ইসলামাবাদে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৩, ২২:১৫
ইসলামাবাদে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

যথাযথ কর্মসূচি ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইসলামাবাদস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদোগে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয়েছে।


১৭ মার্চ সকালে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রুহুল আলম সিদ্দিকী দুতালয় প্রাঙ্গণে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনব্যাপী এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।


দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।


হাইকমিশনার রুহুল আলম সিদ্দিকী তার স্বাগত ভাষণে স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং জাতীয় শিশু দিবস কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানান।


হাইকমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু শৈশব থেকেই নির্ভীক,দয়ালু ও নিঃস্বার্থ হলেও অধিকার আদায়ে তিনি আপোষহীন ছিলেন। তিনি তার নিজের স্কুলে সমস্যা সমাধানের নেতৃত্ব দেন এবং বন্ধুকে নিজের ছাতা দিয়ে বৃষ্টির মধ্যে বাড়ি দিয়েআসেন। শীতকালে তিনি ঠান্ডায় আক্রান্ত বৃদ্ধকে নিজের শাল দান করেন। তিনি মানবিক গুণাবলী বহন করে বড় হয়েছেন এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে তিনি শাসক মহলের সঙ্গে কখনো আপস করেননি। শুধু বাঙালি জাতির নয়, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষের অধিকার ও মুক্তির মহানায়ক।


তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের টানে ১৯৬৩ সালে ঢাকার প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে কচি কাঁচার মেলা আয়োজিত শিশু আনন্দ মেলায় গিয়েছিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘‘এই পবিত্র শিশুদের সাথে মিশে মনটা একটু হালকা করতে এলাম’’। ছোট এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শিশুদের প্রতি তাঁর আন্তরিক ভালবাসা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছিল। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসাকে স্মরণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছিল।



হাইকমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এবং ভবিষ্যতে দেশ গড়ার কাজে তারাই নেতৃত্ব দেবে। একটি শিক্ষিত জাতি সৃষ্টির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন এবং ১৯৭৩ সালে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। বঙ্গবন্ধু শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ২২ জুন শিশু আইন প্রণয়ন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু ঘোষিত শিশু নীতিকে আরো যুগোপযোগী করতে শিশু আইন ২০১৩ প্রণয়ন করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের একটি শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে স্কুলগামী শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে আনয়ন, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি শিশুদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌছে দেওয়া, মেয়েদের বিনাবেতনে অধ্যয়নের সুযোগ প্রদান, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সকল শ্রেণির মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের নিজস্ব একাউন্টে শিক্ষা সহায়তা বৃত্তি প্রদানসহ শিশুদের স্বাস্থ্য, বিনোদন ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।


হাইকমিশনার আরও বলেন, জাতির পিতার অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে ২০৪১ সালে সুখী সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে এবং শ্রেণীকক্ষে ইন্টারনেট সংযোগসহ মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার নিশ্চিত করেছে।


হাইকমিশনার আজকের এই বিশেষ দিনে সকল শিশুদের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে এবং জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে সকলকে আহ্বান জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।


আলোচনা পর্ব শেষে জাতির পিতার আত্মার মাগফেরাত এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।


বিকালের অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনার সকল শিশু-কিশোরদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ইভেন্টে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর হাইকমিশনার শিশুদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটেন।


বঙ্গবন্ধু’র জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে “মুজিবের বাংলাদেশ” বিষয়ে রচনা এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বিষয়ে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় ছিল ভিন্ন ভাষাভাষি নয় জন শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে বঙ্গবন্ধু’র “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”থেকে বাংলা, উর্দু ও ইংরেজিতে ‘পাঠ চক্র’।


পাঠচক্র শেষে বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এবং পাঠচক্রে অংশগ্রহণকারীসহ সকল শিশু-কিশোরদের মাঝে আকর্ষণীয় পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এরপর শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে শিশুদের পছন্দের খাবার সহযোগে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।


বিবার্তা/নয়ন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com