
বাংলাদেশের নানা প্রান্তে দেখা মেলে অতিথি পাখিদের। এসব অতিথি পাখির কিচিরমিচিরে মুখর থাকে পুরো প্রকৃতি। এক মোহনীয় রূপ ধারণ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা।
দেশে অতিথি হয়ে আসে যেসব পাখি- সোনাজঙ্গ, খুরুলে, কুনচুষী, বাতারণ, শাবাজ, জলপিপি, ল্যাঞ্জা, হরিয়াল, দুর্গা, টুনটুনি, রাজশকুন, লালবন মোরগ, তিলে ময়না, রামঘুঘু, জঙ্গি বটের, ধূসর বটের, হলদে খঞ্চনা, কুলাউ , চিনাহাঁস , রাজহাঁস, গিরিয়া হাঁস, বৈকাল হাঁস, বালিহাঁস, চিতি হাঁস, ভূতি হাঁস, গাংকবুতর ইত্যাদি প্রধান।
১৯৮০ সাল থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানার হ্রদে অতিথি পাখির দেখা মিলছে। অতিথি পাখির দেখা মিলছে নরসিংদীর চাতল বিল, নীলফামারীর নীলসাগর, নিঝুম দ্বীপ, হাকালুকি হাওর, বরিশালের দুর্গাসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা, টাঙ্গুয়ার হাওর, হাটল হাওর ও সোনাদিয়ায়। এ ছাড়া অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।
তবে শীতের প্রকোপ কমলে অতিথি পাখিরা আবার ছুটে যায় নিজ জন্মভূমিতে। অবকাশ যাপনের ইতি ঘটিয়ে আপন ভূমিতে যাওয়ার জন্য আবারো হাজার মাইল পাড়ি দেয় তারা।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের পাখিরা তাদের খাবারে সন্ধানে, প্রজনন এবং ছানাদের লালন-পালনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের খোঁজে হাজার হাজার মাইল উড়ে যায়। বাংলাদেশে অতিথি পাখিরা আসে মূলত উত্তর মেরু, ইউরোপ, সাইবেরিয়াসহ রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, মঙ্গোলিয়া এবং হিমালয়ের পাদদেশ থেকে।
ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যামশায়ার, সাইবেরিয়া কিংবা আন্টার্কটিকার তীব্র শীত যখন মাইনাসে চলে যায়, তখন সেখানে দেখা দেয় প্রচণ্ড খাদ্যাভাব। তীব্র শীতে পাখির দেহ থেকে খসে যায় পালক। হাজারো মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এসব পাখি আসে শুধু একটু উষ্ণতার জন্য।
ঢাকার ভেতরে অতিথি পাখির দেখা মেলে পিলখানা, মিরপুর চিড়িয়াখানা ও মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের পার্শ্ববর্তী লেকে। তবে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির ভীড় প্রাণ ভরে উপভোগ করতে হলে যেতে হবে ঢাকার নিকটে সাভার উপজেলায় অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হওয়া নয়নাভিরাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৪ সালে ঘোষণা করা হয় অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে।
আমাদের দেশে ৭৪৪ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে বলে এদের ‘আবাসিক’ পাখি বলে। খণ্ডকালীন সময়ে নিয়মিতভাবে আসে ২৪৪ প্রজাতির অধিক পাখি, যা বাংলাদেশের অতিথি পাখি হিসেবে বিবেচিত।
এ দেশে অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাসে বেশি পাখি আসে এ দেশে।
সিলেটের হাওড় এলাকায়
হাওড়, নদী ও পাহাড়ের সমৃদ্ধ সিলেটে অতিথি পাখিগুলো খুঁজে পায় পরম আশ্রয়। সিলেট বিভাগজুড়ে বিস্তৃত হাকালুকি হাওড়, মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল, হাইল হাওড় ও পাত্রখোলা লেক, সুনামগঞ্চের টাঙ্গুয়ার হাওড় ও রোয়া বিল-এ প্রতি বছরই মুখরিত হয়ে উঠে অতিথি পাখির কলকাকলিতে।
চট্টগ্রামের দ্বীপাঞ্চল
বন্দর শহর চট্টগ্রামের সন্দীপ, উড়ির চর ও চরণদ্বীপ অতিথিদের পাখি দেখার জনপ্রিয় জায়গা। এছাড়া বহুল পরিচিতি পেয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত নোয়াখালী জেলার নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া দ্বীপ, চর ওসমান বা শাহেবানিচর, চর পিয়া, বয়ার চর ও চরভাটা।
পর্যটন শহর কক্সবাজারের মহেশখালী ও সোনাদিয়া, টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ, শাহপরীর দ্বীপ ও হোয়াইক্যং-ও শীতের সময়টাতে ভরে ওঠে রঙ-বেরঙের অতিথি পাখিতে।
বরিশালের চরাঞ্চল
বৃহত্তর বরিশালের দুর্গাসাগর, ভোলা জেলার মনপুরা দ্বীপ, চর কুকরি-মুকরি, ডাল চর, সুন্দরবনের দক্ষিণ উপকূল চরমানিক, কালকিনি বা চর নিজাম জায়গাগুলো লোকারণ্যে পরিপূর্ণ হলেও শীতের এ সময়টায় নাম না জানা হরেক রকম অতিথি পাখির দেখা পাওয়া যায়।
পটুয়াখালী জেলার জনপ্রিয় পর্যটন স্থান কুয়াকাটার পাশাপাশি খেপুপাড়া বা কলাপাড়া, চরমন্তাজ, সোনার চর, এমনকি আগুনমুখা নদী, গলাচিপা নদীতেও জলকেলি দেখা যায় অতিথি পাখির।
দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল
বাংলাদেশের উত্তরের জেলা নীলফামারীর নীলসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটর জুড়ে বিস্তৃত চলন বিল এবং পঞ্চগড়ের ভিতরগড় ও পদ্মার চর-এ প্রতি শীতে দেখা যায় পরিযায়ী পাখিদের ঝাঁক। এছাড়া মধ্যাঞ্চলের নেত্রকোণার কলমকান্দার হাওর, কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওর ও কলাদিয়াও বেশ সুপরিচিত অতিথি পাখি দর্শনের জন্য।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]