সাক্ষাতকার
সেপ্টেম্বরে সরকারকে সরতে হবে : সাইফুল হক
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৩, ২১:৪০
সেপ্টেম্বরে সরকারকে সরতে হবে : সাইফুল হক
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

সাইফুল হক। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত বিএনপির সাথে আন্দোলনে অন্যতম জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা তিনি। ১৯৬৭ সাল থেকে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে যাওয়ার যাত্রা এ রাজনৈতিকের। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের ঢেউয়ে রাজনীতিতে নিজেকে যুক্ত করেন শক্তভাবে। ১৯৭০ সালে খুলনা ল্যাবরেটরি স্কুলে পড়া অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) সাথে যুক্ত হন। তখন থেকেই রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় দীর্ঘ ভাণ্ডার। এখন দেশের অন্যতম একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট নিয়ে বিবার্তার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।


বলেছেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমানের নেতৃত্বের কথা। এই জোট ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়াই প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেপ্টেম্বরের আন্দোলনে সরকার সরে যেতে বাধ্য হবেন বলেও মনে করছেন তিনি।


জোটের নেতৃত্ব কে দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে কে হবে প্রধান নেতা, মূল আন্দোলন কবে থেকে শুরু হচ্ছে, আন্দোলন সংঘাতের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা, আন্দোলন এক মঞ্চে না হয় ভিন্ন মঞ্চে কেন, জামাতের আন্দোলন প্রয়োজন রয়েছে কিনা?। এছাড়া নানা দিক নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক মোহাম্মদ ইলিয়াস। সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে দেয়া হলো।


বিবার্তা: শুরুতেই জানতে চাই আপনার সাথে বরেণ্য রাজনৈতিকদের সখ্যতা কেমন ছিল?


সাইফুল হক: ১৯৭০ সালে খুলনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। জীবনে ওনার সঙ্গে আমার দুইবার সাক্ষাৎ হয়ছে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, বিচারপতি সাহাবউদ্দীন আহমেদসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতৃবৃন্দের সাথেই আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।


বিবার্তা: হঠাৎ জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা বোধ কেন?


সাইফুল হক: শুধু রাজনৈতিক দল নয়। দেশের সব মানুষই এখন একজোট। সবাই বলছে সরকারকে সরে যেতে হবে। একটি গ্রহণযোগ্য ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশের মানুষ আর এই সরকারের অধীনে নির্বাচন দেখতে চায় না। কারণ বর্তমান দেশের গণতন্ত্রের যে বিপর্যয়, নাগরিকের অধিকার যে বিপর্যয়, অর্থনৈতিক যে সংকট বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের যে দুর্বল অবস্থান তৈরি হয়েছে- এ থেকে মুক্তির জন্য দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আবশ্যক। এজন্য বর্তমান সরকারকে হঠাতে আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য গণতন্ত্র মঞ্চ তৈরি করেছি। সেই মঞ্চ নিয়েই বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছি।


বিবার্তা: আপনাদের যুগপৎ আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে কে আছেন?


সাইফুল হক: এই আন্দোলনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্বে রয়েছেন। তিনিই যুগপৎ আন্দোলনের প্রধান নেতা। তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন।


বিবার্তা: ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে কে হবে প্রধান নেতা?


সাইফুল হক: ভবিষ্যতে যদি এই আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া হয় তাহলে প্রধান নেতা হিসেবে থাকবেন বেগম খালেদা জিয়া, এখন তার অবর্তমানে তারেক রহমান রয়েছেন।


বিবার্তা: ঘোষিত কর্মসূচি সম্পর্কে আপনারা পূর্ব থেকে অবহিত কিনা?


সাইফুল হক: ঘোষিত যে কর্মসূচিগুলো আসে সেগুলো আমাদের ফোরামে আলাপ আলোচনা পর্যালোচনা হয়ে থাকে। তবে বৃহৎ দল হিসেবে যেহেতু বিএনপি রয়েছে, কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করে। এটাকে আমি স্বাভাবিক মনে করছি; কারণ বর্তমান সময়ে অনেক গোপনীয় বিষয়গুলো আগে ফাঁস হয়ে যায়- এজন্য পূর্ব থেকে যে বিষয়গুলো আলোচনা-পর্যালোচনা হয় সেগুলোর ভিত্তিতে কর্মসূচি আসে।


বিবার্তা: ২৯ জুলাই ঢাকায় অবস্থায় কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন?


সাইফুল হক: ২৯ তারিখে (জুলাই) যে কর্মসূচি আসে সেটি আমাদের ফোরামে পূর্বে আলোচনা হয়েছিল। তবে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের প্রস্তুতি মতো আন্দোলন করলে সেটির ফলাফল ভালো পাওয়া যেত। অল্প সময়ের মধ্যে ওইদিন আন্দোলন হওয়ায় লোকজন কিছু কম ছিল বলে পর্যালোচনায় এসেছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এ ঘাটতিগুলো পূরণ হয়ে যাবে। সবশেষ বলব যে কর্মসূচিগুলো ঘোষণা হচ্ছে, সেগুলো আমাদের পর্যালোচনার আলোকে ঘোষিত হচ্ছে। এ বিষয়ের আমাদের কোন দ্বিমত নেই।


বিবার্তা: মূল আন্দোলন কবে থেকে শুরু হচ্ছে?


