কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ সকল পর্যটন স্পটে ব্যাপকভাবে বেড়েছে পর্যটক
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:০২
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ সকল পর্যটন স্পটে ব্যাপকভাবে বেড়েছে পর্যটক
তাফহীমুল আনাম
প্রিন্ট অ-অ+

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ সকল পর্যটন স্পটে ব্যাপকভাবে বেড়েছে দেশীয় পর্যটক। বিদেশি পর্যটকের আশানুরূপ দেখা মিলছে না অনেকদিন ধরে।


সমুদ্র সৈকত, সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়ায় পর্যটকের আকর্ষণ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। আর বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়াতে কি করা প্রয়োজন তা নিয়ে খতিয়ে দেখছেন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গবেষণা সেল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা।


গত ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামে পর্যটন বিষয়ক প্রকাশনা বাংলাদেশ মনিটর আয়োজিত তিন দিনব্যাপী পর্যটন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন, কুতুবদিয়া-মহেশখালীর সৌন্দর্য গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রবালসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে পর্যটন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রবাল দ্বীপও রাখতে হবে, সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্যও রাখতে হবে এবং পর্যটকও যেতে হবে। এ দুটোর সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। ‘মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া অনেক সুন্দর। সেখানেও পর্যটক যেতে হবে। কুতুবদিয়া দ্বীপ ভারতের গোয়ার মত মনে হয়।’


পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, কক্সবাজারের সাবরাং, নাফ ও সোনাদিয়াতে তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলো সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি বিমানবন্দরকে আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকার কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে বহুমূখী পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। কক্সবাজারের আকর্ষনীয় পর্যটন স্পটের বিষয়টি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। ফলে ক্রমবর্ধমান পর্যটন শিল্প আরো এগিয়ে যাবে। সরকার পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে।


প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের অধিকাংশ মানুষের রোজগার পর্যটন শিল্প নির্ভর। সরকারি ছুটি কিংবা বিশেষ কয়েকটি দিনে পর্যটকের সমাগম তেমন হয় না। পর্যটক থাকলে সবকিছু চাঙ্গা থাকে আর পর্যটক না থাকলে সবকিছু ঝিমিয়ে পড়ে। এছাড়া বিদেশি পর্যটক তেমন একটা নেই।


এর কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয় কক্সবাজারে বিদেশিদের জন্য আলাদা জোন সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দুইটি পয়েন্ট, সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়াতে বিদেশি পর্যটক জোন করার সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।


কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ জানিয়েছেন, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প কক্সবাজারের প্রাণ। পর্যটক না থাকলে এর আর্থিক প্রভাব পড়ে তৃণমুল পর্যায় পর্যন্ত। সরকার বিদেশি পর্যটকের আকর্ষণ বাড়াতে পরিকল্পনা নেওয়াটা এই শিল্পের জন্য খুবই ইতিবাচক। বিভিন্ন পর্যটন দ্বীপে অবাধে আসা যাওয়ার পথ সহজ করলে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে। আমরা চাই, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।


কক্সবাজার সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ট্যুরিষ্ট ডিপার্টমেন্ট প্রধান অধ্যাপক মঈনুল হাসান পলাশ বিবার্তাকে বলেন,বছরের অধিকাংশ সময় কক্সবাজারে সন্তোষজনক পর্যটক থাকে।তবে তা দেশী পর্যটক থাকে। পর্যটন মন্ত্রণালয় যে পরিকল্পনা গ্রহন করেছে তা যথাযত বাস্তবায়ন হলে পর্যটন শিল্প আরো চাঙ্গা হবে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যাপক প্রচারণার প্রয়োজন আছে। নেতিবাচক প্রচারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।


চলতি পর্যটক মৌসুমে দেশী পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত কক্সবাজার। এ কারণে খোশমেজাজে আছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। গত ২৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সরস্বতী পূজা থাকায় দেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকে ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে। তার উপর শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটি। সব মিলিয়ে তিন দিনের ছুটিতে জমজমাট কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে সকল পর্যটন স্পট। কক্সবাজার হোটেল অফিসার্স ওনার্স এসোশিসেনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ জানান, পাঁচশতাধিক হোটেলের সব ক’টি ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং। সব মিলিয়ে দেড় লক্ষাধিক পর্যটক এখন কক্সবাজারে অবস্থান করছেন।


কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মোটেল এসোশিসনের সভাপতি মুকিমখাঁন জানান, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি ভালো, তাই পর্যটকে মুখরিত এখন কক্সবাজার। সেবারমান ও বেড়েছে সবকটি হোটেলে। সৌদিয়া চেয়ার কোচ( বাস) এর কাউন্টার ম্যানেজার আবু বক্কর জানান, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম টু ঢাকা মহাসড়কে শতাধিক কোম্পানির বিলাসবহুল গাড়ি চলাচল করছে, কোন গাড়িতে কোন সিট খালি নেই। প্রতিদিন লক্ষাধিক পর্যটক ঢুকছে কক্সবাজারে। তাছাড়া অসংখ্য পিকনিকের গাড়ি ও আসছে কক্সবাজারে।


গত ২৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরিশালের চাকুরিজীবী, আইনুন নিশাদ, এসেছেন স্বপরিবারে কক্সবাজার। উঠেছেন সী- ওয়ার্ল্ড হোটেলে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়া মহেশখালী আদিনাথ, সেন্টমার্টিন, ইনানী ও ঘুমধুমের কুমির প্রজনন কেন্দ্র দেখবেন তারা। এসব দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য ভ্রমন গাইড পড়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোথায় কিভাবে যাবেন। এ জন্য তিনদিন ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করে রবিবার ফিরবেন নিজ কর্মস্থলে। তারা কক্সবাজার ট্যুরিষ্ট পুলিশের কর্মতৎপরতার উপর খুবই সন্তুষ্ট। এ পর্যটক টিমে রয়েছে পাঁচজন। তারা খুবই আশাবাদী যে, আগামী দিনে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেশী বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা আরো বৃদ্ধি পাবে।


ঢাকার যাত্রাবাড়ির দীলিপ শর্মার সাথে কথা হয় সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। পরিবারিক পিকনিকে এসেছেন কক্সবাজারে। আসার সময় নিজস্ব দামী গাড়িটি ও সংঘে এনেছেন। তাই দ্রুত সময়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখেছেন। গেছেন চকরিয়ার ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে। উপভোগ করেছেন নান্দনিক সৌন্দর্য ও দেখেছেন জীবজন্তুর উম্মুক্ত পদচারণা। খাবারের দাম নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ থাকলে ও সামগ্রিক বিষয়ে তারা খুবই সন্তোষ করেছেন।


কক্সবাজার ট্যুরিষ্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, কক্সবাজারে পর্যটকদের আনাগোনায় সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ। যেখানে অভিযোগ, সেখানেই চলছে অভিযান। চলতি পর্যটন মৌসুমে বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি কক্সবাজারে।


বিবার্তা/তাফহীমুল/এমএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com