নতুন ১২টি বাস টার্মিনাল নির্মিত হলে বদলে যাবে ঢাকার গণপরিবহনের চিত্র
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪৫
নতুন ১২টি বাস টার্মিনাল নির্মিত হলে বদলে যাবে ঢাকার গণপরিবহনের চিত্র
সানজিদা আক্তার
প্রিন্ট অ-অ+

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ঢাকার বাইরে নতুন চারটি বাস টার্মিনাল তৈরির পাশাপাশি আটটি বাস ডিপো নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে আধুনিকায়ন করা হবে বর্তমান বাস টার্মিনালগুলোকেও।


নতুন ১২টি বাস টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে ঢাকার চেহারা- এমনটি মনে করছে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অডিশন অথরিটি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।


পরিবহন বিশেষজ্ঞরাও তাদের সুরেই কথা বলছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ বাস, ট্রাক, ও অন্যান্য মোটরযান রাস্তার উপর রাখা হয়৷ এমন কয়েকটি এলাকা হচ্ছে গুলিস্তান সিটি করপোরেশনের সামনে ও পেছনের রাস্তা, সুন্দরবন স্কয়ারের দুইপাশ, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের চারপাশ, দোলাইপাড় থেকে জুরাইন, যাত্রারাড়ি ও এর আশেপাশের এলাকা এবং খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ফ্লাইওভার পর্যন্ত৷ আর শহরের সায়দাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী টার্মিনালের সামনের রাস্তায় বলা চলে সারাদিন গাড়ি থাকে।



শুধু স্বল্প দূরত্বের বাস নয়, সারা ঢাকা জুড়েই যাত্রী তোলে ডিস্ট্রিক্ট বাসগুলো। যাকে যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করে শহরবাসী।



ডিটিসির সূত্র জানায়, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ঢাকার বাইরে কাঁচপুর,কেরাণীগঞ্জ, হেমায়েতপুর ও উত্তরার দিয়াবাড়ী- এ চার স্থানে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাস ডিপো নির্মাণের আরও ৮টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে কাঁচপুর-১ ও ২, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে কেরাণীগঞ্জ ঝিলমিলের বাঘাইরে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের হেমায়েতপুরে ও উত্তরা দিয়াবাড়ীর গ্রাম ভাটুরিয়া- এই চার স্থানের বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে স্থান চুড়ান্ত করেছে।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (চাদসিক) জানায়, কুমিল্লা ও সিলেটগামী বাস ২ মে হতে এবং চট্টগ্রামগামী বাস আগামী বছরের জানুয়ারি হতে ঢাকার অভ্যন্তরে কোনও কাউন্টার রাখতে পারবে না।


পবিত্র ঈদ-উল-আযহার সময় বিবেচনায় নিয়ে ১ এপ্রিলের পরিবর্তে ২ মে (১ মে ঈদের বন্ধ) থেকে সিলেট ও কুমিল্লাগামী বাসের সকল কাউন্টার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে স্থানান্তর করতে হবে। আর আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাঁচপুরের আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ব্যবহার উপযোগী হয়ে যাবে। সেহেতু আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে সেখানে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লাসহ ওই এলাকার সকল জেলার বাস কাউন্টার সেখানে স্থানান্তর করতে হবে। ঢাকার অভ্যন্তরে তখন সেসব এলাকার আর কোনও কাউন্টার রাখা যাবে না।


বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো ব্যবহার উপযোগী হওয়ার পরেই ঢাকা শহরের অভ্যন্তর হতে বাস কাউন্টার বন্ধ করা, দক্ষিণাঞ্চলের যে সকল বাসের রুট পারমিট বন্ধ রয়েছে সে সকল বাসের রুট পারমিট দেওয়া হবে বলে জানায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।


ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বিবার্তাকে বলেন, যে শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা যত বেশি শৃঙ্খলিত সে শহর তত বেশি বাসযোগ্য ও আধুনিক। ঢাকা আভ্যন্তরীণ বাস কাউন্টার বন্ধ করতেই হবে। টার্মিনালে ঢুকতেই হবে। না হলে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আসবে না। অবশ্যই আমরা অনুধাবন করি যে, বাস্তবতা এটাই-- সব একসাথে করা সম্ভব না। এজন্য আমরা পর্যায়ক্রমে, ধীরে-ধীরে, ধাপে-ধাপে আগাব।


ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, জনগণের দুর্ভোগ যেন না হয় সেটি গুরুত্ব দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।


ডিএনসিসি মেয়র বিবার্তাকে বলেন, ঢাকা শহরের যানজট কমাতে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো শহরের বাহিরে নিতে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। মেট্রোরেল স্টেশনগুলোর সাথে সমন্বয় করে টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। টিওডি (ট্রানজিট ওরিন্টেড ডেভেলপমেন্ট) এর মাধ্যমে যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করা হবে।


সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের আধুনিকায়ন করা হবে জানান দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। অন্যদিকে টার্মিনাল নির্মাণের পূর্বে মহাখালী বাস টার্মিনালটি পেছনের অংশে বর্ধিত করে টার্মিনালের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হবে জানান উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
পেছনে বর্ধিত করলে টার্মিনালের ক্যাপাসিটি বাড়বে। দ্রুতই এটি করা হবে বলে উত্তর সিটি কর্পোরেশন।


মেট্রোরেল, বিআরটি ও ঢাকা নগর পরিবহনসহ গণপরিবহন সার্ভিসের ভাড়া সংগ্রহ ও টিকেট ব্যবস্থা আরও আধুনিক করার জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের (ক্লিয়ারিং হাউজ সিস্টেম) প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এ সবই করা হচ্ছে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে। এমনটি বলছেন ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন।


তিনি বিবার্তাকে বলেন, সকল বাসগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তখন আধুনিক সেবা দেয়াটাও সহজ হবে৷ সব মিটিংয়ে আমরা টার্মিনালগুলো শহরের বাহিরে রাখার কথা বলে আসছি৷


বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিবার্তাকে বলেন, শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এমন উদ্যোগে।


আর আমরা বসে নেই। ঢাকা শহরের সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষামুলকভাবে ই-টিকেটিং শুরু করেছিলাম। কিন্তু প্রথম দিকে মালিক পক্ষ আয়ের পুরো টাকা না পাওয়ায় পিছিয়ে যায়। এরপর আমরা মাঠ পরিদর্শন শুরু করে গাড়িতে মেশিন দিয়ে টিকেটিং সিস্টেম শুরু করি।


বিবার্তা/সানজিদা/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com