টাকা-ডলার অদলবদলে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৩ বিলিয়ন ডলারে
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪, ১৬:৩১
টাকা-ডলার অদলবদলে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৩ বিলিয়ন ডলারে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা-ডলার অদলবদল (সোয়াপ) সুবিধা চালুর ফলে দেশে বাড়ছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। পাঁচ দিনের ব্যবধানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে ৭২৭ মিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা ও ব্যাংকগুলোর কারেন্সি সোয়াপের বা মুদ্রার অদলবদলের সুবাদে সোমবার (৪ মার্চ) রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়াবে ২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আড়াই মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ আবার ২১ বিলিয়ন ছাড়াল।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২০.৫৭ বিলিয়ন ডলার। তথ্যমতে, সোমবার (৪ মার্চ) মানি মার্কেট ১০০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের মুদ্রা অদলবদল হয়েছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এটিও গ্রস রিজার্ভ বাড়ার কারণ হতে পারে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত ব্যাংকের সাথে কারেন্সি সোয়াপ হচ্ছে। এটাও একটা কারণ হতে পারে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিজার্ভের অর্থ যেখান থেকে আসে ও ব্যয় হয়, এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য নেই। ফলে রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে। তবে এভাবে ধরে রাখাটা কতদিন সম্ভব হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।


চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কারেন্সি সোয়াপের সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন থেকেই পদ্ধতিটি রিজার্ভে অবদান রাখতে শুরু করেছে।


সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য টাকা-ডলার অদলবদল করা যায়। এ সুবিধা চালুর পর ২০ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি ব্যাংক ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়ে সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে। আর ২২ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি ব্যাংক ১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে।


দুই বছর ধরে দেশে ডলার সংকট চলছে। ফলে রিজার্ভ নেমেছে প্রায় অর্ধেকে। সংকট সামাল দিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। তাতে চাহিদা কিছুটা কমলেও ডলার সংকট কাটেনি। ফলে আমদানি দায় মেটাতে এখনো প্রতি ডলারের জন্য ১২৩ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। আবার কিছু ব্যাংক ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে।


ডলারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক রয়েছে টাকা সংকটে। কারণ, ব্যাংকগুলোকে নগদ টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। আবার অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেও তারল্য সংকটে পড়েছে কিছু ব্যাংক। তবে অনেক ব্যাংকের কাছে বাড়তি কিছু ডলার রয়েছে। এই ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে থেকে সমপরিমাণ টাকা নিচ্ছে তারা।


ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোয়াপ ব্যবস্থা দুপক্ষের জন্যই লাভজনক। কারণ, উদ্বৃত্ত ডলারের বিপরীতে ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাবে। আবার নির্ধারিত সময় পর টাকা ফেরত দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ ডলার পেয়ে যাবে। এ ব্যবস্থার আওতায় সর্বনিম্ন ৫০ লাখ ডলার বা তার সমপরিমাণ টাকা অদলবদল করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় ব্যাংকগুলোর সাধারণ ব্যাংকিং থেকে অফশোর ইউনিটে ডলার স্থানান্তর বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি মূল ব্যাংক থেকে অফশোর ইউনিটে দেওয়া অর্থ চলতি বছরের মধ্যে ফেরত আনতে বলা হয়েছে। অফশোর ব্যাংকিংয়ে ডলার স্থানান্তর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো ব্যবসার জন্য বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে যে ডলার ধার এনেছে, তা ব্যবহার করতে পারছে না। এখন এসব ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা নিয়ে সেই অর্থ ঋণ হিসেবে দিতে পারছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের জমা হওয়ায় বাড়ছে রিজার্ভও।


মুদ্রার অদলবদলের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট (বিদেশে থাকা দেশীয় ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট) থেকে ডলার বিনিময় করছে, যার সুবাদে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রস রিজার্ভ বাড়াতে পেরেছে।


মুদ্রা অদলবদলের মাধ্যমে যে ডলার আসবে, তা নিট রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখবে না। কেননা মুদ্রার অদলবদল হয় স্বল্প মেয়াদে। গ্রস রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াডি দায় বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভের হিসাব করা হয়।


তারল্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোকে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com