এক সপ্তাহে ৪৯ হাজার কোটি টাকা উধাও, বিনিয়োগকারীদের আহাজারি
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪, ১৫:২৭
এক সপ্তাহে ৪৯ হাজার কোটি টাকা উধাও, বিনিয়োগকারীদের আহাজারি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

গত এক মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে চলছে ধারাবাহিক পতন। এই সময়ের মধ্যে মাত্র ৩ দিন বাজার ইতিবাচক থাকতে দেখা গেছে। বাকি সময় ধরে চলছে উপর্যুপরি পতন। কোনো কোনো সময়ে দেখা গেছে আতঙ্ক ছড়ানো পতনের ঝাপটা।


ধারাবাহিক বড় দরপতনের কবলে পড়ে গত এক সপ্তাহে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বিনিয়োগকারীদের ৪৯ হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বড় পতন হয়েছে মূল্যসূচকের, দেখা দিয়েছে লেনদেন খরাও।


বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক মাসের বেশি ধরে চলা পতনকে আজ ছাড়িয়ে গেছে। আজ শেয়ারাবাজারে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক আজ একদিনে কমেছে ৭০ পয়েন্ট। এর আগে গত ৭ মার্চ ডিএসইর সূচক কমেছিল এই যাবত কালের মধ্যে দ্বিতীয়সর্বোচ্চ ৫৪ পয়েন্ট। আজকের পতন বাজারজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের আহাজারি।


তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্ট। আজ সোমবার (১৮ মার্চ) সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে। এই সময়ে সূচক কমেছে ৪৭৫ পয়েন্ট।


এতে দেখা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারিতে থাকা সূচক ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্ট ওই সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে (১৫ ফেব্রুয়ারি) কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে। ওই সপ্তাহে ডিএসইর কমে যায় ১১১ পয়েন্ট।


এর পরের সপ্তাহে (১৮-২২ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইর সূচক ৬৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৭৩ পয়েন্টে। পরের সপ্তাহে (২৫-২৯ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইর ১৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্ট।


চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে (০৩-০৭ মার্চ) ডিএসইর সূচক ১৪২ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে। পরের সপ্তাহে বা বিদায়ী সপ্তাহে (১০-১৪ মার্চ) ডিএসইর সূচক কমে যায় আরও ১৪৪ পয়েন্ট। গত বৃহস্পতিবার সূচকটি ৩৪ মাসের মধ্যে সর্বনিন্মে অর্থাৎ ৬ হাজারের নিচে নেমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে।


সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এতে প্রতিদিনই বড় পতন হয় সবকটি মূল্যসূচকের। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকলো পুঁজিবাজার। পাঁচ সপ্তাহের এই পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন হারিয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকার ওপরে।


জানা গেছে, আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৭ কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৭ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬৩৫ কোটি ৪৬ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৫ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন ৪৯ হাজার ১৯২ কোটি ২৬ লাখ ৮৭ হাজার ৪২৩ টাকা কমেছে।


সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন ১ হাজার ২৫৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৯৩ কোটি ৮৮ লাখ ১০ হাজার টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা।


সপ্তাহটিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৪৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩৬ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ২৯৯ পয়েন্টে এবং ২ হাজার ৫১ পয়েন্টে।


সপ্তাহটিতে ডিএসইতে ৪০১টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৯টির , দর কমেছে ৩০১টির এবং ৩১টির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে।


বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাজারে ধারাবাহিক পতন ঘটাচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারী যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছিলেন, তাদের বেশিরভাগই শেষ হয়ে গেল। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুরোধের পরও ব্রোকারেজ হাউজগুলো বাধ্য হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে মার্জিন ঋণের গ্রাহকদের শেয়ার ফোর্স সেল করে দিয়েছে।


একটি শীর্ষ স্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজের এক কর্মকর্তা বলেন, বিনিয়োগকারীদের প্রতি আমাদের সব রকমের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা রয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে-তো বাঁচতে হবে। যেসব বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্ট অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে, সেগুলো আমরা বাধ্য হয়ে ফোর্স সেলের আওতায় এনেছি।


শেয়ারবাজারের অন্যতম টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট স্টক অবজারভারের জয়ন্ত দে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি চক্র উদ্দেশ্যমূলকভাবে শেয়ারবাজারকে ফেলে দিচ্ছে। তারা কম দামে শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এমনটা করছে। এতে যারা মার্জিন নিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করতো, তারা শেষ হয়ে যাচ্ছে।


জয়ন্ত দে বলেন, তারা জানে চলতি বছর আমাদের শেয়ারবাজার অনেক ভালো হবে। কারণ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বিশ্বের সব দেশের শেয়ারবাজার ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনেক দেশের শেয়ারবাজারে এরই মধ্যে রেকর্ড উত্থানও হয়েছে। কেবল আমাদের দেশে এখনো ব্যতিক্রম। তবে আমাদের দেশের শেয়ারবাজারও অনেক বাড়বে, সেটা খুব বেশি দূর নয়।


সোমবারের বাজার পর্যালোচনা


১৮ মার্চ, সোমবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস সোমবার ডিএসই ৫ হাজার ৯৬৮ পয়েন্ট নিয়ে লেনদেন শুরু করে। যা দিনশেষে ৬৯.৮০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে স্থির হয়। আজ একদিনেই সূচক পড়ে যায় প্রায় ৭০ পয়েন্ট।


অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ১৩.৫৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৮৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪.৯৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪২ পয়েন্টে।


আজ ডিএসইতে ৪৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকার।


আজ ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠানের ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৪টির, কমেছে ৩৩০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির।


অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট।


আজ সিএসইতে ২২৭টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৬টির, কমেছে ১৫৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টি প্রতিষ্ঠানের।


আগের দিন সিএসইতে ২১২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দর বেড়েছিল ৮৫টির, কমেছিল ৮৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com