সাংবাদিক নিয়োগে প্রতারণার ফাঁদ
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫১
সাংবাদিক নিয়োগে প্রতারণার ফাঁদ
মাসুদ
প্রিন্ট অ-অ+

যে জায়গা মানুষের আস্থার, যেখানে মিলায় সত্যের মুক্তি, যারা দেখায় আলোর সন্ধান- সেই পথই যদি হয় ফাঁদ তাহলে সত্যের আলো ছড়াবে কে?


ভারতের ‘কলকাতা এক্সপ্রেস’ নামে একটি গণমাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতে এ নামে কোন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান নেই। এ ঘটনার ভূক্তভোগী ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণমাধ্যমের নামে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আর না হলে গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে।



জানা গেছে, ভারতের নদিয়া থেকে প্রকাশিত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গ্রুপের মালিকানাধীন তথাকথিত ‘কলকাতা এক্সপ্রেস’ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ‌'সংবাদকর্মী প্রয়োজন' এমন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কলকাতা এক্সপ্রেস-এর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিজ্ঞাপণ দিয়ে বাংলাদেশে চলছে প্রতারণা ও লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য।



বাংলাদেশের স্বনামধন্য সাংবাদিক রেদোয়ান আহমেদ। যিনি দ্যা গার্ডিয়ান, ইউনাইটেড ন্যাশন ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাথে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে আসছেন। অভিযোগ উঠেছে, কথিত ‘কলকাতা এক্সপ্রেস’ রেদোয়ান আহমেদের নাম ব্যুরো প্রধান (বাংলাদেশ) হিসেবে ব্যবহার করে নিয়োগপত্র সংগ্রহ, ডিএইচএল কুরিয়ার সার্ভিস ফি ও সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ (ভারতের নদিয়া প্রধান কার্যালয়) বাবদ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।


এ বিষয়ে জানতে বিবার্তার পক্ষ থেকে রেদোয়ান আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কে বা কারা তার নাম ব্যবহার করে এমন কাজ করছে- তিনি একদমই বিষয়টা জানতেন না। ইতোমধ্যে তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক-এ এক বার্তায় বিষয়টি সকলের কাছে পরিস্কার করেছেন বলেও জানান।


সমকালের হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক এম এ আহমেদ আজাদ। তিনি নিজেও কথিত কলকাতা এক্সপ্রেস গণমাধ্যমের প্রতারণার শিকার। এই সাংবাদিক বিবার্তাকে জানান, 'এক্সপ্রেস গ্রুপ’-এর মালিকানাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ভেবে কলকাতা এক্সপ্রেসের সাথে কাজ শুরু করি। কিন্তু কিছুদিন পর তথ্যপ্রমাণে গরমিল পেলে তথাকথিত বাংলাদেশি ব্যুরো প্রধান রেদোয়ান আহমেদকে প্রশ্ন করি। এ ঘটনার পর আমাকে 'কলকাতা এক্সপ্রেস’-এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে রিমুভ করে আমাকে চাঁদাবাজ উল্লেখ করে বিভিন্ন ভূঁইফোড় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন করা হয়। সেই প্রতিবেদনে বলা হয় আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলাও করা হয়েছে। এছাড়া বলা হয় কলকাতা এক্সপ্রেস থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।


তিনি বলেন, আমি কলকাতা এক্সপ্রেস, রেদোয়ান আহমেদ নামধারী (বাংলাদেশের ব্যুরো প্রধান) এবং ওই মামলার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি। আমার নামে কোন মামলাই হয়নি। এরা একটি চক্র, যারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করে আসছে।


তিনি আরো বলেন, আমি নবীগঞ্জ থানায় এ বিষয়ে একটা জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করেছি এবং হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর অনিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকায় ও ফেসবুকে মানহানি পোস্ট সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছি।


এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা সাইবার টিমের প্রধান মাহমুদুর রহমান সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তিনি বিবার্তাকে বলেন, কলকাতা এক্সপ্রেসের ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি।


কলকাতা এক্সপ্রেসের প্রতারণার শিকার হয়েছেন সুনামগঞ্জের সংবাদকর্মী অং রাজু ভূঁইয়া বিবার্তাকে বলেন, আমি ‘কলকাতা এক্সপ্রেস’ এর লোভনীয় প্রস্তাব প্রতি মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা বেতন, ভারতে প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতায় আগ্রহী হয়ে ১৫০০ টাকা বিকাশে প্রেরণ করি। কিন্তু কোন নিয়োগপত্র পাইনি। গণমাধ্যমের মাধ্যমে আলো ছড়িয়ে সমাজের অন্ধকার দূর করা হয়। অথচ আজ সেই মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে হরহামেশা প্রতারণার ব্যবসা হচ্ছে, এটা অত্যন্ত দুংখজনক।


যুমা প্রেসের ফটোসাংবাদিক সিলেটের মো. রাফায়েত হক খান। তিনিও প্রতারণার শিকার হয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে মেইল করলে তারা জানায়, ‘কলকাতা এক্সপ্রেস’ নামে এমন কোন শাখা তাদের নেই।


এ বিষয়ে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল আরিফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সাইবার ক্রাইমে ২০১৮ এর ২২, ২৩ ও ২৪ ধারায় অধীনে বিচার হতে পারে। যার শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা একইসাথে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড হতে পারে।


তিনি আরো বলেন, এছাড়া প্রতারণার উদ্দেশ্যে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি ৪২০/৪৬৮ প্রতারণা ও জালিয়াতির বিচারে সাত বছর শাস্তি ও জরিমানা হতে পারে।


জানতে চাইলে ওআইসি টুডে (কুয়ালালামপুর) এর মিডিয়া প্রধান ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞ সাঈদ হক বিবার্তাকে বলেন, সংবাদকর্মী নিয়োগে টাকা হাতিয়ে নেয়া আর সর্বোপরি নামে-বেনামে অনলাইন সংবাদমাধ্যম হলে সংবাদমাধ্যমের ওপর মানুষের বিশ্বাস কমে যাবে। সংবাদকর্মী হতে আগ্রহীর সংখ্যাও কমে যাবে।


তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উচিত তদন্ত করে এদের বিচারের আওতায় আনা। তাহলেই গণমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থা, বিশ্বাস থাকবে।


বিবার্তা/মাসুদ/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com