সাক্ষাতকার
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সারথি হবে ছাত্রলীগ: ইনান
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৭
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সারথি হবে ছাত্রলীগ: ইনান
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান- সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ । ২০ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষিত ছাত্রলীগের কমিটিতে তিনি এই দায়িত্ব পান। ইনান ছাত্রলীগের বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করেন এই ছাত্রনেতা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে ছাত্ররাজনীতি শুরু করলেও ২০১৩ সালে বিজয় ৭১ হল প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সেখানে স্থানান্তর হন। পরে ওই হলে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠানকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইনান। ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে ইনান ক্যাম্পাসে ক্লিন ইমেজের ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।



শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের জন্ম বরিশাল শহরের জর্ডন রোডে। বাবা শেখ আবদুর রব বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন। মায়ের নাম হাসিনা বেগম। ইনান বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।



ছাত্রলীগের নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সংগঠন নিয়ে তার স্বপ্ন ও ভাবনার কথা বলতে সম্প্রতি বিবার্তা২৪ডটনেটের মুখোমুখি হয়েছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তা প্রতিবেদক মহিউদ্দিন রাসেল।


বিবার্তা: আপনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। অনুভূতি জানতে চাই?


ইনান: দেখুন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ সাংগঠনিক অভিভাবক মাননীয় প্রধামন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমার উপর আস্থা রেখেছেন, এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ। আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবেও নিজেকে গর্বিত মনে করতাম। কারণ, আমার পরিবার আওয়ামী রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।



ফলে পরিবারের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন সম্পর্কে জেনেছি, শিখেছি- সংগঠনকে ভালোবেসেছি। অনুভূতির কথা যদি বলি, অনুভূতি অবশ্যই ভালো। তবে এটা দায়িত্ব পালনের বিষয়। আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা চাই।



বিবার্তা: দায়িত্ব পাওয়ার ১১ দিনের মাথায় বছরের শুরুর দিনই বর্ধিত সভা করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা যদি বলতেন?


ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের পর আমাদের সর্বোচ্চ অভিভাবক বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা গত ২০ ডিসেম্বর আমাদেরকে দায়িত্ব দেন। এরপর থেকে আমরা সংগঠনের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছি। দায়িত্ব পাওয়ার ১১তম দিনে আমরা ১১ ঘণ্টা বর্ধিত সভা করেছি। সারাদেশের সকল জেলা, বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগরের নেতাকর্মীরা সভায় উপস্থিত ছিল। আমরা তাদের মতামত নিয়েছি। আমাদের চেষ্টা ছিল তৃণমূলের নেতাদের চিন্তাচেতনা-মানসিকতা কী, সেটি জানার। একইসাথে মফস্বলের ছেলেটি স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে কী ভাবছে, ওই বিষয়েও আমরা জানতে চেয়েছি। এজন্য বছরের প্রথমদিন আমরা বর্ধিত সভার মাধ্যমে শুরু করেছি। তাদের চিন্তাচেতনার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার সম্মিলন ঘটিয়ে স্মার্ট কিছু রূপরেখা অচিরেই প্রণয়ন করব।


বিবার্তা:  ছাত্রলীগকে সামনের দিনে কিভাবে পরিচালিত করতে চান?


ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এদেশের শিক্ষার্থীদের আশা ভরসার শেষ ঠিকানা। ছাত্রলীগ সৃষ্টির শুরু থেকে তার কর্মচাঞ্চল্যতার মাধ্যমে, নানা পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এই দেশের শিক্ষার্থীদের নির্ভরতার ও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। কাজেই আমরা অতীতের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ধারা বজায় রেখে বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাব।



বিবার্তা: আপনারা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবেন। সেক্ষেত্রে কোন যোগ্যতা দেখে কমিটিতে পদায়ন করা হবে?


ইনান: দেখুন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি ধারাবাহিক সংগঠন। যারা দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে সংগঠনের জন্য শ্রম, মেধা বিলিয়ে যাচ্ছে, যে কোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে সদা তৎপর ছিল। যাদের সৃজনশীলতা, মেধা-মননের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি সুন্দর, আধুনিক, উন্নত, স্বনির্ভর, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে- তেমন নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের চিন্তা করছি। সর্বোপরি, বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা থাকবে, সেই অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করব।


বিবার্তা: ছাত্রলীগের বিগত কমিটির অনেক কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। ছাত্রলীগকে বিতর্কমুক্ত রাখতে আপনারা কী ধরণের পদক্ষেপ নিবেন?


ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি বৃহৎ সংগঠন। এতো বড় ছাত্র সংগঠনের বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার কারণে গণমাধ্যমে নেগেটিভ শিরোনামের শিকার হতে হয়েছে। এটি আসলেই অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে যেন নেতাকর্মীরা সবসময় সাংগঠনিক বিধি-নিষেধ, গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা অর্থাৎ শৃঙ্খলার যে নিয়ম আমরা অনুসরণ করি, সেটির মধ্যে আবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে কখনও কোনো অন্যায়, অপরাজনীতি চর্চাকে প্রশ্রয় দেয় না। এটি কখনোই আমরা দেইনি, এখনো দিচ্ছি না আর ভবিষ্যতেও দেবো না।



আমরা আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে বার্তা দিতে চাই- এই সংগঠনে অপরাধীদের স্থান নেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি আদর্শিক সংগঠন। জাতির পিতার নিজ হাতে গড়া সংগঠন। বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভিশন-মিশন বাস্তবায়নের সংগঠন। কাজেই এই সংগঠনে কোনোভাবেই অপরাধীর স্থান হবে না। এই সংগঠনে অপরাধ করে পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ  ছাত্রলীগ বদ্ধপরিকর যেকোনো অপরাধের বিরুদ্ধে যথাযথ সাংগঠনিক, শৃঙ্খলামূলক গঠনতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।



বিবার্তা: স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে ছাত্রলীগ কী ভাবছে?


ইনান: স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আধুনিক, উন্নত, স্বনির্ভর, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা- সেই অগ্রযাত্রার আরেকটি ধাপ হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এই স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার চারটি ভিত্তি নির্ধারণ করেছেন। এগুলো হলো- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি।



বিবার্তা: স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে স্মার্ট ছাত্রলীগ প্রয়োজন। ছাত্রলীগকে স্মার্ট করতে আপনারা কী ধরণের পদক্ষেপ নিবেন?


ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে স্মার্ট করার জন্য বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে এমন স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যে স্বপ্নে সারা বাংলার সাধারণ শিক্ষার্থী, তরুণ সমাজ অর্থাৎ ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া, মোহনীয় আবেশ বিরাজ করছে। এই দেশের ছাত্রসমাজ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে দেশরত্ন শেখ হাসিনা যা বলেন, তা বাস্তবায়ন করেন। তিনি দিন বদলের সনদ দিয়েছিলেন, তা আজ বাস্তব। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা দৃশ্যমান। তাঁর লক্ষ্য এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। আর এই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁর যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন জয়ে অন্যতম সারথি হবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরা সারাদেশের নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা করে সেই মোতাবেক কাজ করব।



আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি স্মার্ট সংগঠন হিসেবে নিশ্চয়ই কার্যকর, দৃঢ় ও জোরালো ভূমিকা পালন করবে। আমাদের বিজ্ঞান মনষ্কতা, আধুনিকতা, নতু্ত্বের ছোঁয়ায় সংগঠনকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শেখ হাসিনার সার্বিক নির্দেশনায় কাজ করব।



বিবার্তা: ২০২৩ সাল রাজনীতির মাঠে খুবই চ্যালেঞ্জের বছর। এই বছর ছাত্রলীগের মাঠে কাজ করার পরিকল্পনা কী?


ইনান: ছাত্রলীগ এমন একটি সংগঠন যেটি আইয়ুব খানের মতো স্বৈরশাসককে মুখের উপর ‘না’ বলেছিল। এটি আপসহীন একটি সংগঠন। এই সংগঠন সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অবধি কোনদিনই কোনো চ্যালেঞ্জকে ভয় পায়নি, পিছপা হয়নি। এই সংগঠন আদর্শে অবিচল থেকে দেশরত্ন শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃণ রাখার জন্য সবসময় যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত ছিল, প্রস্তুত আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে। এই দেশে যেকোনো অপশক্তি, অপতৎপরতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার নীতি-নির্দেশনা নিয়ে সফল ছিল, সফল আছে আর সফল থাকবে।


বিবার্তা: যারা ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের অ্যাকশন কেমন হবে?


ইনান: ক্যাম্পাসগুলোতে যেকোন অপশক্তি, অপতৎপরতাকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর অশুভ শক্তিকে রুখতে আমরা বদ্ধপরিকর।  সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এক চুলও ছাড় দিবে না।


বিবার্তা: সারাদেশে ছাত্রলীগের অর্ধকোটি নেতাকর্মী রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যে কোনো বার্তা দিতে চান কি-না?


ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আর আমাদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাদ্দাম হোসেন। আমরা সারা বাংলাদেশের তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার জীবনাদর্শকে অনুসরণ করুন, জাতির পিতার জীবন থেকে শিক্ষা নিন।



আপনারা সুশৃঙ্খল,গঠনতান্ত্রিকভাবে সংগঠন পরিচালনার জন্য শপথ নিন এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে নৌকা মার্কাকে নিরঙ্কুশ বিজয়ী করার জন্য আপনারা এখন থেকে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করুন।



বিবার্তা: বিবার্তাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


ইনান : আপনাকেও ধন্যবাদ। বিবার্তার জন্য শুভকামনা।


বিবার্তা/ রাসেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com