ভারতীয় সাংবাদিকদের ‘বাংলাদেশের রাজনীতি’ পাঠ করালেন কাদের
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:৩২
ভারতীয় সাংবাদিকদের ‘বাংলাদেশের রাজনীতি’ পাঠ করালেন কাদের
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশে ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতিতে ‘ষড়যন্ত্র’ বেশি। ক্ষমতায় যেতে আওয়ামী লীগ বহির্শক্তির ওপর নির্ভরশীল নয় তবে বন্ধু হিসেবে ভারতকে পাশে চায়। ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে এমন কথা বলেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।


এসময় বিএনপিকে একহাত নিয়ে তিনি বিএনপি ‘জগাখিচুড়ি দল’, ‘সাম্প্রদায়িক শক্তির বিশ্বস্ত ঠিকানা’, তাদের সাথে ‘জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী’ আছে। আওয়ামী লীগ কোনো দল ভাঙাভাঙিতে নেই। বিএনপি নিজেরাই ভেঙে পড়বে- এমন সব বার্তা দিয়েছেন।


এছাড়া সভার শুরুতে ওবায়দুল কাদের সরকারের উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান, তিস্তার নদীর পানি সমস্যা, শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্ঠাসহ আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনা তুলে ধরেন। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের মাত্রা কতটুকু তাও তুলে ধরেন তিনি।


তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে ভারত থেকে ৫ দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন ভারতের ৩৪ সাংবাদিক। সফরের শেষদিনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সাথে মতবিনিময় করেছেন সফররত সাংবাদিকরা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির ১২ কেন্দ্রীয় নেতা সভায় অংশ নেন।


মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা পৌঁনে ৮টায় শুরু হওয়া মতবিনিময় সভা শেষ হয় রাত ৮টা ৫০ মিনিটে। কলকাতা থেকে ২৫ জন এবং আসাম ও গৌহাটি থেকে ৯ জন সাংবাদিক বাংলাদেশ সফরে আসেন।


মতবিনিময় সভার শুরুতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কে খুবই স্মৃতিভরা। আমাদের সেই টেস্টের (মুক্তিযুদ্ধ) সময়ে ভারত ছিল বিশ্বস্ত, আশ্রয়দাতা। আমাদের সেনাদের রক্ত রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে, একাত্তরের বন্ধন।


আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মিয়ানমার বাদে বাংলাদেশের গোটা বর্ডার ভারতের সাথে রয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান সবদিক থেকে ভারত এগিয়ে। ভারতের সাথে বৈরি সম্পর্ক রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়।


বিএনপি-জামায়াত সরকারের মূল বিরোধী শক্তি উল্লেখ করে কাদের বলেন, বিএনপির সাথে জামায়াত আছে। জঙ্গিবাদী আরও গোষ্ঠী আছে। কিচু আল্ট্রা রাইট, আল্ট্রা লেফট দল আছে। তারা ৩৪ দলের জোট হয়েছে, জগাখিচুড়ি দল। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি। লাউড এন্ড ক্লিয়ার।


তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সপক্ষের শক্তিকে নিয়ে আমাদের জোট আরও প্রসারিত হবে। বাংলাদেশে সাইকোলজিক্যালি একটা বিষয় আছে। জোটের বিরুদ্ধে জোট না হলে মানুষ মনে করে কিচ্ছু নেই। আমাদের ১৪ দলের জোট আছে।



ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদেরও ভুল-ত্রুটি আছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মতো ভারতের ট্রাস্টেড ফ্রেন্ড আর একজনও নেই। এটা আপনাদের মনে রাখতে হবে। ভারতের সরকারের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব। নরেন্দ্র মোদির সরকারের সাথেও আমাদের বন্ধুত্ব আছে। বন্ধুত্বের বিকাশও হচ্ছে। ওয়াটার শেয়ারিং এর ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটা পজিটিভ। আমরা জানি এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সম্মতি দরকার।


এসময় তিনি পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার একটু বলবেন বাংলাদেশের দিকে একটু তাকাতে।


এসময় তিনি বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতাকে জেলের অভ্যন্তরে হত্যার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ওপর বারবার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে র‌্যালি ছিলো। ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সমাবেশ ছিল। শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। শেখ হাসিনাকে প্রাইম টার্গেট করে দিনের বেলা গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।


তিনি বলেন, ছিটমহল বিনিময় দুরূহ কাজ ছিল। এটা একটা বিরাট এ্যাচিভমেন্ট। এর কৃতিত্ব আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অবশ্যই দিতে হবে। তারপরও আমাদের কিছু কিছু ব্যাপার আছে। যেমন ওয়াটার শেয়ারিংয়ের মতো ব্যাপার। বৈরি সম্পর্ক রেখে আমরা সে সুবিধাটা পাবো না। বন্ধুত্ব রাখতে হবে এবং আলোচনার টেবিলে বসতে হবে।


কাদের বলেন, ভারতের সাথে আমাদের একাত্তরের রাখিবন্ধন অটুট আছে। রক্তের রাখি বন্ধন আমরা ভুলি না, কখনো ভুলতে পারি না।


আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য কতটা কঠিন হবে? ভারতের সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ১৫ বছর ধরে পাওয়ারে। থার্ড টার্ম অতিক্রম করে চতুর্থ টামের জন্য আমরা নির্বাচনে যাব। গতবারের চেয়ে আরেকটু টাফ হবে। একটা ব্যাপার হলো কস্ট অব লিভিং সামাল দিতে ব্যর্থ হলে ডিফিকাল্ট হয়ে যাবে।



তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশ্নে দ্বিধা নেই। সবকিছু মিলিয়ে ভারত তো আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না। কিন্তু আমাদের পাশে আছে। আমরা বন্ধু হিসেবে পাশে দেখতে চাই।


কাদের বলেন, আমাদের মধ্যে অনেক মিলও আছে। একই মেঘমালা থেকে বৃষ্টি হয়, একই পাখির গান আমরা শুনি।


আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি তুলে ধরে ভারতীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন দৃশ্যমান। আমাদের নেক্সট এইম ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ। উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর ঘটাতে চাই। আমরা সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে চাই।


তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে। বিএনপি নিজেরাই নিজেদের ভাঙবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশ্নে দ্বিধা নেই। সবকিছু মিলিয়ে ভারত তো আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না। কিন্তু আমাদের পাশে আছে। আমরা বন্ধু হিসেবে পাশে দেখতে চাই। আপনারা পাশে থাকলে আমাদের শক্তি। আমাদের এখানে ষড়যন্ত্র বেশি। শেখ হাসিনার জীবনও নিরাপদ নয়। আমরা তার নিরাপত্তা নিয়েও কনসার্ন। পঁচাত্তরের পর আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে ঐক্যবদ্ধ।


কাদের বলেন, তরুণরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখে আওয়ামী লীগের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বলে আমরা দেখতে পারছি। বাংলাদেশর অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। এখন তারা শেখ হাসিনার সততা, উইমেন এমপাওয়ারমেন্টে যে কাজ করেছেন দেশের নারীরা খুশি। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে হারানো সম্ভব নয়।


সভার শেষদিকে বাংলাদেশ সফরে আতিথেয়তাও মুগ্ধতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ সফররত ভারতের সাংবাদিকরা।


বিবার্তা/সোহেল/এসএফ




সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com