চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফলে অসঙ্গতি, ৩ দাবি না মানলে আবার মাঠে নামবেন চাকরিপ্রার্থীরা
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৩, ১০:৩৬
চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফলে অসঙ্গতি, ৩ দাবি না মানলে আবার মাঠে নামবেন চাকরিপ্রার্থীরা
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

মেরিট পজিশন ভালো অবস্থানে থেকেও বাদ পড়া, মেরিটে পিছিয়ে থেকেও সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া, আবার কারো রোল ইনডেক্সধারীদের রোলের সাথে মিল থাকায় ব্লক হয়ে বাদ পড়া, আবার কেউ কেউ ৩৫ বছর ঊর্ধ্ব হয়ে গেলেও সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়াসহ চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফল নিয়ে নানা অভিযোগ চাকরি প্রত্যাশীদের।



এই নিয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষসহ (এনটিআরসিএ) বিভিন্ন জায়গায় ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থীরা দফায় দফায় স্মারকলিপি দিলেও তাতেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।



পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ৩ দফা দাবিতে রাজপথে নামে। কিন্তু সেখানে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ চাকরিপ্রত্যাশীদের। তারা বলছেন,  ৩ দাবি পূরণে এনটিআরসিএর সামনে তারা মানববন্ধন করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে তারা দাবি আদায়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন। আর কর্তৃপক্ষও তাদের দাবি পূরণে আশ্বাস দিয়েছে। তবে এই দাবি আদায়ে কালক্ষেপণ করলে আবারো রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।


রবিবার (৭ মে) সকালে "৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ভুক্তভোগী ও মেধাক্রমের ভিত্তিতে সুপারিশ প্রত্যাশী শিক্ষক ফোরাম" সংগঠনের ব্যানারে এনটিআরসিএর সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে চাকরিপ্রত্যাশীরা। পরে এদিন সকাল  দশটার দিকে পুলিশ এসে তাদের বাধা দেয় এবং প্রোগ্রামের ব্যানার কেড়ে নেয়। পরবর্তীতে পুলিশের মধ্যস্থতায় এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন আন্দোলনকারীদের ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।


এ বিষয়ে আন্দোলনকারী সংগঠনের আহ্বায়ক মো. আনিছুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, ওইদিন আমরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেছিলাম। কিন্তু এরপরেও আমাদের বাধা দেওয়া হলো। পরে আমরা এনটিআরসিএর চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাদের সমস্যা ও মানববন্ধনের কারণ সম্পর্কে জানতে চান। আমরা রোল ব্লক জনিত ইস্যু ও মেধায় এগিয়ে থেকেও সুপারিশ বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি এবং আমাদের দাবিসমূহ তুলে ধরি।  তিনি আমাদের সমস্যাগুলো শোনেন এবং অতি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। 


তিনি বলেন, এরআগে আমরা আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য এনটিআরসিএ বরাবর স্বতন্ত্রভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম এবং পাশাপাশি সম্মিলিতভাবে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। পরে এনটিআরসি'র পাশাপাশি আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি দেই। কিন্তু আমরা আমাদের সমস্যা সমাধানের কোন আশ্বাস না পেয়ে মানববন্ধন ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি করতে বাধ্য হই। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মহোদয়ের নিকট আমাদের আকুল আবেদন অতি দ্রুত আমাদের সমস্যার সমাধান করে বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিন।


গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফলের অসঙ্গতি তুলে ধরে তিনি আরো বলেন,চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত ফলাফল তৈরির জন্য যদি নাম, রোল, বিভাগ, ব্যাচ সঠিকভাবে দেওয়া হতো তাহলে আমাদের রোল ব্লকজনিত এই সমস্যায় পড়তো না। দায়িত্বে অবহেলার কারণে গুরুতর এই ভুল হয়েছে। আর তাতেই ভুক্তভোগী হয়েছি আমরা। মেরিটে এগিয়ে থেকেও কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে সুপারিশপ্রাপ্ত না হওয়া কতটা কষ্টের সেটা কেবল ভুক্তভোগীরাই বুঝতেই পারবে।


এই চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, আমাদের হিসাব মতে ২০০ এর অধিক ভুক্তভোগী রয়েছে। আর কর্তৃপক্ষ বলছে,১২৫ জন আছে। তাদের কথাই যদি ধরি তাহলে এই সংখ্যক প্রার্থীর তথ্য যাচাই বাছাই করে  অতিদ্রুত এই কাজটি করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে তাদের সদিচ্ছা থাকতে হবে। আমরা অবিলম্বে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ভুক্তভোগীদের তথ্য যাছাই করে পুনরায় ফল প্রকাশের জোর দাবি জানাই। অন্যথায়, আমরা আবার রাজপথে নামবো।


আন্দোলনকারী সংগঠনের আরেক কর্ণধার ১২তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মো: মামুন অর রশিদ বিবার্তাকে বলেন,৩ দফা দাবিতে আমাদের। সেগুলো হলো- ১. প্রার্থীদের মেধাক্রম,পছন্দক্রম ও গণবিজ্ঞপ্তির ৭নং নীতিমালা অনুযায়ী সুপারিশ করতে হবে। ২. প্রকাশিত ত্রুটিপূর্ণ প্রাথমিক ফলাফল বাতিল করতে হবে, সেই সাথে এই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সঠিক কারণ উদঘাটন করতে হবে। ৩. পুনরায় নির্ভুল ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।


তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আমাদের দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছেন যেহেতু এই মাসে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের ভেরিফিকেশন চলছে সেহেতু আমাদের বিষয়টিও এই মাসের মধ্যে সুরাহা করা হবে। তাই আমরা আপাতত এই মাস পর্যন্ত তাদের আশ্বাস মোতাবেক অপেক্ষা করবো। কিন্তু যদি এই মাসের মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হয়, তাহলে আমরা আগামী মাস থেকে কঠোর আন্দোলনে যাবো।


