
এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবির আন্দোলনের মধ্যে বদলি আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে তা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় একই দিনে ১৪ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে; যাদের মধ্যে রয়েছেন সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতিও।
১৫ জুলাই, মঙ্গলবার পৃথক প্রজ্ঞাপনে সরকারি আদেশে ’অমাণ্য’ করায় তাদের বরখাস্ত করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।
এরমধ্যে প্রথমে আট আদেশে আয়কর অনুবিভাগের আট কর্মকর্তাকে এবং পরে আলাদা আদেশে শুল্ক অনুবিভাগের পাঁচজন ও কর অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এর ফলে একই দিনে কর ও শুল্ক অনুবিভাগের সাকূল্যে ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হল; যাদের মধ্যে রয়েছেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও ঢাকার অতিরিক্ত কমিশনার হাছান তারেক রিকাবদার।
এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২২ জুন আয়কর অনুবিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে ‘তাৎক্ষণিক বদলি’ করা হয়। একদিন বাদে সংবাদ সম্মেলন করে ওই আদেশকে ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ অ্যাখ্যা দিয়ে তা ছিঁড়ে ফেলে ‘প্রতিবাদ’ জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বদলির ওই আদেশ ‘অবজ্ঞা’ করে প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায়’ এবং বদলি করা ব্যক্তিদের একই ধরনের কর্ম সমর্থন করায় তাদের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত এল।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শুল্কের কর্মকর্তারা হলেন- কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকার (উত্তর) রাজস্ব কর্মকর্তা সবুজ মিয়া; কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, খুলনার রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল বশর, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্প, ঢাকার উপ-প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত কমিশনার) সিফাত-ই-মরিয়ম; নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, মূল্য সংযোজন কর, ঢাকার অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার (এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি) ও এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মো. শাহাদাত জামিল।
এর আগে এ দিন পৃথক আদেশে বদলি করা তিন কর্মকর্তাকে আদেশ ‘অবজ্ঞা’ করে প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায়’ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
তারা হলেন- খুলনা কর অঞ্চলের উপ কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম, রংপুর কর অঞ্চলের উপ কমিশনার নুশরাত জাহান শমী ও কুমিল্লা কর অঞ্চলের উপ কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিল।
আর তাদের সমর্থন করায় আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারা হলেন- ঢাকা কর অঞ্চল-২–এর যুগ্ম কর কমিশনার মাসুমা খাতুন, কর অঞ্চল-১৫–এর যুগ্ম কর কমিশনার মুরাদ আহমেদ, কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের মোরশেদ উদ্দীন খান, নোয়াখালী কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা এবং কক্সবাজার কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার আশরাফুল আলম প্রধান।
এর আগে আন্দোলন থামার পর এনবিআরের তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে করা হয় সাময়িক বরখাস্ত; আর একের পর এক কর্মকর্তা বদলির মুখে পড়েছেন।
এনবিআর দুই ভাগ করে গত মে মাসে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সেই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী’ আনা হবে। আর সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান কাঠামোতেই চলবে এনবিআরের সব কাজ।
এর মধ্যে সংস্থাটির কর্মীরা নানা অভিযোগ তুলে এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।
দাবি আদায়ে ২৮ জুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআর কর্মীরা। তাদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের কার্যক্রম। পরের দিনও কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে সংস্থাটির সেবাকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
সংকট নিরসনে সেদিন এনবিআর কর্মীদের অবিলম্বে কর্মস্থলে ফেরা এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানানো হয়। পরে সংকট সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার।
পরে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়।
এরপর আন্দোলনের সামনের সারির নেতাদের ‘দুর্নীতির তথ্যানুসন্ধানে’ নামে দুদক। তিন দফায় ১৬ জনের তথ্যানুসন্ধান শুরুর তথ্য দেয় সংস্থাটি।
পরে আন্দোলন থামার পর একের পর এক কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে এনবিআর।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]