আত্মবিশ্বাস হলো নিজের প্রতি বিশ্বাস। নিজের যোগ্যতার উপর বিশ্বাস। নিজেকে অন্যের কাছে তুলে ধরার প্রেরণা। স্বাধীনতা, স্বকীয়তা, উৎসাহ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা, সমালোচনার মুখোমুখি হওয়া, ইতিবাচক মনোভাব – সব কিছুই গড়ে উঠে আত্মবিশ্বাসের চাকায়। আত্মবিশ্বাস আর ব্যক্তিত্ব একে অন্যের সাথে জড়িত। আত্মবিশ্বাসের অভাবে ব্যক্তিত্ব দৃঢ় হয় না, তেমনি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস-ও ব্যক্তিত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আত্মবিশ্বাস অর্জন করা কোন রাতারাতি ব্যাপার নয়। দীর্ঘদিনের চর্চা এবং অভ্যাসে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠে। তাই ছোটো থেকেই আপনার সন্তানের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে আত্মবিশ্বাস। কিন্তু আমরা বড়রা বরং উল্টোটাই করি। বাচ্চার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে ফেলবে এমন প্রবণতাই কাজ করে আমাদের চিন্তা ও কাজে।
যেমন ধরুন, আমরা অনেক সময়েই, বাচ্চাদের সঙ্গে তার বন্ধুদের তুলনা করে ফেলি। বা ছোটদের বলি ‘এই রকম করলে লোকে কী বলবে!’ এতে ওরা নিজেদের অজান্তেই মনের মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে নেয়।
অন্যদিকে, নিজেকে অন্যের সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ছোটদের মধ্যে দ্বিধা কাজ করে। অন্যের চোখে সে কেমন তা যেমন বিচার করতে চায়, তেমনই সেই বিচারের ফলাফল যদি ভাল না হয়, সেটা আগাম ভেবে ভয় পেয়ে যায় বা নিজেকে গুটিয়ে নেয়। মনে করে, ‘যদি খারাপ হয়, তার চেয়ে কিছু করবই না।’
অনেক সময়ে দেখা যায় বাড়িতে বাচ্চাটি সব পড়াশোনা পারছে, কিন্তু স্কুলে গিয়ে গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার খাতায় হয়তো লিখে আসছে কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার সময়ে সব যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
এ সব ক্ষেত্রে কী করবেন?
** বাচ্চার স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলুন। অন্য সময়ে ক্লাসে সন্তানের আচরণ কেমন থাকে, সেটা জানার চেষ্টা করুন।
** বাড়িতে পড়া ও লেখা বেশি করে অভ্যেস করান, নিজেই মৌখিক পরীক্ষা নিন।
** বকাঝকা করা, মারধর একেবারেই চলবে না। এতে ওরা আরও গুটিয়ে যাবে। ওদের বোঝাতে হবে, ভুলে যাওয়া, না-পারা কোনও দোষ নয়। এগুলো সাময়িক ব্যাপার, যা অধ্যবসায় এবং ধৈর্য্যের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
** বাড়িতে যখন আপনার সামনে সে গাইবে-নাচবে রেকর্ড করে রাখুন। ওকে দেখান সে আসলে কতটা ভাল করেছে বা কোন জায়গাগুলো আরও ভাল করা যায়। আসল হল সন্তানকে আরও উৎসাহ দিতে হবে।
** ধরুন আপনার সন্তান মুখস্থ পড়া স্কুলে গিয়ে ভুল বলছে কিংবা কিছুতেই সকলের সামনে ঠিক ভাবে গাইতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে বাড়ির সকলে মিলে একটা খেলা খেলতে পারেন। ছোট ছোট চিরকুটে কোনও গান, নাচ, কবিতা বা অভিনয়ের কথা লেখা রইল। যার হাতে যেমন চিরকুট উঠবে, সেই মতো পারফর্ম করতে হবে। মজার ছলে এই খেলা তার ভয় কাটাতে সাহায্য করবে। এটা ওর বন্ধুদের সঙ্গেও খেলতে বলবেন। বন্ধুদের মধ্যে বা বাড়িতে কোনও বিষয়ে একসঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
** অনেক বাবা-মা ছেলেমেয়েদের স্টেজ অ্যাংজ়াইটি নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রামের কথায়, ‘‘বড়দের কাছেও মঞ্চে পারফর্ম করা বেশ ভয়ের ব্যাপার হয়। উল্টো দিকে কত অজানা মানুষ রয়েছে, তাদের সামনে আমি কী বলব, কী করব— এই ভীতি তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। আর ছোটরা তো আরও বেশি স্পর্শকাতর। তাই মঞ্চভীতি কোনও সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত নয়।’’ তাঁর পরামর্শ, এই বাধাটা ধীরে ধীরে কাটাতে হবে। প্রথমে অল্প কিছু লোকের সামনে পারফর্ম করল।ক্রমশ বেশি দর্শকের সামনে নিজেকে তুলে ধরল।
তবে সন্তানের কিছু আচরণে লক্ষ রাখতে বলছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। সামাজিক ভাবে মেলামেশা করতে তার সমস্যা হচ্ছে কি না, স্কুলে পড়া বুঝতে পারছে কি না, বন্ধুদের সঙ্গে কেমন ভাবে মিশছে? যদি প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক উত্তর পান, তা হলে অতিরিক্ত চিন্তার কিছু নেই। সেটা না হলে কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]