বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করেছে
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৪, ১৬:৩১
বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করেছে
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত ঐতিহাসিক ৬ দফা বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। ৬ দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী। ৬ দফাকে কেন্দ্র করেই স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ নামক দেশের সৃষ্টি হয়েছে, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


৭ জুন,শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট’ আয়োজিত ঐতিহাসিক ৬ দফা উপলক্ষ্যে ‘বাঙালির স্বাধীনতার মহাসনদ ৬ দফা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মুখ্য আলোচক ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বাঙালির ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্বে কোনো নেতার সার্বভৌমত্ব ছিল না।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুইভাবে পৃথিবীর ইতিহাসে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রথমত সার্বভৌমত্ব হচ্ছে ব্যক্তির সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব। যেটি ৭ই মার্চের ভাষণে আমরা দেখেছি। ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু অনেকগুলো দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। বাঙালি কিন্তু সেই নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন।


বঙ্গবন্ধু মুকুটহীন রাজা ছিলেন। অর্থাৎ তখন বঙ্গবন্ধু ক্ষমতাসীন ছিলেন না। কিন্তু বাঙালি তাঁর কথা পালন করেছেন। সেদিন শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবী অসাধারণ সার্বভৌমত্ব অবলোকন করেছেন। ৩৫টি দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, সবগুলো বাঙালি পালন করেছেন। ব্যক্তি সার্বভৌমত্ব সৃষ্টি হওয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে আর নেই।


ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে বাঙালিকে প্রস্তুত করেছেন। সেজন্যই ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি সমষ্টিগত সংগ্রাম এবং আন্দোলনের মাধ্যমে জাতি হয়ে ওঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতি হয়ে ওঠার সংগ্রাম এবং একইসঙ্গে আমাদেরকে মুক্তির সংগ্রামে অবতীর্ণ করে একটা জাতিরাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ইউনিক জাতিরাষ্ট্র নেই।


৬ দফার আন্দোলন ইতিহাসের এক বাঁক বদল উল্লেখ করে ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার ভেতরেই আমাদের স্বাধীনতার বীজ লুকিয়ে ছিল। ৭০ এর নির্বাচনের ম্যানডেট ছিল ৬ দফা। এই ৬দফা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে নিয়ে গেছে। ৭ই জুনের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনে নেমেছে। টুঙ্গীতে, নারায়ণগঞ্জে, ঢাকার তেজগাঁওয়ে আন্দোলন হয়েছে। সেদিন বিকালে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়েছিল সকল শ্রমিক কারখানায় কারফিউ দিতে। কীভাবে সাধারণ মানুষকে বঙ্গবন্ধু আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেছেন সেটি ছিল এক অনন্য দিক। এই ইতিহাস আমাদের জানা দরকার। ইতিহাস না জানা জাতি হচ্ছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস করা জাতি। আমরা কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা নই। এ কারণেই আমরা বুদ্ধিদীপ্ত জাতির স্বপ্ন দেখি।


মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ৬ দফার প্রণেতা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই ৬দফার মাধ্যমে মানুষকে এমনভাবে তৈরি করেছেন যারা ধাপে ধাপে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। বাঙালির ইতিহাসে এমন নেতা আর সৃষ্টি হয়নি আর হবেও না। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান রাষ্ট্রে বিশ্বাস করতেন না। তার বিশ্বাস ছিল বাঙালির জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম আর ত্যাগ স্বীকার করেছেন বঙ্গবন্ধু।


৬ দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির মহাসনদ জানিয়ে ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রণীত ৬ দফা দল থেকে জনগণের সম্পত্তিতে পরিণত হলো। বঙ্গবন্ধু বললেন, ৬ দফার দাড়ি, কমা, সেমিকোলন পরিবর্তন করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু ৬ দফা এমনভাবে প্রণয়ন করেছেন যেখানে স্বাধীনতার মূল মন্ত্র নিহিত ছিল। কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে বলা যাবে না যে পাকিস্তানকে দুইভাগ করতে চান। কিন্তু এই ৬দফা বাস্তবায়ন করতে গেলে দুইভাগ হয়ে যাবে। ৬ দফার ঐতিহাসিক কর্মসূচি ছিল বাঙালি জাতির জাতীয় মুক্তি তথা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন। অনেক বলেন ৬ দফা হলো স্বায়ত্তশাসনের কর্মসূচি। আমি এর সঙ্গে একমত নই। ৬ দফা স্বায়ত্তশাসনের কর্মসূচি ছিল না। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা তো যেকোনো সময় ঘোষণা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু মানুষকে ধাপে ধাপে গড়ে তোলে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছেন। কাজেই ৬দফা ছিল বাঙালি জাতির জাতীয় মুক্তি তথা স্বাধীনতা অর্জনের মহাসনদ।


ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ৬ দফা ছিল পাকিস্তান ভেঙ্গে বাঙালির মুক্তি এবং স্বাধীনতা অর্জনের কর্মসূচি। সেই ৬দফা অর্জনের পথ ধরেই আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বাংলাদেশ, সমাজ, মানুষ, রাষ্ট্র এবং পাকিস্তান ভেঙ্গে বাঙালির জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এর জন্য যে দার্শনিক, রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা দূরদৃষ্টি থাকতে হয় সেটা বঙ্গবন্ধুর মতো দ্বিতীয় আর কোনো নেতা এই ভূখণ্ডে জন্মায়নি। সুতরাং তিনি কোনো পণ্ডিতের কাছ থেকে ধার নিয়ে এই ৬দফা প্রণয়ন করেননি। এটা বঙ্গবন্ধুর নিজের ব্রেইন চাইল্ড। তিনি মানুষের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে ৬দফার মতো কর্মসূচি প্রণয়ন করেছেন।


সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মশিউর রহমান বলেছেন, জাতির পিতার পথ এতোটা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ৬ দফা প্রণয়নের সময়ও তার নিজ দলের বিরোধিতা ছিল। বঙ্গবন্ধু তা দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে বাঙালির জাতিসত্তার ভিত্তিতে যে জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি করলেন তার পেছনের মূল শক্তি ছিল ৬ দফা। হাজার বছরের ধারাবাহিকতায় আর কোনো রাজনীতির কবি, আর কোনো কাব্যের কবি, অন্য কোনো পন্ডিতজন কেউ এতোটা আগলে ধরে এই সংস্কৃতির প্রধান বাহনকে এতোটা সমন্বয় করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু পেরেছিলেন বলেই সাড়ে সাতকোটি বাঙালির সামনে দাঁড়িয়ে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিতে পেরেছিলেন। ৭০ এর নির্বাচনের পুরো ভিত তৈরি করেছিল ৬দফা। এই ৬দফার জাগরণটি কেন? বঙ্গবন্ধু প্রত্যেককে কেন অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছিলেন? তার পেছনের কারণ পাকিস্তান যে আমাদের শোষণ করেছে বঙ্গবন্ধু তার প্রত্যেকটি ক্ষেত্র ধরে ধরে ওই শোষণের চিত্র তুলে ধরেছেন।


ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশ্বদীক্ষা নিয়ে রাজনীতি করেছেন। তিনি শুধু বাংলাদেশ বা উপমহাদেশ-এই জায়গায় ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু একটি বিশ্বদীক্ষা লালন করতেন। সেই বিশ্বদীক্ষার মধ্যে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো, সমাজতান্ত্রিক সমাজ তথা বিশ্বব্যবস্থাকে পুরো আত্মস্থ করে কোন জায়গায় মানবমুক্তি তৈরি হবে, সেই জায়গা উদ্‌ঘাটন করেছেন। মানবমুক্তির জন্য শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই করেছেন। সেই শোষণমুক্তির জায়গাটি তিনি ৬দফায় স্পষ্ট করেছেন। সেকারণেই বাঙালি বঞ্চনাবোধকে ধারণ করে জাগ্রত হয়েছে মুজিবমন্ত্রণায়। মুজিবমন্ত্রণা আমাদের মুক্তি এবং স্বাধীনতার মোহনায় নিয়ে গেছে। সেকারণেই ৬দফা অনন্য এবং মুক্তির সনদ। সেকারণেই বিশ্বের নিষ্পেষিত মানুষের মুক্তির মহানায়ক হয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান।


আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নাসিমা বানুসহ ইনস্টিটিউটের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক প্রমুখ।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com