সাইফুল হক: আমরা সেপ্টেম্বরকে টার্গেট করে আন্দোলনের রোডম্যাপ সাজিয়েছি। পুরো সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আমরা মনে করছি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে এ সরকারকে সরে যেতে হবে। সেপ্টেম্বরের পর সরকারের সরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে এ সরকার কিভাবে সরবে, কিভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, কিভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে। আমাদের আন্দোলনের ভিত্তিতে সরকারকে সরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই বলে মনে করছি।


বিবার্তা: আপনাদের আন্দোলন অহিংস থেকে সংঘাতের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা?


সাইফুল হক: দেখেন স্বাধীনতার পর থেকে কিংবা যুগে যুগে যত আন্দোলন হয়েছে সব আন্দোলন কিন্তু সহিংস করতে কেউ চায়নি। যারা ক্ষমতাসীন রয়েছে তারা সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা করছে। আন্দোলন সবসময় শান্তিপূর্ণ থাকবে অহিংস থাকবে, এটা বলা যায় না। সরকারের ভূমিকা ও পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে আন্দোলনের গতিবিধ পরিবর্তন হবে। সরকার যদি আন্দোলনকে সংঘাত-সহিংতার দিকের ঠেলে দেয় তাহলে আন্দোলন সংঘাতের দিকেই যাবে। যদি সংঘাত তৈরি হয়ে যায় তাহলে তার পুরো দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে।


বিবার্তা: আন্দোলন এক মঞ্চে না হয়ে ভিন্ন মঞ্চে কেন?


সাইফুল হক: দেখেন এদেশে যত আন্দোলন হয়েছে- বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সবকিছুতে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছে। এবারও দেশে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এজন্য আমরা গণতান্ত্রিকামী যত রাজনৈতিক দল রয়েছি সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছি। আপাতত যুগপৎ সিদ্ধান্তে আমরা পৃথক ব্যানারে আন্দোলন করছি। যদি প্রয়োজন হয়, পরিস্থিতির আলোকে একমঞ্চে হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।


বিবার্তা: জামাতের আন্দোলনে প্রয়োজন রয়েছে কিনা?


সাইফুল হক: দেখেন একটা ঘরে যখন আগুন লাগে তখন নর্দমার পানিও প্রয়োজন হয়। আগুন নেভানোর জন্য সেটা স্বচ্ছ নাকি নর্দমার পানি- সেটা দেখার বিষয় নয়। আর ওই পানি কিন্তু কেউ খায় না। বর্তমানে একটা অগণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। তাদেরকে সরাতে সবারই আন্দোলন রাজপথের ভূমিকা প্রয়োজন। আপনি দেখেন সরকার জামায়াত ইসলামের নিবন্ধন বাতিল করেনি কিংবা তাদেরকে নিষিদ্ধ করেনি। যতদিন তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ না হবে, ততদিন তাদের রাজনীতি ও আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে।


বিবার্তা: রাজনীতিতে আপনার ত্যাগের স্মৃতি জানতে চাই?


সাইফুল হক: থানা-হাজত মিলে বার চারেক কারাগারে গেছি। তবে প্রতিবারই তাড়াতাড়ি ছাড়া পেয়েছি। ২০১১ এর ৩ জুলাই জাতীয় সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা হরতালে ভোর ৬.১৫ মিনিটে পরিবারের তিন সদস্যসহ (বহ্নিশিখা জামালী, কন্যা অদিতি) পার্টির ২২ জন পুরানা পল্টন মোড় থেকে গ্রেফতার হয়েছিলাম। আমাদের পল্টন মডেল থানায় রাখা হয়েছিল। রাত ১২টার পর মুক্তি পাই। বেলা ১১টার মধ্যে আরো অনেককে গ্রেফতার করে এই থানায় নিয়ে আসা হয়। সবমিলে আমরা ছিলাম ৫২ জন। পুরোদিন থানা হাজতে বক্তৃতা আর আলোচনায় কেটে গেল। কষ্টের মধ্যে এটা ছিল আনন্দের। ছোট ভাই তখন ঢাকার জেলা প্রশাসক। দফায় দফায় সে তার অফিসার পাঠাচ্ছে আমাদের কন্যাকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য। কিন্তু পুলিশের লাঠিতে কিছুটা আহত অদিতি একা মুক্ত হতে রাজী হয়নি। তার এই মনোভাব আমাদেরকে মুগ্ধ করেছিল।


বিবার্তা: রাজনৈতিক জীবনের কোন ঘটনা আজও নাড়া দেয়?


সাইফুল হক: ১৯৭৬ সালে মাও সেতুং এর মৃত্যুর পর ১৯৯০ তে এরশাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে ডা. শামসুল আলম খান মিলন নিহত হলে এবং ২০১৮ তে আমার বন্ধু ও সহকর্মী কাজী সালাউদ্দিন মুকুল আকস্মিকভাবে মারা গেলে আক্ষরিকভাবেই আমি কেঁদেছিলাম। আবেগ সামাল দিতে পারিনি।


বিবার্তা: দীর্ঘ সময়ের রাজনীতির অভিজ্ঞতায় চলমান পরিস্থিতিতে কী ফলাফল আসবে মনে করছেন?


সাইফুল হক: দেখুন বাংলাদেশটা একটা মিরাকেল, কখন কী হয় বলা যায় না। তবে এ দেশের মানুষ যখনি জেগে উঠেছে তখনই পরিবর্তন এসেছে। এবারও মনে করছি একটা পরিবর্তন আসবে। নতুন একটি সরকার গঠন হবে। দেশটা আবার নতুন করে সংস্কার হবে।


বিবার্তা : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


সাইফুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।


বিবার্তা/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com