সাক্ষাতকার
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে আল আজহারের মতো করে গড়াই স্বপ্ন: ড. রশীদ
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১৭:৫৯
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে আল আজহারের মতো করে গড়াই স্বপ্ন: ড. রশীদ
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ। দায়িত্ব পালন করছেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে তাঁর নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পরে ৫ এপ্রিল তিনি এই পদে যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এই অধ্যাপক নিজ বিভাগের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট মেম্বার, ঢাবির কবি জসীম উদ্‌দীন হলের প্রভোস্ট, ড. সিরাজুল হক গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকসহ বিভিন্ন দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও। বরেণ্য এই অধ্যাপক সম্প্রতি বিবার্তা২৪ডটনেটের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় মুখোমুখি হয়েছেন। আলাপে তিনি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তাঁর স্বপ্নসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলায় অবস্থিত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তা প্রতিবেদক মহিউদ্দিন রাসেল।



বিবার্তা: আপনি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়ে দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?


ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ: অনুভূতি বলতে- আসলেই বিষয়টা হচ্ছে সেবা করার মানসিকতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ করেছেন। সেই জন্য আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আর এখানে দায়িত্ব পাওয়ায় আমি এজন্যই আনন্দিত, এটি বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোর সেবা করে, আর সেই সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার একটি সুযোগ আমি পেলাম। আমি মনে করি, এটির মাধ্যমে জাগতিক কাজের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক দোত্যনাও জড়িত। সেই কারণে আমার এটি ভালো লাগার জায়গা। আমি বাংলাদেশের ইসলামের, আলেম-ওলামার, কুরআন-সুন্নাহের একটু সেবা করার সুযোগ পাচ্ছি। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত জনগণের। প্রায় ১৭০০ মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দ, সেখানের শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং যারা তাদের অভিভাবক, প্রতিষ্ঠানটি তাদের। আমি শুধু তাদের পক্ষে একজন খাদেম তথা খেদমতকার। আর এই সুযোগটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দিয়েছেন। এটি শুধু আমার চাকরি নয়, বরং এটি দ্বিনের সেবাও। আমি চাই যে, যত ধরনের ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার আছে, সেই অপপ্রচারগুলো দূর করে প্রকৃত শান্তির যে ইসলাম, রাসূল (সা:) এর শান্তির যে ইসলাম, মানবতার ইসলাম, সেই ইসলাম যাতে চর্চা হয় এবং তাতে সুন্দর জাতির নৈতিক ও আধ্যাত্মিকতায় অবদান রাখে সেটি নিয়ে আমরা কাজ করবো। এক্ষেত্রে সেই অবদান রাখার কারণে পৃথিবীতে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনন্য ভূমিকায় রয়েছে। আমি মনে করি পৃথিবীবাসী একদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়কেও আল আজহারের মতোই স্মরণ করবে, যদি আমাদের কাজগুলো সুন্দর হয় এবং ধারাবাহিকতা থাকে। তখন মানুষ দেখবে এটি আসলেই প্রকৃত শান্তির ও মানবতার ইসলামের জন্য সেবা করেছে। একইসাথে মাদ্রাসা শিক্ষার মান উন্নয়ন দরকার এবং পাশাপাশি বৈশ্বিক বিবেচনায় মাদ্রাসা শিক্ষাকে বিশ্ব সেবার জন্য প্রস্তুত করা প্রয়োজন। এই চ্যালেঞ্জগুলো সামনে নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য আমাদের যারা স্টেক হোল্ডার রয়েছেন তারাসহ পুরো জাতির-ই আমাদের সমর্থন, সহযোগিতা, পরামর্শ খুবই কাজে লাগবে। একইসাথে আমরা বলতে চাই গণমাধ্যমও জাতির চক্ষু খুলে দেয়। অতএব, আমাদের কোন জায়গায় ভুল হচ্ছে, কোন জায়গায় আরেকটু ভালো করার চেষ্টা করা যায়, আর যে ভালোটা আমরা করেছি সেটা গণমানুষ জানলে তাদের মনে একটি আস্থা তৈরি হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। এই বিষয়গুলো প্রচার মাধ্যমের দ্বারাই সম্ভব। কাজেই এখানে আমার দায়িত্ব পাওয়ার অনুভূতি মূলত আধ্যাত্মিক অনুভূতি এবং পাশাপাশি জাগতিক কর্মের এক স্পৃহা।


বিবার্তা: ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস যদি একটু বলতেন--


ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ: ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শত বছরের আলেম সমাজের যে চাহিদা, সেটিকে ধারণ করে সংসদে ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আইন পাসের মাধ্যমে এটি আমাদেরকে দিয়েছেন। সেই জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা তো অবশ্যই জানাতেই হবে। শতবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের আলেম সমাজ, ওলি-আউলিয়া যারা ইসলামের খেদমত করে আসছিলেন, তাদের আক্ষেপ ছিল - মাদ্রাসা শিক্ষার উচ্চ স্তরটা নেই। এরপর অনেকে এই বিষয়ে আশ্বাস দিলেও কেউ তার বাস্তবায়ন করেননি। আমি তখন একটি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম। কাজেই আমরাও তখন আমাদের শিক্ষকদের সাথে ঢাকায় এসে মিছিল করেছি। আমাদের তখন স্লোগান ছিল, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে দাও, দিতে হবে’। এরপরেও শতবছরে আলেম সমাজের যে দাবি সেটি কেউ পূরণ করেনি। কিন্তু বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটি পূরণ করলেন। কারণ তিনি তো বঙ্গবন্ধুকন্যা। আর বঙ্গবন্ধু শেখ আউয়াল রহমাতুল্লাহি আলাইহির আল্লাহর ওলির বংশধর। বঙ্গবন্ধুকন্যা এই দাবিটি পূরণ করার জন্য যোগ্য ব্যক্তিত্ব।



এই বিষয়ে আমি যেটি বলতে চাই, সেটি হচ্ছে যে, মানুষ মারা গেলে তার সৎকর্ম বন্ধ হলেও তিনটি উপায়ে সে সৎ কর্মের সওয়াব পায়। যদি সে মানুষের উপকারে কোন কাজ করে যায় অথবা যদি কোন জ্ঞান চর্চা রেখে যায় অথবা নেক সন্তান রেখে যায়। বঙ্গবন্ধু কিন্তু একটি দেশ সৃষ্টি করে দিয়ে গেছেন। এটা এতো বড় সদকায়ে জারিয়া, যার কোন তুলনা হয় না। যে কারণে তিনি বাঙালি জাতির কাছে শুধু নয়, সমগ্র পৃথিবীর কাছে তিনি একজন অবিসংবাদিত নেতা। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা শত বছরের আলেম সমাজের দাবি পূরণ করার মাধ্যমে তিনি বড় একটি সদকায়ে জারিয়া করলেন। কারণ এই প্রতিষ্ঠানটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। এখানে চর্চা হয় কুরআন, সুন্নাহ ও প্রকৃত ইসলামের। আর এই বিষয়টি ধারণ করে তিনি এটিকে প্রতিষ্ঠা করলেন।


তবে ২০১৩ সালে এটি সংসদে পাস হলেও ২০১৫ সাল থেকে এখানে কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর আমারই স্যার ছিলেন-প্রফেসর আ ন ম রইছ উদ্দিন, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষকও ছিলেন। তিনি এই দায়িত্ব পাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। যার কারণে খুব বেশি কাজ করতে পারেননি। পরে আরও একজন উপাচার্য এখানে ছিলেন পরপর দুই মেয়াদে। তারপরে আমাকে তৃতীয় উপাচার্য হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন।এজন্য আমি তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই।


বিবার্তা: আপনি ইতোমধ্যে প্রায় ৪ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রশাসনিক শীর্ষ পদের এই দায়িত্ব পালন করাকে কতটা চ্যালেঞ্জ মনে করছেন?


ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ: দেখুন- এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন পর্যন্ত ১০ বছর হয়ে গেলেও কোন বিধি পূর্ণাঙ্গভাবে তৈরি হয়নি। যেটা অবাক করার মতো বিষয়! পরে দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি এই কাজের উদ্যোগ নিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা ইতোমধ্যে মাদ্রাসাগুলোর যে চাকরিবিধি সেটা করেছি, পরীক্ষা বিধি করেছি, গভর্নিং বডির নানা বিষয়ে কাজ করেছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়েরও চাকরি বিধি করেছি, যার কাজও শেষ পর্যায়ে। পাশাপাশি এখান থেকে যে এমপিল ও পিএইচডি করা হবে তার বিধি, এখান থেকে জার্নাল বের হবে তার বিধি, তারপরে মাদ্রাসাগুলোর এপিলিয়েশন সংক্রান্তসহ আরও কিছু বিধি আছে, সেগুলোর অধিকাংশই করে ফেলেছি। এই ভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, যে আস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন এবং মাদ্রাসা ও স্টেক হোল্ডারসহ জাতির যে ইচ্ছা, সেটি পূরণে আমরা কাজ করতে পারবো।


বিবার্তা: আপনি যে বিধিগুলোর কথা বললেন-সেগুলো কি আপনার ৪ মাসের দায়িত্ব পালনকালে করা হয়েছে নাকি এর আগে কিছু ছিল?


ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ: এগুলোর কিছু জিনিস চলমান ছিল কিন্তু কোনটা পূর্ণাঙ্গ হতে পারেনি। সামান্য কিছু ড্রাফট হয়েছিল। পরে আমরা চিন্তা করলাম কারা এগুলো করতে পারেন অর্থাৎ অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের কমিটির অন্তর্ভুক্ত করে কাজ করা হয়েছে। আর কিছু বিষয় ছিল-ই না, পরে আমরা সেগুলোও করেছি। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় শুরু হয়েছিল কিন্তু দীর্ঘদিন পর্যন্ত কেন যে হয় না, সেটা একটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এখানে বড় একটা বিষয় ইউজিসি। কারণ এই বড় সংস্থার পরামর্শে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতি পরিচালনা করি। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় থাকলেও ইউজিসি মূলত আমাদের অভিভাবক সংস্থা। তার অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি বিধানগুলো অনেকটা করেই ফেলেছি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনাতে করার প্রয়োজন ছিল। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় বারবার হোঁচট খাচ্ছে। এখন যেহেতু আমরা বিধিগুলো করতে পেরেছি, এখন এগিয়ে যাবো।



বিবার্তা: এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ধরনের আর কোন সংকট আপনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে কিনা?


ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ: এখানে বড় ধরনের যে সমস্যাটি রয়েছে, সেটি হলো জনবলের। এখানে উচ্চ পদে কোন জনবল নেই! না রেজিস্টার,না কন্ট্রোলার, না ডাইরেক্টরসহ অ্যাকাউন্টস, না মাদ্রাসা পরিদর্শক এবং সেই সাথে এদের ডেপুটি ও সহকারীরাও নেই! কিন্তু আমার আছে একঝাঁক তরুণ যারা সেকশন অফিসার পর্যায়ের। তারা দিনরাত খেটেই চলেছেন। কিন্তু তাদের পথ দেখিয়ে অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলা অর্থাৎ নেতৃত্ব দিয়ে কাজে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কিন্তু ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা রয়েছে তাদের মনে করতে হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টা তাদেরই। এখানে উপাচার্য আসে, আবার চলেও যায়। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকেই তারা রিটায়ার্ড করবেন, পেনশন পাবেন অর্থাৎ এই বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই বিষয়টি হয়তো আগের দায়িত্বশীলরা বুঝিয়ে দিতে পারেননি। এখন আলহামদুলিল্লাহ আমি দেখছি –সেকশন অফিসারসহ তরুণরা সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে শুরু করে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত আমার সাথে কাজ করে। আগে আমি যেটি শুনেছি এখানে অর্ধ কর্মদিবস ছিল। কিন্তু এখন রাত ১০ টায় একজন শিক্ষক তার ফাইলের কাজে আসলেও আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।


বিবার্তা: এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটের কথা প্রায়শই শোনা যায়। এটা দূরীকরণে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা?


ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ: আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটের মধ্যে একটা কিন্তু সেশনজট। করোনার কারণে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে রিকভারি প্ল্যানের মাধ্যমে সেশনজট দূরীকরণে কাজ করা হয়েছে। আমার চোখের সামনে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিকভারি প্ল্যান করেছি। কিন্তু এখানে এগুলো করা হয় নাই। ফলে এখানে প্রায় ৪ বছরের সেশনজট রয়েছে। তবে এরপরেও আমরা ২০২১ সালের পরীক্ষা শেষ করে ফেলেছি। এখন ২০২২ ও ২০২৩ সালের পরীক্ষাটা যদি ২০২৪ সালের মধ্যে নিতে পারি, তাহলে আমাদের সেশনজট চলে যাবে।


