
বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ আমাদের এই বাংলাদেশ। হিমালয় পর্বতের পাদদেশ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি৷ হিমালয় থেকে বয়ে নিয়ে আসা, পলিমাটি দিয়ে এই ভূ-খন্ড তৈরি করেছে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদী৷ বাংলার কবিদের কলমে বারবার ধ্বনিত হয়েছে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের এই ভৌগোলিক অবস্থান।
সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছেন
“হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাৎ বাংলাদেশ, কেঁপে কেঁপে ওঠে পদ্মার উচ্ছ্বাসে।"
রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী'র কলমে উঠে আসে
“বাংলা নামে দেশ,
তার উত্তরে হিমালয় দক্ষিণে সাগর৷
মা গঙ্গা মর্ত্যে নেমে নিজ মাটিতে সেই দেশ গড়লেন।”
ঊর্বর পলিসমৃদ্ধ এই দেশের উন্নয়নের জন্য এর ভৌগোলিক গড়নের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখা অতীব জরুরি। দুঃখজনক হলেও সত্য স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ববর্তী সরকারগুলোর মধ্যে একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ছাড়া আর কেউ বাংলাদেশের এই স্বতন্ত্র ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য আমলে নেননি। এইজন্য এ যাবৎ নেয়া উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো প্রাণ-প্রকৃতির ধ্বংসকারী হিসেবে দেখা দিয়েছে। যা কিনা জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জলবায়ু এবং উন্নয়ন এই দুইয়ের ওপর সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। তারই ফলস্বরূপ নেয়া হয়েছে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০।
ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান তথা 'ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০'কে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে আলোচিত 'ডেল্টা প্ল্যান-২১০০´ ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)
ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য এই মহাপরিকল্পনার প্রথম ধাপে অর্থাৎ ২০৩০ সাল নাগাদ বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে ৮০টি প্রকল্প।
প্রথম ধাপ
সময়কাল: ২০৩০ সাল
প্রকল্প: ৮০টি
ভৌত অবকাঠামো প্রকল্প: ৬৫টি
প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, দক্ষতা ও গবেষণা প্রকল্প: ১৫টি
মোট ব্যয়:৩৭০০ কোটি মার্কিন ডলার
অর্থের জোগান : জাতীয় আয়ের ২.৫%
- ২% রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে।
- ০.৫% বেসরকারি খাত থেকে৷
ডেল্টা প্ল্যান তৈরিতে নেদারল্যান্ডস সরকার এরই মধ্যে ৮৭ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে৷ বিশ্বব্যাংকও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এই মহাপরিকল্পনায় বাংলাদেশ ডেল্টা তহবিল প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তহবিলের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বাংলাদেশ সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, পরিবেশ এবং জলবায়ু সম্পর্কিত তহবিল, বিশেষ করে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব পিপিপি পদ্ধতিকে বিবেচনা করা হয়েছে।
অর্থায়নের ক্ষেত্রে ‘কস্ট রিকভারি'র জন্য ক্রমান্বয়ে বেনিফিশিয়ারি পেপ্রিন্সিপাল নীতি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বড় শহরগুলোতে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (ওএন্ডএম) ব্যয় আদায়ের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা কার্যকর করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে এবং তা পর্যায়ক্রমে অনান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করার সুপারিশ করা হয়েছে। পরিকল্পনার ছয়টি হটস্পট:
দেশের ছয়টি এলাকাকে হটস্পট ধরে পরিকল্পনাটি সাজানো হয়েছে।
ডেল্টা প্ল্যানে বলা হয়েছে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে গাজীপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ময়মনসিংহ, নীলফামারী ও শেরপুর; এই জেলাগুলো সমুদ্র ও প্রবহমান নদী থেকে অবস্থানগত দূরত্বের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিমুক্ত।
বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ জেলা ১৮টি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন উপকূলীয় জেলা ১৯টি। হাওর ও আকস্মিক বন্যাকবলিত জেলা সাতটি। নদী অঞ্চল ও মোহনাবেষ্টিত জেলা ২৯টি।
নগর এলাকা সাতটি এবং পার্বত্য জেলা তিনটি।
সরকার চাইলে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকা ধরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে।
চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ছয়টি হটস্পট। যেগুলো মূলত পানি ও জলবায়ু উদ্ভুত অভিন্ন সমস্যাবহুল অঞ্চল। এগুলো
১) ২৭ হাজার ৭৩৮ বর্গ কিলোমিটারের উপকূলীয় অঞ্চল৷
২) ২২ হাজার ৮৪৮ বর্গ কিলোমিটারের বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল।
৩)১৬ হাজার ৫৭৪ বর্গ কিলোমিটারের হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল।
৪)১৩ হাজার ২৯৫ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল৷
৫) ৩৫ হাজার ২০৪ বর্গ কিলোমিটারের নদী অঞ্চল এবং মোহনা।
৬) ১৯ হাজার ৮২৩ বর্গ কিলোমিটারের নগরাঞ্চল।
