শিরোনাম
‘হিমবাহের বাগান শহর’ হলস্ট্যাট
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৫
‘হিমবাহের বাগান শহর’ হলস্ট্যাট
পর্যটন ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কেউ বলেন, বিশ্বের সুন্দরতম গ্রাম। কেউ বলেন ‘হিমবাহের বাগান শহর’। কেউ বলেন ‘অস্ট্রিয়ার মুক্তো’, কেউ বলেন ছবি তোলার শ্রেষ্ঠ গ্রামের নাম হলস্ট্যাট। Hallstättersee হ্রদের চারিদিক জুড়ে সবুজ পাহাড়। পাহাড়দের বলা হয় Guardian of the Hallstättersee বা হ্রদের অভিভাবক।


৩৫০০ বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বুকে নিয়ে বাঁচছে হলস্ট্যাট ভিলেজ। যেতে হলে ভিয়েনা-সালসবার্গ লাইনের ট্রেনে উঠে নামতে হবে Attnang-Puchheim স্টেশন। সেখান থেকে Bad Ischl-Obertraun লাইনের ট্রেন ধরে হলস্ট্যাট স্টেশনে। Hallstättersee হ্রদের পূর্ব তীরে এই স্টেশন। স্টেশন থেকে বেরিয়ে ঢালু রাস্তা দিয়ে নেমে একটু এগিয়ে গেলে হ্রদের ধার।


সেখান থেকে হলস্ট্যাট যাওয়ার বোট ছাড়ে। দুদিকে পাহাড়, তাদের মধ্যে দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত চলে গেছে ৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের হ্রদটি। লেকের ওপারে আশ্চর্য গ্রাম হলস্ট্যাট।


হলস্ট্যাট ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। পাহাড়ের কোলে ঐতিহ্যবাহী সুন্দর বাড়িগুলো দারুণভাবে তৈরি করা। এর সামনে রয়েছে স্বচ্ছ পানির লেক। সব মিলিয়ে ছবির মতো সুন্দর একটি শহর এটি।


পাহাড়ের ধাপে ধাপে ‘বারোক’ শৈলির আঙ্গিকে গড়ে তোলা হয়েছে গ্রামের বাড়িগুলি। এখানকার প্রতিটি বাড়ি, দোকান, ক্যাফে, রেস্তোরাঁগুলো সবুজ অর্কিড আর নানা রঙের মরশুমি ফুলে মুড়ে রাখা হয়। দেখলে মনে হবে সেগুলি যেন ফুলেরই দোকান। হ্রদের পাড় থেকে আঁকাবাঁকা গলি পথ উঠে গেছে পাহাড়ের উপর দিকে। রাস্তার দুপাশে শত শত বছরের পুরনো বাড়ি। কিন্তু এতটাই সুন্দর অবস্থায় সাজিয়ে রাখা, যেন কয়েক মিনিট আগে বাড়িগুলোতে গৃহপ্রবেশ হয়েছে।


শুধুমাত্র অর্থ থাকলেই আস্ত একটা পাহাড়ি গ্রামকে ছবির মতো সাজিয়ে রাখা যায় না। এখানকার বাসিন্দাদের উন্নতমানের নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গিই হলস্ট্যাটের সৌন্দর্যের গোপন রহস্য। শীতকালে বরফে সাদা হয়ে যায় এ গ্রাম। হ্রদ, পাহাড়, গ্রামের রাস্তাঘাট, বাড়ির ছাদ, পুরু বরফের চাদরে মোড়া থাকে।


তবে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকের কারণে শহরটির বাসিন্দারা বিরক্ত। মাত্র সাত শর মতো বাসিন্দার শহরটিতে পর্যটন মৌসুমে দৈনিক পর্যটকের সংখ্যা ১০ হাজারও ছাড়িয়ে যায়। তাই পর্যটকের সংখ্যায় লাগাম টানতে রীতিমতো রাজপথে নেমেছেন স্থানীয় লোকজন।


বাসিন্দারা সীমিতসংখ্যক পর্যটককে এখানে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বিকেল পাঁচটার পর শহরে পর্যটক বাস প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও দাবি তুলেছেন।


পর্যটনশিল্প হলস্ট্যাটের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক, এ বিষয়ে দ্বিমত নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের। তবে শহরটিতে পর্যটকের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বলছেন তাঁরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।


দক্ষিণ কোরিয়ার ২০০৬ সালের একটি রোমান্টিক ধাঁচের সিনেমার কিছু অংশের চিত্রায়ণ এই শহরে হয়েছিল। এতে চীনসহ এশিয়ার দেশগুলোতেও শহরটির জনপ্রিয়তা ব্যাপক বেড়ে যায়। শহরটির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ধরে রাখতে এখানে বেড়াতে এসে পর্যটকেরা প্রচুর সেলফি তোলেন। ফলে পর্যটনস্থলে ভিড় লেগেই থাকে। পর্যটকদের হইচইয়ে অসুবিধা হয় বাসিন্দাদের।


উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে পর্যটকদের সেলফি তোলা ঠেকাতে সম্প্রতি বিশেষ ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ। পর্যটকদের সেলফি তোলার জনপ্রিয় স্থানটিতে উঁচু কাঠের বেড়া বসিয়ে দেয় তারা।


ইউরোপে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের গন্তব্যগুলোর একটি এখন হলস্ট্যাট। শহরের বাসিন্দারা বলছেন, এখানে খুব বেশি দর্শনার্থী। বিশেষ করে এক দিনের ভ্রমণে আসা পর্যটক অনেক। তারা বড় বাসে করে শহরে এসে থাকেন।


ভেনিসসহ ইউরোপের অন্য পর্যটন শহরগুলোর মতো মাত্রাতিরিক্ত পর্যটকের চাপে ভুগছে হলস্ট্যাটও। শহরটির আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা আগামী দিনগুলোতে বাসিন্দাদের জন্য মিশ্র অনুভূতি হয়েই থাকবে।

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com