হিমালয় পেরিয়ে শীতল বাতাস দেশে আসায় মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে পঞ্চগড়, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় শৈত্যপ্রবাহ বইছে।
আগামী দুই দিনের মধ্যে এটি দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ছড়িয়ে যেতে পারে। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে আবহাওয়াবিদরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
শুক্রবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ছিল চলতি বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ভোরে ওই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পঞ্চগড় ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা ও পাবনার ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছে। আরও আটটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা নেমে এসেছে। সামগ্রিকভাবে সারা দেশের তাপমাত্রা গত এক দিনে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে।
তাপমাত্রা কমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার বায়ুদূষণও বেড়েছে। যথারীতি এ সময়ে ঢাকা বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। মাসের বাকি সময়জুড়ে এ ধরনের আবহাওয়া এবং বায়ুদূষণ চলতে পারে বলেও বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল থেকে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আজ শনিবার দেশের আরও নতুন নতুন এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়তে পারে। সামগ্রিকভাবে সারা দেশের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। দিনভর কুয়াশা থাকতে পারে। ফলে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসতে পারে। এতে শীতের অনুভূতি বেশি লাগতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচলে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, আরও তিন দিন এ শৈত্যপ্রবাহ স্থায়ী হতে পারে। ১৬ ডিসেম্বরের পর তাপমাত্রা বেড়ে ১৯ ডিসেম্বর থেকে তা আবার কমতে শুরু করবে। শৈত্যপ্রবাহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের পাশাপাশি খুলনা, সিলেট বিভাগে ছড়িয়ে পড়তে পারে। গত বছরের চেয়ে এবার যে শীত বেশি। তা এরই মধ্যে দৃশ্যমান। গত বছরের এসময় তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এবার একই সময়ে তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি কমেছে।
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা বলেন, প্রতিবছর ২০ ডিসেম্বর কিংবা তার পরে ঘন-কুয়াশা দেখা যেত। এবার এরই মধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে কুয়াশা দেখতে পারছি। এখানে বায়ুদূষণের একটা প্রভাব রয়েছে। এবছর এমন হতে পারে ‘ফিলস লাইক’ বেশি হতে পারে। যেমন: তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও অনুভূতি হতে পারে ৮ থেকে ৯ ডিগ্রির মতো।
এ বছর জানুয়ারিতে শীত বাড়বে, তবে তাপমাত্রা কততে নামতে পারে সেটি বলা যাচ্ছে না বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, হিমালয় পেরিয়ে আসা শীতল বাতাস দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে শীতের অনুভূতি বেড়ে গেছে। আগামী দুই দিন শৈত্যপ্রবাহ চলার পর বঙ্গোপসাগর থেকে একটি বড় মেঘমালা আসতে পারে। এতে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে। দুই দিন শীত কম থাকার পর আবার শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।
এদিকে বিকেল থেকে রাজধানীতে কুয়াশার সঙ্গে ধুলাবালু মিলেমিশে বেশি দূরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল না। বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের আজ রাত সাড়ে আটটায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুর মান বিপজ্জনক বা হেজারডাস অবস্থায় ছিল। বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থা ছিল ১ নম্বরে। ঢাকার পরে ছিল চীনের হংজু শহর ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল ভারতের রাজধানী দিল্লি।
এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এ ধরনের আবহাওয়ায় খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া ঠিক হবে না। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ঘরের মধ্যেও সাবধানে থাকতে হবে। সম্ভব হলে মাস্ক পরে বাইরে বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা কমে গেলে এবং কুয়াশা বেড়ে গেলে বায়ুর মান এমনিতেই খারাপ হয়। এ সময়ে রাজধানীতে নির্মাণকাজ বেড়ে যাওয়ার কারণে ধুলাও বাড়ে। ফলে ধুলা ও ধোঁয়া মিলে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এ ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে ভারী বস্তুকণা ও দূষিত পদার্থ থাকে। ফলে তা নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে নানা রোগবালাই হতে পারে।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]