ঊর্ধ্বমুখী পণ্যের দামে হাঁসফাঁস ক্রেতা
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:২৪
ঊর্ধ্বমুখী পণ্যের দামে হাঁসফাঁস ক্রেতা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজারের লিস্ট যেন এখন এক অস্বস্তির কারণ। শাক থেকে সবজি, মাছ থেকে মুরগী, নিত্যপণ্যেও মিলছে না স্বস্তি। খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে দিশেহারা সাধারণ ক্রেতারা জানান, শিগগিরিই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রমজানে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।


শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজি, চাল-ডাল, মাছ-মাংসসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী।


প্রতি বছর শীতে সবজির দাম কম থাকলেও এবার সেই বাজারেই আগুন। তবে এবার যেন কিছুতেই হিমেল হাওয়া বইতে পারছে না সবজির বাজারে। চড়া প্রতিটি সবজির দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত।


বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মুলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ও গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


এ ছাড়া প্রতি কেজি বেগুন জাতভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পুরান আলু ৭০ টাকা, টমেটো ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০ টাকা ও পেঁয়াজের কলি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আর প্রতি পিস লাউ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, আকারভেদে ফুলকপি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও ব্রকলি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।


এদিকে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে কমেছে কাঁচা মরিচের দাম। বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়; আর পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।


এ ছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২৫ টাকা, পালংশাক ১০ টাকা ও লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা বলছেন, কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে প্রান্তিক এলাকায় নষ্ট হচ্ছে শীতের সবজি। এতে সরবরাহ সংকটে বাড়ছে দাম।


অপর দিকে অস্থির চালের বাজারে নেই কোন স্বস্তির খবর। দাম যতটা বেড়েছে, তার তুলনায় কমেছে সামান্য। খুচরা পর্যায়ে চালভেদে কেজিতে কেউ কেউ এক-দুই টাকা কম রাখলেও বেশির ভাগ বিক্রেতা আগের বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করছেন।


বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বিআর-২৮ ও পাইজাম ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, স্বর্ণা ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮ থেকে ৮৪ টাকা, চিনিগুঁড়া চাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা ও মিনিকেট ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


এছাড়া রোজার এখনও বাকি মাস দেড়েক। এর মধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে আটা-ময়দা, ডাল-ছোলা ও চিনির দাম। কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়।


ছোলার পাশাপাশি বাড়ছে অন্যান্য ডালের দামও। প্রতি কেজি অ্যাংকর ডাল ৭৫ থেকে ৮০, ডাবলির ডাল ৭৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ থেকে ১২০ টাকা, মুগডাল ১৭০ টাকা ও মসুর ডাল ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।


এদিকে বাজারে খোলা আটা ৫০ থেকে ৫২ টাকা ও প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া খোলা ময়দা ৬২ থেকে ৭০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ময়দা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


আর আমদানি শুল্ক অর্ধেক কমানোর পরও বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি। প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি তো বাজার থেকেই উধাও।


অপর দিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দেশি মাছের দাম। তবে হাতে গোনা কয়েকটি চাষের মাছের দাম কমলেও তা নাগালের বাইরে বলে দাবি ক্রেতাদের। বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, বাইম ১ হাজার টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।


বাজারে সব অস্বস্তির খবরে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে মুরগির বাজারে প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে সব ধরনের মুরগির দাম। তবে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা পর্যন্ত।


বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।


তবে বাজারে বাড়েনি খাসির মাংসের দাম। বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়।


এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে ডজন প্রতি ৫ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২১০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


কাঁচাবাজারের সঙ্গে কম যায় না মসলাও। সেই বাজারেও দেখা দিয়েছে বাড়তি দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। তবে বাজারে দেখা নেই পুরাতন দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের। দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও সেটি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৮০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আড়ত পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকায়। আর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া মানভেদে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়।


দাম বৃদ্ধির এমন কারণ হিসেবে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। প্রতিবছরই শীতে সবজির দাম কমে। তবে এবার উলটো। মূলত বাজার সিন্ডিকেটের কারণেই সব পণ্যের দাম বাড়ছে।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com