নিজের সুপারিশ বঞ্চিত হওয়ার বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিবন্ধন পরীক্ষায় জাতীয় মেরিট লিস্টে ব্যাচ আলাদা হলেও রোল একই হতে পারে। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে- আমি ১২ তম ব্যাচের, এদিকে ১৪ তম ব্যাচের একজন রয়েছে তার রোলও আমার সেইম রোল। আমি খোঁজ করে জেনেছি, আমার সেইম রোলধারী একজন নারী। তিনি দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ডিগ্রি  কলেজে চান্স পেয়েছেন। পরে তিনি এই কলেজে জয়েন করেছেন। তার ইনডেক্স নাম্বারও আছে। সেটা আমি বের করেছি। যেহেতু তিনি ইনডেক্সধারী, সেহেতু এবার এনটিআরসিএ এর নিয়ম অনুযায়ী ইনডেক্সধারী এবং ৩৫ ঊর্ধ্বদের আবেদনের সুযোগ নেই। আর এই নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে এনটিআরসিএ ইনডেক্সধারীদের রোলগুলো সংগ্রহ করে টেলিটককে দিয়ে ব্লক করতে বলেছেন, যাতে তারা আবেদন না করতে পারেন। এখন আমার সেইম রোলধারীর ইনডেক্স থাকায় উনার রোল ব্লক করার কারণে দুর্ভাগ্যক্রমে আমার রোলটাও ব্লক হয়ে গেছে। এজন্য আমি মেরিট লিস্টে এগিয়ে থাকার পরেও সুপারিশপ্রাপ্ত হইনি।


এই চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, আমি ১২তম নিবন্ধনে কলেজ পর্যায়ে রসায়ন বিষয়ের প্রভাষক পদে নিবন্ধিত। আমার মেরিট পজিশনও ভালো ছিল। আমার পরে ১৩ জনকে সিলেক্ট করা হয়েছে কিন্তু রোল ব্লক থাকায় আমাকে সিলেক্ট করা হয়নি।


১২ মার্চ, রবিবার রাতে শিক্ষক নিয়োগে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশের পর থেকে ফলাফলের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে অভিযোগ করতে থাকেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব রয়েছেন তারা।কারো মেরিট পজিশন ভালো অবস্থানে থেকেও বাদ পড়া, এদিকে মেরিটে পিছিয়ে থাকা অনেকের সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া, আবার কারো রোল ইনডেক্সধারীদের রোলের সাথে মিল থাকায় ব্লক হয়ে বাদ পড়া, আবার কেউ কেউ ৩৫ বছর ঊর্ধ্ব হয়ে গেলেও সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়াসহ নানা অভিযোগ চাকরি প্রত্যাশীদের।


এদিকে ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে রোল ব্লক জনিত সমস্যার কারণে সুপারিশ বঞ্চিত প্রার্থীদের মেধাক্রমের ভিত্তিতে দ্রুত সুপারিশ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ২৩ জন প্রার্থী গত ১৯ মার্চ বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।এরআগেও ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফলে অসঙ্গতির অভিযোগ এনে গত ১৫ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে "৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ভুক্তভোগী ও মেধাক্রমের ভিত্তিতে সুপারিশ প্রত্যাশী শিক্ষক ফোরাম"। এসব স্মারকলিপির পরেও এই বিষয়ের কোন সুরাহা না হওয়ায় গত ৭ মে এনটিআরসিএর সামনে মানববন্ধন করে ভুক্তভোগীরা। পরে তাদের এই বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়।


চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফল নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের বিষয়ে অবগত করে মন্তব্য জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর উপপরিচালক (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) মো: শাহীন আলম চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, কারো কিছু নিয়ে অভিযোগ থাকলে তারা আবেদন করবেন। আর ওদের ( আন্দোলনকারীদের) বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফলে নানা অসঙ্গতি নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে অবগত করে এই বিষয়ে পরিকল্পনা জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ এর (এনটিআরসিএ) সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, আমরা যা বলার বলে দিয়েছি। ওরা ( আন্দোলনকারী) কিছু আছে ইনডেক্সধারী। কিন্তু আমরা তো এবার ইনডেক্সধারীদের সুযোগ দিচ্ছি না। এখন ইনডেক্সধারীর যে নাম্বার, সেই একই নাম্বার অনেকের আছে। টেলিটক সফটওয়্যার এক্সেস করতে পারে নাই, একই রোল নম্বরের সবগুলো আটকে গেছে আর কি। ফলে এই ঘটনায় যারা যারা যোগ্য আবেদনকারী তাদের মধ্যে অনেকে আটকে গেছে। পরে তারা এই বিষয়ে আবেদন করেছে। আর সেটার পরীক্ষা -নিরীক্ষা চলছে। এটার সমাধান হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।


প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান বিবার্তাকে বলেন, চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করেছে টেলিটক। অটোমেটিক পদ্ধতিতে এই কাজ করা হয়েছে।  এক্ষেত্রে হয়তো টেকনিক্যাল কিছু ভুল থাকতে পারে।


তিনি বলেন, যারা জাতীয় মেধাতালিকার পাশাপাশি বিষয় ভিত্তিক মেধাতালিকায় এগিয়ে থেকেও নিয়োগের সুপারিশ পাননি; তাদের আবেদনগুলো দেখা হচ্ছে। মোটকথা,  অভিযোগ সঠিক হলে আমরা সেটি সংশোধন করে দেবো।


বিবার্তা/রাসেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com