সাক্ষাতকার
‘আওয়ামী লীগের সদস্য থাকাটাই সৌভাগ্যের ব্যাপার’
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:৪২
‘আওয়ামী লীগের সদস্য থাকাটাই সৌভাগ্যের ব্যাপার’
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নতুন মুখ হিসেবে জায়গা পেয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুজিত রায় নন্দী। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সুজিত রায় ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি চাঁদপুর সদরের ৯নং বালিয়া ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম কাসিশ্বর রায় নন্দী ও মা হিরণ প্রভা রায় নন্দী।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করা সুজিত রায় নন্দী বিগত পাঁচ মেয়াদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিভিন্ন পদ অলঙ্কিত করে চলেছেন। ২০০৩ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপ কমিটির সহ-সম্পাদক, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে পুনরায় আবার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৬ সালে দলের ২০তম সম্মেলনে সুজিত রায় নন্দীকে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি পুনরায় এই পদে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ দলটির ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে তিনি দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। এরপর তাকে বিভাগভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টনে রংপুর বিভাগীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়া হয়।


সম্প্রতি নির্বাচনী বছর ঘিরে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা, দলে অনুপ্রবেশকারী দৌরাত্ম রোধসহ দেশের সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে বিবার্তার সাথে কথা বলেছেন সুজিত রায় নন্দী। পাঠকদের জন্য তার চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো-


বিবার্তা: আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।


সুজিত রায় নন্দী: আমি গত পাঁচ মেয়াদে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছি। আওয়ামী লীগের সদস্য থাকাটাই সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমরা মনে করি, আমরা সবাই কর্মী। নেতা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখন আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আমরা সবাই তার সহকর্মী। সেই মনোভাব নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা, আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করা। মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অক্ষুন্ন রাখা আমাদের সকলের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।


বিবার্তা: সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আপনাদের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জের হবে?


সুজিত রায় নন্দী: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেক চ্যালেঞ্জই আমাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতিকে যারা নস্যাৎ করতে চায় সেই শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সদা সর্বদা সর্তক থাকতে হবে। যারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করে তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করা, স্তব্ধ করে দেয়া। দেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে এই ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের সবাইকে এক এবং অভিন্ন থাকতে হবে।


এক্ষেত্রে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা এবং একতা বিদ্যমান থাকা উচিত। একতা না থাকলে সমস্যার তৈরি হয়। যেখানে বিশৃংখলা হয় সেই সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান কখনো সফল হতে পারে না। সুতরাং আমাদের ডিসিপ্লিন এবং ইউনিটির ওপর অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাতে নিরাপদ, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার বিকল্প কেবল শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা না থাকলে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান, সিরিয়ার মতো ভাগ্য বরণ করতে হবে। সে কারণে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে জনগণের সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতা নিয়ে আসা। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যতদিন ঐকবদ্ধ থাকবে পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করে আমাদের অভিযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে।


বিবার্তা: দলে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে আপনাদের চিন্তা কি?


সুজিত রায় নন্দী: দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে যারা পরীক্ষিত তারা দলের পিঠে আঘাত করে না। অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে যে, অনুপ্রবেশকারীরা দলের অভ্যন্তরে ঢুকে দলের ভিতরে সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এসব শক্তির বিরুদ্ধে আমদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।


বিবার্তা: দ্রব্যমূল্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। এটা কি নির্বাচনে আপনাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে?


সুজিত রায় নন্দী: বিশ্বের উন্নত দেশের্ তুলনায় বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে। আমি মনে করি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে শেখ হাসিনার যে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা রয়েছে পৃথিবীর দ্বিতীয় কারো আছে কি-না আমার জানা নেই। করোনা মহামারিতে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো হিমশিম খেয়েছে কিন্তু আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা শেখ হাসিনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে করোনা মহামারি সহনশীল পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। লকডাউনে একটি লোকও না খেয়ে মারা যায়নি। এটা সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা। উন্নত দেশগুলো পৃথিবীর কোথাও বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয়নি কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিনা পয়সায় দিয়েছে। পৃথিবীর বুকে এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত।


বিবার্তা: রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা কি দুর্বল?