পরিকল্পনায় হটস্পট-ভিত্তিক সমস্যাগুলো আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা। নদী ও উপকূলীয় এলাকায়- ভাঙন, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া। বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ এলাকার সমস্যা-স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, পরিবেশের অবনমন।
হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের সমস্যাগুলো হচ্ছে- স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, আকস্মিক বা মৌসুমি বন্যা, জলাবদ্ধতা ও অপর্যাপ্ত নিস্কাশন, অপর্যাপ্ত পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন৷ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমস্যাগুলো হচ্ছে- স্বাদু পানির স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও ক্রমহ্রাসমান জীববৈচিত্র সংরক্ষণ। নদী অঞ্চল ও মোহনার সমস্যা-বন্যা, পরিবেশের অবনমন, পানিদূষণ, পলিব্যবস্থাপনা ও নৌ-পরিবহন, নদীগর্ভের পরিবর্তন, ভাঙন ও নতুন চর জেগে ওঠা।
বাংলাদেশের তিনটি বড় নদীতে ভাঙনের হিসাব করে দেখা যাচ্ছে।ভাঙন কবলিত জমি যমুনায় ১৭৭০ হেক্টর, পদ্মায় ১২৯৮ হেক্টর ও মেঘনায় ২৯০০ হেক্টর।
১৯৭৩ থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ নতুন চর জেগে উঠেছে মোট ৫২ হাজার ৩১৩ হেক্টর জমি। এ ছাড়া নগরাঞ্চলের সমস্যা হচ্ছে-অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা, স্বাদু পানির পর্যাপ্ততা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। মহাপরিকল্পনায় প্রত্যেকটি হটস্পটেই পরিবেশের অবনমনকে সাধারণ সমস্যা হিসেবে ধরা হয়েছে।
'ডেল্টা প্ল্যান ২১০০'-এর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হচ্ছে ৬টি। এগুলো হলো,
১। বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপর্যয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
২। পানি ব্যবহারে অধিকতর দক্ষতা ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা।
৩। সমন্বিত ও টেকসই নদী অঞ্চল এবং মোহনা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
৪। জলবায়ু এবং বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ এবং সেগুলোর যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৫৷ অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন গড়ে তোলা এবং
৬। ভূমি ও পানিসম্পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
পাঁচ বছর পরপর পরিকল্পনা হালনাগাদ করার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের মূল কারিগর পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামসুল আলম জানিয়েছেন, 'কয়েক ধাপে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়ন করা হবে। ২০৩১ সাল নাগাদ থাকবে প্রথম ধাপ৷ ২০৩১ থেকে ২০৫০ সাল নাগাদ পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ, এবং এরপর তৃতীয় ধাপ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২১০০ সাল।'
পরিকল্পনা কমিশন পাঁচ বছর পর পর পুরো ডেল্টা প্ল্যানের তথ্য হালনাগাদ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শামসুল আলম জানিয়েছেন, ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে কত টাকা খরচ হতে পারে, তারও একটি ধারণা দিয়েছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ৷ এই মোতাবেক কাজ এগিয়ে নিলেই শতবর্ষী এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়৷
বাস্তবায়ন না হলে ক্ষতির মুখে পড়বে সামষ্টিক অর্থনীতিসরকারের একশ’ বছরের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তাবিয়ত না হলে দেশের সামষ্টিক এবং খাতভিত্তিক অর্থনীতি যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সহনীয় অবস্থায় সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভৌত সম্পদ এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রতিবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমে যেতে পারে।
এ ছাড়াও বাড়বে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি৷ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের ফলে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যেতে পারে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের চরম পর্যায়ে এ সকল ক্ষয়ক্ষতি ও ব্যয় সমানুপাতিক হারে বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।পরিকল্পনা কমিশন ডেল্টা প্ল্যানে বলা হয়েছে, শতবর্ষী এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পানি, পরিবেশ, ভূমি, কৃষি (বন, প্রাণিসম্পদ, এবং মৎস্য) ইত্যাদি খাতের কৌশল প্রণয়ন এবং যথাযথ বিনিয়োগ, নতুন নীতিমালা প্রণয়ন, ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজন হবে।
পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিদ্যমান অবকাঠামোর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে প্রতিবছর মোট দেশজ আয়ের প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে। এখন এ ব্যয় জিডিপির শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ৷বর্তমান বিনিয়োগ এবং বিদ্যমান দেশজ আয় ব্যবহার করে পরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রকল্পের জন্য প্রাক ব্যায়ের মাত্রা ২০১৬ অর্থবছরের ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ ২৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।
বিনিয়োগ অগ্রাধিকার:
