বিএনপি নেতাদের স্ত্রীরা ভারতের শাড়ি দিয়ে কাঁথাও বানায় না: রিজভী
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৪, ২০:৩৮
বিএনপি নেতাদের স্ত্রীরা ভারতের শাড়ি দিয়ে কাঁথাও বানায় না: রিজভী
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতীয় পণ্য বর্জন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিএনপি নেতাদের স্ত্রীদের শাড়ি পুড়ানোর মন্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি নেতাদের স্ত্রীরা ভারতের শাড়ি তেমন কিনে না। ভারতীয় পুরোনো শাড়ি দিয়ে তারা কাঁথাও বানায় না।


২৮ মার্চ, বৃহস্পতিবার ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে’ মারা যাওয়া, গুম হওয়া ও পঙ্গুত্বের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।


রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের স্বার্থ নিয়ে সরকারপ্রধান তামাশা করছেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষুণ্ন করা ঠিক হবে কি না, এসব নিয়ে অনেকে নিউজ করছেন, টকশো করছেন। কিন্তু কথা হলো ভারতের পণ্য বর্জন করায় সরকার ও তাদের লোকরা এত বিচলিত কেন?


তারও আগে গতকাল বুধবার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির যে নেতারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন, তাদের স্ত্রীদের ভারতীয় শাড়ি এনে কেন পুড়িয়ে ফেলছেন না? তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে? আমি বিএনপি নেতাদের বলবো, তাদের বউরা যেন ভারতীয় শাড়ি না পরেন।


রিজভী বলেন, আমার নানার বাড়ি ভারতে, বিয়ের পর একবার গিয়েছিলাম। আমার ছোট মামা সেখানে থাকেন। আসার সময় আমার স্ত্রীকে একটি শাড়ি দিয়েছিল। আমি কয়েকদিন আগে আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম ওই শাড়িটা কই? আমার স্ত্রী বললেন ওটা দিয়ে তো অনেক আগেই কাঁথা সেলাই করা হয়েছে। আমাদের দেশে একটা রেওয়াজ আছে- পুরাতন শাড়ি দিয়ে কাঁথা সেলাই করা।


তিনি বলেন, বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে পুড়াল। যে নেতারা বলছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন, তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে? আমি জানি, ঈদের আগে দেখি বিএনপির মন্ত্রীদের বউরা ভারত থেকে শাড়ি এনে বিক্রি করত।


ভারতীয় পণ্য বর্জনের সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে সকলের সম্পৃক্ত হওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশকে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আমরা সেই প্রত্যয় সেই আদর্শ নিয়ে কাজ করছি। আমাদের নিজের বুনন করা যে ফসল সেটা আরো বেশি করে উৎপাদন করব, আমাদের মিল-কারখানায় যে শাড়ি তৈরি হয় সেই শাড়ি আমাদের মেয়েরা পড়বে, আমাদের কল-কারখানায় যে লুঙ্গি তৈরি হয় সেই লুঙ্গি আমাদের দেশের ছেলেরা পড়বে। কিন্তু আমরা অন্যের কাছে নতজানু হবো না, অন্যের কাছে দ্বারস্থ হবো না… এই জাতীয়তাবাদী চিন্তা থেকে আমাদেরকে কাজ করতে হবে।


আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে ভারত সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আজকে এতো বড় একটা ডামি নির্বাচন… ২০১৪ সালে তাদের (ভারত) কুটনীতিক এসে একজন রাজনীতিবিদকে শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলে, ২০১৮ সালে …বাংলাদেশের মানুষ এসব কর্মকান্ডে বিক্ষুব্ধ হবে না।


এতো কিছু ঘটনা সীমান্ত হত্যা হয়… আপনি একটা ডামি সরকার, একটা ডাকাত সরকার, একটা অবৈধ সরকারের পক্ষে যদি একটি দেশ থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে না, জনগণ প্রতিবাদ জানাবে না। আজকে যদি এটুকু বলতো, না আমরা একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই… আমরা কোনো দলের পক্ষে না…. যেটা আমেরিকা বলছে, যেটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে যে, আমরা কোনো দলের পক্ষে না, আমরা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই সেটা পর্যন্ত তারা (ভারত) বলে নাই। উল্টো ইন্ডিয়ার হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বলে দিলেন যে, আমরা এই সরকারের পক্ষে। অতএব আমি মনে করি, অবশ্যই যে সামাজিক আন্দোলন হচ্ছে পণ্য বর্জণের তার প্রতি সংহতি জানানো ন্যায় সঙ্গত।


ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, কেনো আমরা অন্য দেশের সমালোচনা করি। ’৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়েছে, বেরুবাড়ি ভারত নিয়ে যাবে। কথা ছিলো বেরুবাড়ি নিয়ে যাবে, আমাদেরকে দোহগ্রাম-আঙ্গরপোতা যাওয়ার জন্য করিডোর দেয়া হবে সেটা ৪০ বছরেও দেয়া হয়নি। এখনো কিন্তু দেয়া হয়নি। বেরুবাড়ি কিন্তু তারা নিয়ে গেছে।


করিডোর দিয়ে ২৪ ঘন্টা যাতায়াত করতে পারবে কিন্তু আইনগতভাবে যেটা দেয়ার কথা সেটা দেয়া হয়নি। ভারতের পার্লামেন্টে এটা বন্ধ করে রেখেছে। আমাদের যে প্রাপ্য যেটা আমাদেরকে দেয়া হয়নি। না এটার জন্য প্রতিবাদ করতে পারব না। দেশের স্বার্থে পক্ষে আমরা কথা বলতে পারব না। এই যে গুম-খুনের পরিবার … আজকে এম ইলিয়াস আলী কেনো গুম হয়েছে… মানুষ বলে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে তার যে শক্ত অবস্থান সেজন্য তাকে গুম করা হয়েছে, আজকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ তিনি বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, এমপি ছিলেন পাঁচ বার, মন্ত্রী ছিলেন তাকে গুম করা হলো… পাওয়া গেলো আরেকটি দেশে এটি কি বড় ধরণের কেলেঙ্কারী নয়…এটা কি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌ্মত্বের বিরুদ্ধে যায় না। এতো ঘটনা, এতো কিছু। এভাবে ওরা আগ্রাসন করছে।


গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার সেল’ এর উদ্যোগে বিরোধী আন্দোলনে গুম-খুন-পঙ্গুত্বের শিকার পরিবারের সদস্যদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।


সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও সদস্য নাজমুল হাসানের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর হেলাল, যুব দলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসিন আলী, ছাত্র দলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছির, গুম-খুন হওয়া পরিবারের মধ্যে চৌধুরী আলমের ভাই খুরশীদ আলম মিন্টু, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজীদা ইসলাম তুলি, নুরে আলমের স্ত্রী রিনা আলম, মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আক্তার, পারভেজ রেজার ছোট মেয়ে হৃদি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


পরে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের হাতে তারেক রহমানের ঈদ উপহার তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com