার বিরোধিতা করি- কারণ আমি মুক্তিযোদ্ধা। অন্যায় টলারেট করতে পারি না। আর এই বাঁধা দেওয়াতে আমার বিরুদ্ধে এটা করা হয়েছে।’


তিনি আরও বলেন, ‘মিথ্যা কথা বলা, অবৈধ কাজ করা আমি পছন্দ করি না। আমি একজন ট্রেজারার, আমার হাত দিয়েই সব টাকাপয়সা যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠিয়েছেন এখানে চুরি-চামারি হয় কীনা দেখার জন্য। কেন আমি রাগ করেছি, তা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনে নিন। আমি তো পাগল না, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি চুরি-চামারির বিষয়ে দেখতে গেলে এদের অসুবিধা হচ্ছে। তাই আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছে।’ 


উল্লেখ্য, গত ২৪ ও ২৭ মে, ২০২৩ তারিখের মধ্যে বশেমুরবিপ্রবি ট্রেজারারকে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।


বিবার্তা/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com