সুজিত রায় নন্দী: রংপুরে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। সেখানে যেহেতু মহাজোটগতভাবে পূর্বে নির্বাচন হয়েছে সেখানে দেখা গেছে মহাজোটের স্বার্থে অনেক জায়গায় ছাড় দিতে হয়েছে। সেটা একটা বিষয়। কিন্তু সাংগঠনিক অবস্থার দিক দিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের যথেষ্ট শক্ত অবস্থান রয়েছে। এখন আমাদের কাজ হল যে জায়গাগুলোতে সমস্যা, ত্রুটি আছে সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা।


আওয়ামী লীগ একটা বড় দল। ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। অনেকের মধ্যে মতের অমিল থাকতে পারে, সেটা স্বাভাবিক। যারা দলের চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেটা অব্যাহত থাকবে। আমাদের নেতা-কর্মীরা সবাই যাতে এক ও অভিন্ন থাকে সেই চেষ্টা করব।



বিবার্তা: নির্বাচনী বছর ঘিরে আপনাদের কর্মপরিকল্পনা কি?


সুজিত রায় নন্দী: আমাদের কর্মপরিকল্পনা হলো দলকে সুসংগঠিত রাখা। দেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে সেটাকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এটাকে মানুষের কাছে তুলে ধরা।


বিবার্তা: বিএনপি নির্বাচন সামনে রেখে জোট বড় করেছে। আপনারা কি ভাবছেন?


সুজিত রায় নন্দী: বিএনপির ৫৪ দলীয় জোট অন্তঃসারশূন্য। আমাদের ১৪ দলের জোট আছে। এটি আমাদের আদর্শিক জোট। জোটে দল বাড়বে কি-না সময়ই বলে দিবে।


বিবার্তা: জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি?


সুজিত রায় নন্দী: আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ নীতি ও আদর্শের বাইরে কখনোই চিন্তা করে না। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ব্যাপারে বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিষয়ে আমাদের অবস্থান সবসময়ই সুদৃঢ়। আওয়ামী লীগ সব সময় সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার। জামায়াতের ব্যাপারে আদালত যেটা সিদ্ধান্ত নিবে সেটেই হবে, এটা আদালতের এখতিয়ার। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস এসব ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সবসময় কঠিন এবং আমরা সে ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।


বিবার্তা: বিএনপি সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলন করছে। দলটির নেতারা বলছেন বর্তমান সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। আপনার অভিমত কি?


সুজিত রায় নন্দী: রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে আসার অধিকার আছে, না আসার অধিকারও আছে। আমরা আশা করব আগামী সংসদ নির্বাচন সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু হবে। পৃথিবীর সকল দেশে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সে পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। টাইম এন্ড টাইড ওয়েট ফর নান।


বিবার্তা: বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আপনি ছাত্রনেতা ছিলেন। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?


সুজিত রায় নন্দী: বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চিরতরে নিষিদ্ধ করা হয়নি। সাময়িক সমস্যার কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা অবশ্যই ভবিষ্যতে সকলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। সাময়িকভাবে পরিস্থিতির কারণে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ আছে, চিরস্থায়ী নয়।


বিবার্তা: ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?


সুজিত রায় নন্দী: ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপে স্মার্ট বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের টার্গেটে আওয়ামী লীগ জাতির সামনে স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাবো। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা যখন আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া হয়েছিল তখন অনেকেই কটাক্ষ করেছিল। যারা অপরাজনীতি, প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তারাই কটাক্ষ করেছে। তারাই পদ্মা সেতুকে নিয়ে কটাক্ষ করেছে, তারাই উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। অথচ আজ তারাই সুবিধা ভোগ করছে।


স্মার্ট বাংলাদেশ হবে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। প্রতিটি নাগরিককে তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকনোমি, স্মার্ট সোসাইটি গড়ার লক্ষ্যেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বৃহৎ স্বার্থের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।


বিবার্তা/সোহেল/জেএইচ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com