এক্ষেত্রে একটা পরীক্ষা আমরা সফলতার সাথে নিতে পারলেও আরও কিছু পরীক্ষা এখনো বাকী রয়েছে। আশা করি ২০২২ ও ২০২৩ সালেরটাও পারবো। কিন্তু অসুবিধাটা ঐখানে! আমাদের সহযোগিতা করার জন্য যে ডেপুটিদের প্রয়োজন, সেটা নাই। কিন্তু এরই মধ্যে আমরা লিয়েনে একজন রেজিস্টার নিয়ে এসেছি এবং একইসাথে চুক্তিভুক্তিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কন্ট্রোলারকে নিয়ে আসা হয়েছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি ডাইরেক্টরস অব অ্যাকাউন্টসকে নিয়ে আসছি। কিন্তু এই পদগুলোতে যারা আসেন তারা তো এক বছরের জন্য আসেন। এখানে যদি আমরা স্থায়ী নিয়োগ দিতে পারি, তাহলে তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে মন থেকে ধারণ করবেন ভালোভাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এখানে যারা আছেন তাদের পার্সোনাল ফাইলগুলো কার কাছে থাকে? কার কাছে সংরক্ষিত হয়? কাজেই এখানের পদগুলো স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত না হলে হয়তো এই ফাইলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসগুলো হারিয়েও যেতে পারে। কাজেই এই কাজটি যদি হয়ে যায় তাহলে আমরা আরো এগিয়ে যেতে পারবো।



তবে আশার বিষয় -এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মযজ্ঞ নিয়ে এখানকার তরুণদের ধারণা গত ৪ মাসে আমরা দুই বছরের কাজ করে ফেলেছি। তারা এখনো কাজ করতে আগ্রহী। তাদের ভাষ্য- যেখানে যা লাগে তারা তা করবেন। কিন্তু সার্বিক কাজ করার জন্য ইউজিসির সাথেও আমাদের কথা হয়েছে। সরকারসহ সব সংস্থাই আমাদের সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু কিছু কিছু টেকনিক্যাল কারণে আমরা এটা পেরে উঠতে পারি নাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগকে কেন্দ্র করে বদনাম হয়েছে। সেই কারণে এখানে তদন্ত হয়েছে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির। তারা তদন্তের রিপোর্টও দিয়েছেন, আর সেই আলোকে ব্যবস্থাও নিতে বলেছেন। এটি সিন্ডিকেট তোলা হবে, এরপর উনারা যা করেন।


আরেকটা কথা বলি, সেটি হচ্ছে- আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কতটা ভালোবাসেন তার একটা উদাহরণ হলো- তিনি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়ার পরে সাথে সাথে ২০ একর জমিও দিলেন। শুধু তাই নয়, সেই জমির কাজ যাতে দ্রুত হয় সেজন্য তিনি বিশেষ প্রকল্প হিসেবে এটার নাম দিলেন। এরপর দেয়ালের নির্মাণ শুরু হয়েছে, আমরা একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান করেছি। গত ৪ মাসে আমরা বেশকিছু কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আর এটা সম্ভব হলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন সেটার কিছুটা করতে পেরেছি।


আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ভাইস চ্যান্সেলর শুধু আমার কাছে একটা পদের নাম। কিন্তু আমি আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত বাংলাদেশের মাদ্রাসাসমূহের একজন খাদেম তথা সেবক হিসেবে নিজেকে মনে করি। আর সেভাবেই আমি কাজ করবার জন্য আমি চেষ্টা করছি।


বিবার্তা: ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?


ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ: বাংলাদেশে বেশকিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, একইসাথে আমাদের গর্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পৃথিবীতে মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় বানালেও আমাদের ঢাবি কিন্তু জাতি তৈরি করেছে। আমার আস্থা ও বিশ্বাস ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে এটাই- যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সাংঘর্ষিক না! আমার স্বপ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে অসংখ্য কওমি মাদ্রাসা রয়েছে, ওই মাদ্রাসাগুলো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসুক। আল হাইআতুল উলয়া নামে তাদের একটি আছে, এটার মাধ্যমেও করা যেতে পারে। আমি চাচ্ছি বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করতে। আর এটির মাধ্যমে মানুষ যাতে স্মরণ করে বলে, বাংলাদেশের ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গাটি দখল করেছে। এটাই আমার স্বপ্ন। ক্যামব্রিজ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও ইসলামিক ইনস্টিটিউট রয়েছে। আমরাও বিশ্ব মানবকে দেখাতে চাই- ইসলাম শান্তির ও মানবতার ধর্ম। আর সেই ধর্ম শিক্ষা ও নৈতিক মানুষ তৈরি করবার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য উদাহরণ প্রতিষ্ঠার দ্বারা বাঙালি জাতির মানসকে গঠন করে পৃথিবীবাসীর সামনে এক অসাধারণ, অদম্য ও অজেয় জাতি হিসেবে সৃষ্টির পেছনে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। এটাই হচ্ছে আমার স্বপ্ন।


বিবার্তা: বিবার্তাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ: আপনাকেও ধন্যবাদ। বিবার্তার জন্য শুভকামনা রইলো।


বিবার্তা/রাসেল/এসবি/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com