গাজায় গণহত্যা বন্ধে ইসরায়েলকে সব ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ আইসিজের
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:১৩
গাজায় গণহত্যা বন্ধে ইসরায়েলকে সব ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ আইসিজের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গণহত্যা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে দখলদার ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)।


২৬ জানুয়ারি, শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আইসিজে এই রায় দিয়েছে।


রায়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে যে তার বাহিনী গণহত্যা করবে না। ইসরায়েলকে এ বিষয়ে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


আদালত বলেছেন, গাজায় গণহত্যা প্রতিরোধে ইসরায়েলকে নিজেদের ক্ষমতার মধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইসরায়েলি বাহিনী যেন গাজায় গণহত্যা না চালায় সেটা ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে গণহত্যার যে অভিযোগ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে উঠেছে তার সব প্রমাণ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।


নৃশংস গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলায় এ রায় দেয় আইসিজে। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টায় এই রায় পড়া শুরু হয়। রায়ে মামলা বাতিলে ইসরায়েলের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।


আদালত বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের ফলে গাজায় বিপুল সংখ্যক মৃত্যু ও আহত হয়েছে।


আইসিজে’র বিচারক মণ্ডলীর সভাপতি বিচারক ডনোগু বলেছেন, এই রায় ইসরায়েলের জন্য আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে।


দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই সপ্তাহ শুনানি শেষে এই রায় দিলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।


বিচারক ডনোগু বলেছেন, আদালত নোট করেছে যে, ইসরায়েল দ্বারা পরিচালিত সামরিক অভিযানের ফলে প্রচুর সংখ্যক মৃত্যু এবং আহত হয়েছে, সেইসঙ্গে ব্যাপকভাবে বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, জনসংখ্যার বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে এবং বেসামরিক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।


ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ গণহত্যা কনভেনশনের বিধানের মধ্যে পড়ে। গণহত্যা মামলায় যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।


ডনোগু বলেন, জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে ফিলিস্তিনিরা সুরক্ষিত গোষ্ঠী। আদালত ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।


ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে হামলা বন্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা মামলার রায়ে বিচারকদের পর্যবেক্ষণে এসব বিশ্লেষণ উঠে এসেছে।


নির্বিচারে বোমা হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে এই মামলা দায়ের করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, যাতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল।


দুই সপ্তাহ শুনানি শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৬টায়) এই রায় ঘোষণা শুরু করে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।


বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে ৯টি আরজি জানিয়েছে। গাজায় সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ স্বাভাবিক রাখতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেয়ারও অনুরোধ জানায় দেশটি।


শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, আদালত যেন জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেন। গণহত্যা কনভেনশনের আওতায় ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আদালতের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ ঘোষণা করা জরুরি বলেও উল্লেখ করা হয়। এরপরই এই রায় দিলেন বিশ্ব আদালত।


আইসিজেকে বিশ্ব আদালত নামেও পরিচিত। এটি জাতিসংঘের একটি দেওয়ানি আদালত। সদস্যভুক্ত এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের বিরোধের বিচার করে এই আদালত। তবে এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে আলাদা। আইসিসি যুদ্ধাপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করে থাকে। জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েল—দুই দেশই দুই আদালতের রায় মেনে চলতে বাধ্য। তবে রায় মানার জন্য কোনো দেশের তেমন বল প্রয়োগ করতে পারেন না আইসিজে।


তবে দক্ষিণ আফ্রিকার এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করে আসছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিওর হাইয়াত এক এক্সবার্তায় বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা যে দাবি করেছে তার বাস্তব ও আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। এটি আদালতকে ঘৃণ্য ও অবমাননাকর উপায়ে শোষণের শামিল।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com