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর ধারণা অনুযায়ী মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অর্থায়ন বিভিন্ন উদ্যোগের আওতায় বেসরকারি খাত থেকে এবং ২ শতাংশ সরকারি খাত থেকে নির্বাহ করতে হবে। সরকারি খাত থেকে পাওয়া ২ শতাংশ থেকে দশমিক ৫ শতাংশ রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় করার পর অবশিষ্ট দেড় শতাংশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এ বিনিয়োগ পরিকল্পনার আওতায় ব্যয় করা হবে।
বাস্তবায়ন সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে বড় প্রকল্প প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন সীমিত হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রকল্প গ্রহণে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। কারণ, ব-দ্বীপ পরিকল্পনার প্রকল্পগুলো শুধু ভৌত বিনিয়োগ নয়, বরং অধিকতর গবেষণা, জ্ঞান এবং প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা উত্তরণেও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর বেশিরভাগ সরকারি অর্থায়ন বন্যা থেকে রক্ষা, নদী ভাঙন, নিয়ন্ত্রণ, নদীশাসন, এবং নাব্যতা রক্ষাসহ সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে নদী ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির জন্য প্রয়োজন হবে। এগুলো এখন বাংলাদেশের অগ্রাধিকার পাওয়া বিনিয়োগ খাত৷
এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ মোট ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বিনিয়োগের প্রায় ৩৫ শতাংশ। এগুলো অত্যন্ত পুঁজিঘন বিনিয়োগ বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন। যা শতবর্ষী পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা ও বেশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্বলিত প্রধান নগরগুলোতে পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা ইত্যাদি খাতে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বিনিয়োগ থেকে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ অর্থের প্রয়োজন হবে।
অধিকন্ত, ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকার পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে ২০৩০ সাল নাগাদ ডেল্টা প্ল্যানের মোট বিনিয়োগের প্রায় ২০ শতাংশ প্রয়োজন হবে।
উল্লেখ্য, ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেলটা প্ল্যান তথা 'ডেল্টা প্ল্যান-২১০০'কে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে আলোচিত 'ডেল্টা প্ল্যান-২১০০' ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)।
ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় ছয়টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পনি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বন্য নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন। এরইমধ্যে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ‘ডেলটা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল'। ২০২০ সালের ১ জুলাই ১২ সদস্যের এই কাউন্সিল গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রীকে ডেলটা গভর্ণ্যান্স কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
ডেল্টা পরিকল্পনা হল দীর্ঘমেয়াদি, একক এবং সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, দীর্ঘমেয়াদি বলতে বোঝায় পরিকল্পনার লক্ষ্য২১০০। একক হল দেশের সব পরিকল্পনার আন্তযোগাযগের মাধ্যমে একক ডেল্টা। সমন্বিত বলতে বোঝায় পানি সম্পর্কিত সকল খাতকে একটি পরিকল্পনায় নিয়ে আসা৷জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ও পানির নিরাপত্তা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তৈরি হওয়া শত বছরের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বা ডেল্টা গ্লান।
ডেল্টা পরিকল্পনা, কৌশল সমূহের টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে ডেল্টা ভিশনে পৌঁছাতে সাহায্য করে। জলবায়ু পরিবর্তন এ সময়ে খুবই আলোচিত বিষয়, যার প্রভাবের ফলাফল আমরা এখন তিক্ততা নিয়ে প্রতিনিয়ত ভোগ করছি। আর এই কারণেই বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা (A Bangladesh Delta Plan)। ২০৫০ সালে দেশটির ১৪% শতাংশ এলাকা নিমজ্জিত হবে৷পরিনামে ৩০ মিলিয়ন লোক জলবায়ু শরণার্থীতে পরিণত হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙ্গন, পানি দূষণের মত হুমকি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এর একটা উল্লেখযোগ্য পটভূমি হচ্ছে sea level rise তথা সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের মত নেদারল্যান্ড ও একটি ব-দ্বীপ রাষ্ট্র। বাংলাদেশের মত তারাও একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই বাংলাদশে ও নেদারল্যান্ড একত্রে ডেল্টা পরিকল্পনায় কাজ করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া প্রকল্পটি হলো 'Towards a Bangladesh Delta Plan'। এই প্রকল্পের ফলাফল রচিত হবে ৫০ থেকে ১০০ বছরের একটি- সমন্বিত এবং টেকসই পরিকল্পনার কাজের উপর ভিত্তি করে। এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য, আমাদের নিরাপদ জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করা এবং দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা।
লেখক : অ্যাড. কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, সহ-সভাপতি,
বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ.
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]