ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশের ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ ঘোষণার ক্ষেত্রে জাফরুল্লাহ চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বহুমাত্রিক এই ব্যক্তিত্ব গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সর্বদলীয় সরকার, বৃহত্তর ঐক্যে এবং ইভিএমে ভোটসহ নানা বিষয়ে বিবার্তা২৪ডটনেটের সঙ্গে কথা বলেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তা প্রতিবেদক কিরণ শেখ।
বিবার্তা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে কি দেশে কোন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে?
জাফরুল্লাহ চৌধুরী: দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। তবে এটা পরিষ্কার যে, একটা দলীয় সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। আর সুষ্ঠু নির্বাচন যদি না হয় তাহলে আমাদের দেশেও শ্রীলংকা মতো অগ্নি স্ফুলিঙ্গ ঘটতে পারে। এজন্য সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচনের ফলে সুশাসন হবে। আর দেশের অবস্থা ভালো না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, তেল নেই এবং বেকারত্ব বেড়ে গেছে। এসব দেখে আমার মনে হয়, এখানে একটা সর্বদলীয় সরকার দরকার। তারপরে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই নির্বাচনে যে জিতে সে জিতবে।
বিবার্তা: আপনি সর্বদলীয় সরকারের কথা বলছেন, এই সরকার গঠন হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে?
জাফরুল্লাহ চৌধুরী: আমরা তো দুইটা নির্বাচন দেখেছি। একটা বিনা ভোটের নির্বাচন। আরেকটা দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এভাবে তো সুশাসন চলতে পারে না। এজন্য এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
বিবার্তা: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করেও নির্বাচনে সফলতা পায়নি বিএনপি। দলটি এবার বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছে, এই ঐক্যে কি তারা সফল হবে- আপনার মতামত কি?
জাফরুল্লাহ চৌধুরী: আজকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এটা হবে না। বিএনপি একলা কিছু করতে পারবে না। ছোট দলগুলো একলা, তারাও পারবে না। তাই সবাই মিলিতভাবে একটা চেষ্টা করা দরকার।
বিবার্তা: আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি একদফা আন্দোলনের কথা বলছে, তাদের এই কর্মসূচিকে কতটা যথার্থ বলে আপনি মনে করেন?
জাফরুল্লাহ চৌধুরী: কল্যাণকর রাষ্ট্র করার জন্য তাদেরকে আরো পরিচ্ছন্ন চিন্তা আনতে হবে। তারা বলছেন, নির্বাচিত হওয়ার পরে সর্বদলীয় সরকার করবে। তারা যদি নির্বাচিতই হয় তাহলে তার দায়িত্ব কেনো আমার ঘাড়ে দেবে? তারাই তো চালাতে পারবে। তবে তারা কিছুটা সরে এসেছে বলে আমার মনে হয়।
বিবার্তা: বিএনপির বাইরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হকদের নিয়ে আপনি আলাদা একটি মঞ্চ করতে চাচ্ছেন বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে, এটা কতটুকু সত্য?
জাফরুল্লাহ চৌধুরী: গণতান্ত্রিক মঞ্চ করার আমরা চেষ্টা করছি। কল্যাণকর রাষ্ট্র করার জন্য আন্দোলনসহ যা যা করা দরকার সেটা জনগণকে বোঝাতে এটা করা হচ্ছে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, সুশাসন চাই এবং কল্যাণকর বাংলাদেশ চাই। যেজন্য আমাদের একটা চেষ্টা আছে। তবে এটা আমরা একলা পারবো না।
বিবার্তা: গণতান্ত্রিক মঞ্চ কবে আত্মপ্রকাশ পাবে?
জাফরুল্লাহ চৌধুরী: আগামী মাস থেকেই গণতান্ত্রিক মঞ্চ আত্মপ্রকাশ পাবে।
বিবার্তা: গণতান্ত্রিক মঞ্চে কি বিএনপি থাকবে?
জাফরুল্লাহ চৌধুরী: বিএনপি আসতে চাইলে আসবে। আমাদের কোন আপত্তি নেই।
বিবার্তা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব আসনেই সরকার ইভিএমে ভোট করার কথা বলছে, এই পদ্ধতিতে ভোট কি রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে- আপনার মতামত কি?
জাফরুল্লাহ চৌধুরী: ইভিএমে ভোট হলো কারচুপির ভোট। আমার মনে হয়, এসব চালাকি করে কোন লাভ হবে না। এটা করা উচিতও না। কিন্তু কারচুপিতে তারা ( আওয়ামী লীগ) হ্যাটট্রিক করতে চায়। এটা ভুল কাজ। তাদেরকে শ্রীলংকা থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত।
বিবার্তা: আগামীর বাংলাদেশকে আপনি কিভাবে দেখতে চান?
জাফরুল্লাহ চৌধুরী: এখানে যদি আমাদের সুপারিশ ও কথা মতে আলাপ-আলোচনা করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে জনগণ তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাবে। এর ফলে সুশাসন হবে এবং কল্যাণকর বাংলাদেশ হবে। এই বাংলাদেশকেই সামনে দেখতে চাই।
(সাক্ষাৎকারটি পুনঃপ্রকাশিত)
বিবার্তা/কিরণ/এসএ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]