শিরোনাম
নড়াইল মুক্ত দিবস আজ
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৪২
নড়াইল মুক্ত দিবস আজ
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ১০ ডিসেম্বর। নড়াইল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্তদিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত করে তাদের হাত থেকে নড়াইলকে মুক্ত করে।


এ উপলক্ষে নড়াইল জেলা প্রাশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট, চিত্রা থিয়েটারসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বধ্যভূমি, গণকবর, স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পমাল্য অর্পন, র‌্যালি ও আলোচনা সভা। এছাড়া বিকেলে নড়াইল মুক্ত দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হবে চিত্রা থিয়েটারের আয়োজনে নাটক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী।


মুক্তিযোদ্ধা জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এসএ মতিন বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে স্বাধীনতার যে আহ্বান ছিল নড়াইলের মুক্তিপাগল জনতা তা থেকে পিছপা হয়নি। ওই সময় নড়াইলের এসডিও’র বাসভবনকে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের হাই কমান্ডের সদর দফতর করা হয়। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে তৎকালীন নড়াইলের এসডিও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, এমএনএ খন্দকার আব্দুল হাফিজ, এমপিএ শহীদ আলী খান, আওয়ামী লীগ নেতা এখলাছ উদ্দিন, বিএম মতিয়ার রহমান লোহাগড়া হাই স্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও নড়াইলের সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের এক করে বিশাল বাহিনী যশোর অভিমুখে পাঠিয়ে দেন।


পরে ৬ এপ্রিল সকালে পাক হানাদার বাহিনী দুটি জেট বিমান হতে নড়াইল শহরের ওপর ব্যাপকভাবে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে প্রচুর ক্ষতি সাধন করলে নড়াইল শহর জনশূন্য হয়ে পড়ে। ১৩ এপ্রিল হানাদার বাহিনীর একটি দল নড়াইল শহরের চৌরাস্তায় রেস্টুরেন্ট মালিক মন্টুকে গুলি করে আহত করে এবং হরিপদ সরদার, ভাটিয়া গ্রামের কালু বোস, সরসপুর গ্রামের প্রফুল্য মিত্রকে ধরে নিয়ে দাইতলা পুলের নিকট গুলি করে ফেলে রেখে চলে যায়। ক্যাপ্টেন দোহার উদ্যোগে লোহাগড়ার ইতনা ও আড়িযারায় প্রশিক্ষণ শিবির খোলার কারনে মধুমতি-নবগঙ্গা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের ভাটিয়াপাড়াস্থ হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প হতে তাদের দোসর দের সহযোগিতায় গানবোট যোগে ইতনা গ্রামে নৃশংস অভিযান চালিয়ে ওই গ্রামের ৩৯ জন কে হত্যা করে।


লোহাগড়া থানা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঘাঁটিকে ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তি বাহিনীর কমান্ডারগণ আতœসমর্পনের নির্দেশ দিলে তারা আত্মসমর্পণ না করায় ৮ ডিসেম্বর শরীফ খসরুজ্জামান, দবির উদ্দিন, ইউনুস আহমেদ, লুৎফর মাস্টার, আলী মিয়া, লুৎফর বিশ্বাসসহ অনেক গ্রুপ একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে তিন দিক থেকে লোহাগড়া থানা আক্রমণ করলে প্রচন্ড যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা নড়াইলে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী এস এম ফজলুর রহমান জিন্নাহ’র নেতৃত্বে নড়াইল কলেজের দক্ষিণে মাছিমদিয়া গ্রামে সমবেত হয়ে পুলিশ-রাজাকারদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে এই যুদ্ধে তরুণ মুক্তিযোদ্ধা জয়পুরের মিজানুর রহমান হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। মিজানুর রহমানের মৃতদেহ হানাদার বাহিনীর দোসররা হাত-পা বেঁধে বাঁশে ঝুলিয়ে নড়াইল শহর প্রদক্ষিণ করে কৃতিত্ব দেখায় এবং ছবি তোলে।


এ ঘটনার পর ৯ ডিসেম্বর রাতে বিজয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কমান্ডার ফজলুর রহমান জিন্নাহ, আমির হোসেন, উজির আলী, শরীফ হুমায়ুন কবীর, আ. হাই বিশ্বাসের নেতৃত্বে বর্তমান নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ চালালে পাল্টা আক্রমণে বাগডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান শহীদ হন। শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাংলোতে অবস্থানরত ৪০ জন পাকিস্তানি মিলিটারিকে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দিলে তারা
আত্মসমর্পনে অস্বীকার করেন।


এসময় মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা চারিদিক থেকে প্রচন্ড গোলাবর্ষণ শুরু করলে পাক মিলিটারিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এখানে কয়েকজন পাকিস্তানী মিলিটারি নিহত হয় এবং অন্যদের জেল হাজতে পাঠানো হয়। শীতের রাতে প্রবল শীতকে উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা সারারাত শহরে বিজয় উল্লাস করতে থাকে ও জয় বাংলা শ্লোগানে শহর প্রকম্পিত করে তোলে এবং ১০ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে নড়াইলকে পাক হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে মুক্তিপাগল হাজারো জনতার উপস্থিতিতে ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় ।


বিবার্তা/শরিফুল/মাসুম

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com